১৯ নভেম্বর, ২০১৯ ১১:২৩

বদলে যাওয়া সেই বাংলাদেশি ক্রিকেটার যাচ্ছেন ইডেনে: আনন্দবাজার

অনলাইন ডেস্ক

বদলে যাওয়া সেই বাংলাদেশি ক্রিকেটার যাচ্ছেন ইডেনে: আনন্দবাজার

রেকর্ড বই বলছে, ‘সদাগোপান রমেশ বোল্ড রঞ্জন দাস ৫৮।’ এই পরিসংখ্যানটুকু বাদ দিলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাকে চেনার বা জানার আর কোনও উপায় নেই। কী করেই বা থাকবে! সেই ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর-এর ভারত-বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট ম্যাচটাই যে তার জীবনের প্রথম এবং শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তিনি বিকাশরঞ্জন দাস।

দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন বিকাশ। ১৮ বছর বয়সে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ভারতের বিরুদ্ধে। সেটা ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক ঐতিহাসিক দিন। নাবালকত্ব ছেড়ে সাবালকত্বের পথে পা বাড়িয়েছিল পদ্মাপাড়ের ক্রিকেট। অনেকেই তখন বলেছিলেন, লম্বা দৌঁড়ের মশলা রয়েছে বিকাশের মধ্যে। ঠিকঠাক রাস্তা ধরে এগোলে বাঁ হাতি পেসার সৌরভ ছড়াতেই পারতেন দেশের ক্রিকেটে।   

কিন্তু যা ভাবা হয়, তা সব সময় মেলে না। ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরে যেতে হয় বিকাশকে। ‘বিকাশ’ নামের অস্তিত্ব এখন আর নেই। সে দিনের বিকাশরঞ্জন দাস ব্যক্তিগত বিশ্বাসে বদলে ফেলেছেন ধর্ম। হয়ে গিয়েছেন মাহমুদুল হাসান। ক্রিকেটারের পরিবর্তে এখন তিনি ব্যাংকের ম্যানেজার। ব্যস্ততার মধ্যে কাটে প্রতিটা দিন।

দীর্ঘ ১৯ বছর সেই বিকাশ তথা মাহমুদুল হাসান ফের যাচ্ছেন ইডেনে। প্রথম ম্যাচের অন্যান্য ক্রিকেটারদের সঙ্গে তিনিও ইডেনে থাকছেন ২২ নভেম্বর।
২০০০ সালে টেস্ট খেলার স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। সৌরভের নেতৃত্বে ভারত এসেছিল বাংলাদেশে। সাবেক সেই ভারত অধিনায়ক এখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। টেস্ট ক্রিকেটের গরিমা ফেরাতে দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্ট হবে ইডেনে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের। প্রিয় ‘দাদা’র কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে নস্ট্যালজিক বিকাশ ওরফে মাহমুদুল হাসান। ফিরে যাচ্ছেন ১৯ বছর আগের সেই ঐতিহাসিক দিনে। ঢাকার ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার বলছেন, “সেই মধুর স্মৃতি কী করে ভুলব বলুন তো! শান্ত (হাসিবুল হোসেন) ভাই প্রথম ওভার করেছিল। আর এক প্রান্ত থেকে আমি শুরু করেছিলাম। প্রথম বলটা করেছিলাম সদাগোপান রমেশকে।”

বিকাশের জোরের উপরে ধেয়ে আসা বলটাই মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয় রমেশের কাছে। টাইম মেশিনের সাহায্য না নিয়ে বিকাশ ফিরে যান ২০০০ সালের সেই প্রথম টেস্টে। তিনি বলছিলেন, “একটু জোরের উপরেই বলটা রেখেছিলাম। বাড়তি বাউন্সে বল রমেশের ব্যাটে লেগে স্টাম্পে লাগে। একটু পরেই আম্পায়ার স্টিভ বাকনার এগিয়ে এসে আমার হাতে বেলটা তুলে দিয়ে বলেন, এটা যত্ন করে রেখে দিও। এটা তোমার প্রথম টেস্ট উইকেটের স্মৃতি। বেলটা হাতে নিয়ে দেখলাম ভেঙে গিয়েছে।”

সেই বেল এখনও বিকাশের শো কেসে সযত্নে সাজানো রয়েছে। অভিষেক টেস্টের সেই স্মারকের দিকে তাকালে অদ্ভুত এক ভাল লাগা কাজ করে তার। সেই সঙ্গে যন্ত্রণায় মোচড় দিয়ে ওঠে তার বুক। শুরুতেই কেন শেষ হয়ে গেল প্রতিশ্রুতি জাগানো একটা ক্যারিয়ার? সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে বিকাশ বলছেন, “ঘরোয়া ক্রিকেটে নাগাড়ে বল করে যেতাম। পিঠে ব্যথা অনুভব করতাম। কেউ সেভাবে আমাকে গাইড করার ছিল না। ওই পিঠের চোটই আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিল।”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে শেষ করে উঠেই প্রাক্তন বাঁ হাতি পেসারের প্রশ্ন, “আপনাদের বুমরাও তো চোটের কবলে। তাকে ফেরানোর জন্য চেষ্টা করছে না বিসিসিআই?”

চোট-আঘাত ফাস্ট বোলারের জীবনে বিভীষিকা। চোট সারিয়ে ফিরে আসার লড়াইটা একজন ফাস্ট বোলারের কাছে আরও কঠিন। সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট বোর্ডের সাহায্যের দরকার পড়ে। বিকাশের অভিমান তার দিকে সেই সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। অবহেলিত বিকাশ অভিমানের বাষ্প গলায় জড়িয়ে বলছেন, “অস্ট্রেলিয়ায় কমনওয়েলথ ব্যাংক টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে সচিন টেন্ডুলকার ও অজিত আগারকারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। পরে জানতে পারি চোট সারানোর জন্য বোর্ড ওদের অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছে। আমিও আমাদের দেশের বোর্ডের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। দুঃখের কথা, কোনও সহযোগিতাই পাইনি। তখন ঠিকঠাক সাহায্য পেলে আমাকে হয়তো খেলা ছাড়তে হত না।”

সেই কষ্ট বুকে চেপে রেখে দিয়েছেন বিকাশ। বোর্ডের প্রতি অভিমান এখনও রয়েছে। বলছিলেন, “যে তোমাকে সার্ভিস দেবে, তাকে তো যত্ন করতে হয়।”

 সেই যত্নটাই পাননি বলে অভিযোগ তার। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি তীব্র অভিমানে আর যোগাযোগও রাখেননি। কথায় বলে, দৃষ্টির আড়াল হলে, স্মৃতি থেকেও নাকি মুছে যাওয়া হয়। বিকাশকেও হয়তো ভুলেই গিয়েছিল সে দেশের বোর্ড। না হলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণের কথা তাকে কেন জানাল না কেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড? দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের কাছ থেকেই প্রথম তিনি জানতে পারেন ইডেনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ‘দাদা’।

দ্বিতীয় টেস্টের জন্য সেজে উঠছে কলকাতা। শহর মোড়ানো হবে গোলাপি আলোয়। ইডেনে বসবে চাঁদের হাট। ইতিহাস তৈরির ম্যাচে ভারতকে কি বেগ দিতে পারবে বাংলাদেশ? সূত্র: আনন্দবাজার

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর