সৌম্য সরকার। নামের সঙ্গে মিল রেখে আচরণেও দারুণ ভদ্র, বিনয়ী তিনি। কিন্তু কাজে ভীষণ আগ্রাসী। বাংলাদেশি ওপেনারের বিরুদ্ধে যারা বোলিং করেন কেবল তারাই বোঝেন। হিসাবে একটু ভুল হলেই বল বাউন্ডারির বাইরে চলে যাবে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রোটিয়া বোলাররা তো রীতিমতো খেই হারিয়ে ফেলেছিল।
টার্গেট মাত্র ১৬২ হলেও ২৪ রানে দুই উইকেট পড়ে যাওয়ার পর কিছুটা শঙ্কাই জেগেছিল। কেননা ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের কথা কারও ভোলার কথা নয়। এই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে মাত্র ৭৮ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া প্রথম ম্যাচেও তো ১৬০ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু এ ম্যাচে কোনো সমস্যা হয়নি, কারণ সৌম্য সরকার ছিল বলেই। ৭৯ বলে অপরাজিত ৮৮ রানের স্টোক ঝলমলে এক ইনিংস। ১৩টি বাউন্ডারির সঙ্গে একটি বিশাল ছক্কা।
বাংলাদেশ দলে অভিষেকের পর থেকে তার দূ্যতি ছড়াচ্ছেন। শুরুতে ওয়ান ডাউনে ব্যাটিং করতেন। কিন্তু বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিয়মিত ওপেনার এনামুল হক বিজয় ফিল্ডিং করতে গিয়ে ইনজুরি পড়ায় পরের ম্যাচ থেকে কোচ সৌম্যকে ওপেনিংয়ে নামায়। আর ইনিংস ওপেন করতে নেমে প্রতি ম্যাচেই যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামেন সৌম্য।
একজন ওপেনারের যেমন আগ্রাসী স্টাইল থাকা দরকার সবই আছে সৌম্যর মধ্যে। অনেকদিন থেকে বাংলাদেশ দলে ওপেনিংয়ে সমস্যা ছিল। তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গী পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু সৌম্য আসার পর সে অভাব তো পূরণ হয়েছেই, এখন তামিমের চেয়েও অনেক বেশি আগ্রাসী সাতক্ষীরার এই তারকা ব্যাটসম্যান। ধারাবাহিকতাও অসাধারণ। ১৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি মাত্র একটি হলেও হাফ সেঞ্চুরি ৩টি। তবে গড় দুর্দান্ত, ৪৬.৩০। এখন পর্যন্ত কোনো 'ডাক' মারতে হয়নি তাকে। শুধু তাই নয়, একমাত্র বিশ্বকাপের ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ছাড়া বাকি সব ম্যাচেই অন্তত দুই অঙ্কের কোটায় সৌম্যের রান। তার অধিকাংশ ইনিংস ২০-৩০এর মধ্যে। তবে ধীরে ধীরে আরও পরিণত হয়ে উঠছেন। যতই দিন যাচ্ছে, সৌম্যর ব্যাটিংয়ের ধার বাড়ছে। বর্তমানে সৌম্যই বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান যার স্ট্রাইকরেট ১০০'র উপরে।
এদিকে সৌম্য ওপেন করায় এনামুল হক বিজয় আর দলেই সুযোগ পাননি। ঘরোয়া লিগে দুর্দান্ত পারফর্ম করার পরও অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বিজয়কে।