টেস্ট ক্রিকেট মানেই প্রতিপক্ষের ২০টা উইকেট শিকার করা। ব্যাটিং দৃঢ়তায় নিজেদেরকে এতটা উপরে নিয়ে যাওয়া যা টপকানো প্রতিপক্ষের সাধ্যাতীত হয়। কিন্তু টেস্ট প্রতিপক্ষের নাম যখন দক্ষিণ আফ্রিকা, এমনকি সদ্য বিজয়ী দলটারও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পরাজিত করার পরও টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিগুণ সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে। এ দলটাতে ডেল স্টেইন আর ফিলান্ডাররা ফিরেছেন বলেই নয়, বরং টেস্ট দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার সুনাম আছে বলে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে বহু পেছনে ফেলে এখনো তারাই টেস্টের সেরা দল। কিন্তু সত্যি বলতে কী দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইনটা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে যেমন স্বীকার করলেন কোচ হাতুরাসিংহে। 'দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররাই হবে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের বিশ্বমানের বোলিং লাইন রয়েছে। তবে ফলাফল নির্ভর করবে আমাদের ব্যাটসম্যানরা কিভাবে তাদের মোকাবিলা করছে তার উপর।' কোচ হাতুরাসিংহের মতে, বাংলাদেশের টপ অর্ডারে একটা স্থিতিশীলতা এসেছে। এই দলটাতে মুমিনুলের ফিরে আসা দারুণ ইতিবাচক হবে। তাছাড়া দলে ফিরেছেন গত কয়েকটা সিরিজে দারুণ ফর্মে থাকা ইমরুলও। পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে দারুণ একটা সেঞ্চুরি করেছিল ইমরুল। সবমিলিয়ে ব্যাটিং লাইনে বাংলাদেশ ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে বলেই কোচের বিশ্বাস।
দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে অসম্ভব শক্তিশালী এক দল। এটা স্বীকার করার পরও হাতুরাসিংহ বলছেন, 'আমরা 'হাই টেম্পো' ম্যাচ খেলতে চাই। নিজেদের উপর আস্থা আছে আমাদের। খেলতে চাই আক্রমণাত্দক ক্রিকেট।' কোচের এই আত্দবিশ্বাস এনে দিয়েছেন ব্যাটসম্যানরাই। ইমরুল, তামিম এবং মুমিনুলের পরও ব্যাটিং লাইনে মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক এবং সাকিব আছেন। আর ব্যাটিং লাইন যদি নিজেদের কাজটা ঠিকভাবে করে দেয় বোলিংয়ে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে পারবে। কোচ বলেন, 'আমাদের বোলিং লাইনটা দারুণ। এ সামর্থ্য নিয়ে যে কোনো দলের বিপক্ষেই আমরা ২০ উইকেট নিতে পারি।' তাছাড়া চট্টগ্রামের উইকেটে শেষ দুইদিনে রিভার্স সুইং হবে বলে মনে করেন হাতুরাসিংহে। সেক্ষেত্রে মুস্তাফিজের মতো বোলাররা দারুণ করবেন। কেবল মুস্তাফিজ নন, কোচের মতে, তাইজুলও ম্যাচের জয়-পরাজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। তাছাড়া সাকিব তো আছেনই। যদিও গতকাল পর্যন্ত দলের কম্বিনেশনটা গোছানো হয়নি বাংলাদেশের। আজ উইকেট দেখেই দল ঠিক করা হবে। হাতুরাসিংহে অবশ্য বলে গেছেন, পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভারসাম্যপূর্ণ একটা দল গঠন করা হবে। যদিও পরিবেশকে খুব গুরুত্ব দেননি এ শ্রীলঙ্কান। 'পরিবেশ যাই হোক, আমাদেরকে নিজেদের পূর্ণ শক্তি নিয়েই মাঠে নামতে হবে।' তার মতে, কন্ডিশন প্রতি দুই ঘণ্টায় পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু শক্তির কোনো পরিবর্তন হয় না। এ কারণেই সমীকরণের বাইরে রাখছেন কন্ডিশনকে।
'প্রতিপক্ষ অনেক বড়। কিন্তু আমাদের যোগ্যতাও কম নয়।' ভালো ক্রিকেট খেলার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা কোচ বলছেন, টেস্টে বড় মুহূর্তগুলোতে যারা ভালো করে ফলাফল তাদের ভাগ্যেই যায়। তাছাড়া দিনের শুরুটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আফ্রিকান বোলিং লাইনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চট্টগ্রাম টেস্টে ভালো একটা ফলাফল নিয়েই ঢাকায় ফিরতে চান কোচ হাতুরাসিংহে। তাছাড়া ওয়ানডে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ রয়েছে দারুণ ছন্দে। যে ছন্দ টেস্টে দলকে ভালো করতে উৎসাহী করবে। যদিও ছন্দের ব্যাপারটা মোটেও গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না কোচ। 'আমরা যদি ছন্দকে বিবেচনায় আনি তাহলে টানা তিনটা (দুই টি-২০ আর একটা ওয়ানডে) ম্যাচ পরাজয়ের পর ওয়ানডে সিরিজ জয়টা ছিল অসম্ভব।'