নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকলেন ইয়ন মরগান। আসছেন না তিনি বাংলাদেশে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফরে ওয়ানডে দলের নেতৃত্বে থাকবেন ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দলের সহ-অধিনায়ক জশ বাটলার। এমনটাই জানিয়েছে বৃটিশ সংবাদমাধ্যম 'দ্য টেলিগ্রাফ'।
মরগান স্পষ্টভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে আসবেন না তিনি। নিজেকে দ্বিতীয়বার সহিংস পরিস্থিতিতে ফেলতে নারাজ এই ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে এসে রাজনৈতিক সহিংসতার দুঃসহ স্মৃতি এখনও ভুলতে পারছেন না তিনি।
শুক্রবার ও শনিবার ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসছেন ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) পরিচালক সাবেক অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস। ইংলিশ গণমাধ্যমের খবর, এরই মধ্যে নাকি ক্রিকেটাদের সতর্ক করা হয়েছে এই বলে যে;বাংলাদেশ সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলে পরবর্তী যে কোন সিরিজে জায়গা পাওয়াটাও কঠিন হয়ে যাবে।
এত কিছুর পরেও শেষপর্যন্ত আসছেন না মরগান। আর তার না আসার সিদ্ধান্তে দলের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান বাটলার। তবে সহঅধিনায়ক হিসেবে বাটলারের অভিজ্ঞতা শুধু মাত্র পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ। কিন্তু সেই বাটলারের কাঁধেই দেওয়া হচ্ছে অধিনায়কের দায়িত্ব।
অধিনায়ক হচ্ছেন, এমনটা জানতে পেরে উচ্ছ্বসিত বাটলার। তিনি বলেন, ‘এই কাজটা আমি অনেক ভালোবাসি। এটার অভিজ্ঞতাও আমার ভালো লাগে।’ বাটলারের জন্য বাংলাদেশ সফর যে সহজ হবে না এমনটাও তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কারণ নিজেদের মাটিতে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল।
এদিকে মরগানের সিদ্ধান্ত প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর থেকেই পূর্বসূরি ইংলিশ ক্রিকেটার ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সাবেক অধিনায়ক, ধারাভাষ্যকার ও কলামিস্ট নাসের হুসেইন তো গার্ডিয়ান পত্রিকায় বলেই দিয়েছেন, ‘এতে করে মরগান দলে তাঁর কর্তৃত্ব হারাতে পারে’। আরেক সাবেক ইংলিশ পেসার ও ক্রিকেট সাংবাদিক ডেরেক প্রিঙ্গল টুইট করেছেন, ‘ভারত সফরে বোমা হামলার স্মৃতির কথা বলে মরগান ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে দিল। কিন্তু সে তো ভারতে যাওয়া বন্ধ করেনি।’
মরগানের সবচেয়ে কড়া সমালোচনা করেছে ডেইলি মেইল। দরকারের সময় মরগান সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন দাবি করে মেইল প্রশ্ন তুলেছে, ‘তরুণ সতীর্থদের জন্য যখন তাঁদের অধিনায়ককে সবচেয়ে বেশি দরকার, অনিশ্চয়তার মধ্যে তাঁরা যখন চাইছিল অধিনায়ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিমানে উঠবেন, সেই সময় মরগান এমন একটা কাজ কীভাবে করে? অথচ এই মরগান যখন টানা ২১ ম্যাচ ফিফটি–ছাড়া ছিল, তখনো নির্বাচকেরা তাঁর ওপর আস্থা রেখেছিলেন।’
শুধু এটুকুই নয়, ইংল্যান্ডের প্রতি মরগানের আনুগত্যও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে মেইল, ‘দলে সে সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন ও আবেগহীন চরিত্র। ইংল্যান্ডের আইরিশ অধিনায়ক যিনি বড় টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের ম্যাচের আগে দেশের জাতীয় সংগীত গাইতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এমনকি তাঁর মিডলসেক্স সতীর্থদেরও তাঁর সঙ্গে হৃদ্যতা নেই। আশ্রিত দেশের হয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য সে নিজের দেশকে বাদ দিতেও দ্বিধা করেনি।’
বাংলাদেশ সফরে না আসাটা এখন পর্যন্ত মরগানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করে মেইল লিখেছে, ‘এটা এমন একটা সিদ্ধান্ত, যেটা তাঁকে তাড়া করে ফিরতে পারে।’ মেইল, টেলিগ্রাফ।
জানিয়ে রাখা ভাল, সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে দুইটি টেস্ট ও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে আসবে ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল।
যদিও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে দলে কারা থাকছেন, সে ব্যাপারে কিছুই জানায়নি ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। শনিবার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানানো হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/তাফসীর