ডেল স্টেইন মঙ্গলবার রাতে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে রজার ফেদেরার, ডেনিস লিলি আর রাফায়েল নাদালের পোট্রেটের সঙ্গে নিজেকে যোগ করে একটা ছবি পোস্ট করেন। ক্যাপশনে লিখেন, আমিও তাদের ক্লাবে আগামীকাল (গতকাল) যোগ দিতে যাচ্ছি। এটা ওদের জন্য শুভকর প্রমাণিত হয়ে থাকলে আমার জন্যও হবে। প্রোটিয়া এ পেসার 'হেডব্যান্ড'কে সৌভাগ্যের প্রতীক ভেবেছিলেন। কিন্তু তার বিশ্বাসে কাজ হলো না। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে গতকাল 'স্টেইন' আর 'গান' হতে পারেননি। স্টেইন কি আর জানতেন, টাইগাররা আফ্রিকান বোলিং লাইনের বিপক্ষে নামার আগে 'হোম ওয়ার্ক'টা সেরেছিলেন ভালোভাবেই! যার কল্যাণে মাহমুদুল্লাহর মতে, ম্যাচটা এখন টাইগারদের দিকে ঝুলে পড়েছে সিক্সটি-ফরটি!
আক্ষরিক অর্থে বড় কোনো জুটি হয়নি (তামিম-মাহমুদুল্লাহর ৮৯ ছাড়া)। ব্যক্তিগত স্কোরবোর্ডেও নেই তিন অঙ্কের কোনো 'ম্যাজিক ফিগার'। তারপরও গতকাল বিশ্বসেরা বোলিং লাইনকে শাসন করল টাইগাররা। যে উইকেটে টেস্টেও 'মারকাটারি' ব্যাটিং হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল সেখানে দুইদিনে ছক্কার মার একটা (মুশফিক)! চার সাকল্যে ৪১টা! সাগরিকার উইকেটে ব্যাটিং কতটা কঠিন তা বলে গেলেন মাহমুদুল্লাহ। ভারত সফরের বিরতির পর আবারও টেস্ট খেলতে নেমেছেন তিনি। ফিরেই খেলেছেন ৬৭ রানের এক ঝরঝরে ইনিংস। তারপরও নিজের প্রতি সন্তুষ্ট নন মাহমুদুল্লাহ। 'আমি চেয়েছিলাম দিনের শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করতে। কিন্তু হতাশাজনকভাবে আউট হয়ে গেলাম। তবে এই উইকেটে ব্যাটিং করাটা সহজ নয়। তাছাড়া তাদের বোলিংও দারুণ হচ্ছিল।' আফ্রিকানদের বোলিং তো দারুণ হবেই। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের এক (স্টেইন), সাত (ফিল্যান্ডার) এবং নয় নম্বর (মরকেল) বোলার যে তাদেরই! তারপরও স্টেইনের চারটা স্পেল (৫-৩-১৬-৬, ২-০-৭-০, ৪-০-১৫-০ ও ২-০-৮-০) টাইগাররা কি স্বাভাবিকভাবেই না খেলল! ফিল্যান্ডার কিছুটা কৃপণতা (১২-১-২২-১) করলেও রানের গতি টেস্টের মেজাজে ঠিকই এগিয়ে নিয়েছে টাইগাররা। মাহমুদুল্লাহ যেমনটা বললেন, 'ওদের বোলিং ভালো হবে এতো জানাই ছিল। আমাদের পরিকল্পনা ছিল খারাপ বলের জন্য অপেক্ষায় থাকা। সেসব বলগুলোকেই আমরা নিশ্চিন্তে হিট করেছি যেগুলো খারাপ ছিল।' যত ভালো বোলিং লাইনই হোক সারা দিন কেউ ভালো করতে পারে না। রিয়াদ-তামিমরা সেই সুযোগই কাজে লাগিয়েছেন।
বাংলাদেশ সুযোগ পেলে গতকালই লিড নিতে পারত। শেষ বিকালের বৃষ্টি ম্যাচটা না থামালে আজ হয়তো ইনিংস বড় করার লক্ষ্য নিয়েই উইকেটে যেতে পারতেন মুশফিক-সাকিব। মাহমুদুল্লাহ যেমন আক্ষেপ করে বললেন, 'উইকেটে এরই মধ্যে পরিবর্তন শুরু হয়েছে। কাল (আজ) আরও বদলে যাবে এর আচরণ। আজ (গতকাল) আমরা লিড নিতে পারলে ভালো হতো। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দিনের শুরুটা ভালো করা। একটা বড় জুটি গড়ে তোলা।' আফ্রিকাকে রানের নিচে চাপা দিতে পারলে ম্যাচটা তুলে নেওয়ার অসম্ভব হবে না। মাহমুদুল্লাহর মতে, এখন ম্যাচটা বাংলাদেশের দিকে ঝুলে আছে ষাট ভাগ। 'ম্যাচটা এখন আমাদের দিকে সিক্সটি-ফরটি ধরতে পারেন।' রিয়াদের এই বক্তব্য সত্য প্রমাণ করতে হলে দীর্ঘ পথই পাড়ি দিতে হবে টাইগারদের। কেবল বড় রান করলেই তো হবে না, পাশাপাশি প্রোটিয়াদের আরও একবার অলআউট করার দুঃসাহসও দেখাতে হবে। অবশ্য মাহমুদুল্লাহর মতে, আজ থেকেই বাংলাদেশের স্পিনাররা সাগরিকার উইকেটে উদার সহযোগিতা পাবে। মুস্তাফিজের জন্য অফ কাটারগুলো ছোঁড়া আরও সহজ হয়ে যাবে। ম্যাচ নিয়ে ভক্তদের স্বপ্ন দেখার অধিকার দেওয়ার পাশাপাশি মাহমুদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যও করে গেলেন। 'প্রথম ইনিংসটাই ম্যাচে আমাদের অবস্থান ক্লিয়ার করবে।' বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার ২৪৮ রানের জবাবে ১৭৯/৪ করে এখনো ৬৯ রানে পিছিয়ে। আফ্রিকানদের চাপে ফেলার জন্য এক-দেড়শ রানের লিড তো প্রয়োজনই!
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস : ২৪৮/১০ (৮৩.৪ ওভার) (বাভুমা ৫৪, প্লেসিস ৪৮, এলগার ৪৭; মুস্তাফিজ ৪/৩৭, জুবায়ের ৩/৫৩)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১৭৯/৪ (৬৭ ওভার) (তামিম ৫৭, ইমরুল ২৬, মুমিনুল ৬, মাহমুদুল্লাহ ৬৭, মুশফিক ১৬*, সাকিব ১*)।