বড়দের পর ছোটরাও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিল। প্রোটিয়াদের মাটিতে দাপট দেখিয়ে সাত ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৫-২ ব্যবধানে জিতেছে টাইগাররা। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের 'দক্ষিণ আফ্রিকা' বিজয় তো নিছক একটি সিরিজ জয় নয়, এদেশের ক্রিকেটাতিহাসে এক যুগান্তরকারী ঘটনা। টাইগাররা যে এখন বিশ্ব ক্রিকেটে এক ভয়ঙ্কর শক্তি -এই সহজ বিষয়টা যারা মানতে রাজি নন তাদের জন্য মোক্ষম জবাব যুবাদের এই বিজয়। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদেরকে হেসেখেলে সাত ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৫-২ ব্যবধানে জয়টা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। বিশ্বকাপে সাফল্যের পর বাংলাদেশ যখন একের পর ক্রিকেট পরাশক্তিদের উন্নত শিড় ধূলোয় মিশিয়ে দিচ্ছিল তখন অনেকেই তা মানতে পারছিলেন না। কেউ কেউ বিজয়ে কালিমা লেপন করার চেষ্টাও করেছেন। কিংবদন্তি ইংলিশ ক্রিকেটার জিওফ বয়কট টাইগারদের ধারাবাহিক বিজয়কে কলূষিত করার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, 'শুধু ঘরের মাঠে কেন, বাইরে জিতুক তখন দেখা যাবে কেমন পারে!' ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের পর সন্দেহ পোষণ করে পাকিস্তানের সাবেক পেসার সরফরাজ নেওয়াজ মন্তব্য করেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সুযোগ পাওয়ার জন্যই বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে পাতানো খেলছে। তিনি নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ইঙ্গিত করে মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছিলেন। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা যখন নিশ্চিত হয়ে গেল তখন আরেক পাক ক্রিকেটার রমিজ রাজা বলেছিলেন, বাংলাদেশ নাকি কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যুবাদের এই বিজয়ের তিন সাবেক ক্রিকেটারের মুখে কুলুপ এঁটে দিতে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। এখন নিশ্চয়ই টাইগারদের আধিপত্য মেনে নিয়ে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়, বয়কট সরফরাজ ও রমিজের!
বিদেশের মাটিতে যুবাদের আধিপত্য দেখে নিন্দুকদের বোঝা উচিৎ বাংলাদেশের দাপুটে পারফরম্যান্স আর মোটেও ফ্লুক নয়। শুধু জাতীয় দল নয়, জাতীয় দলে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা তরুণরাও যে কত ভয়ঙ্কর তারা এখান থেকে দেখে নিতে পারেন বয়কট-সরফরাজ-রমিজরা। কী দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। কিন্তু শেষ ম্যাচেও সফরকারীরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ছেড়ে কথা বলেনি। ২২ রানের দারুণ এক জয় দিয়ে সফর শেষ করেছে যুবারা।
শেষ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। দারুণ সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও পিনাক ঘোষ। ওপেনিং জুটিতে আসে ৬৩ রান। শক্ত ভীতের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের অন্য টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরাও উজাড় করে দেয় নিজেকে। ওয়ানডে ডাউনে নামা জয়রাজ শেখ খেলেছেন ৯০ রানের অনবদ্য এক ইনংস। চার নম্বরে নামা জাকির হোসেনের ব্যাট থেকে এসেছে ৪২ রান। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দাপুটে ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে ২৬৬ রান করেছিল বাংলাদেশ। জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২৪৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দল। বাংলাদেশের অধিনায়ক মিরাজ ৪৮ রানে নিয়েছেন চার উইকেট। ম্যাচসেরা হয়েছেন জয়রাজ শেখ। আর পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে সিরিজ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন পিনাক ঘোষ।