২০১২ সালের অক্টোবলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের জার্সি গায়ে শেষবার মাঠে নেমেছিলেন। তারপর খারাপ ফর্ম, চোট থাবা বসায় ক্যারিয়ারে। এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় আটটি বছর। কিন্তু জাতীয় দলের দরজা আর খোলেনি। অবশেষে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন এক সময়কার ভারতের তারকা পেসার ইরফান পাঠান।
শেষের দিকে আইপিএল-ও বসে থাকতে হত ডাগ আউটে। গত মৌসুমে জম্মু-কাশ্মীরের হয়ে রঞ্জিতে খেললেও তাঁর মনে প্রশ্নের ঝড় উঠেছিল, ‘‘আর খেলে কী হবে?’’ অবশেষে এক বুক হতাশা নিয়ে অবশেষে শনিবার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন বাঁ হাতি বোলার। স্টার স্পোর্টস-এর স্টুডিওয় পাঠান জানিয়ে দেন, সব ফরম্যাটের ক্রিকেট থেকেই তিনি অবসর নিচ্ছেন। তবে বিদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তাকে দেখা যাবে। জম্মু-কাশ্মীরের মেন্টর হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন তিনি।
১৯ বছর বয়সে অ্যাডিলেড ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল পাঠানের। এরপর ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে পাঠান সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী (১৬টি) হয়েছিলেন। তার বোলিং দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম।
২০০৪ সালের পাক সফর দেখেছিল অন্য এক পাঠানকে। তাঁর রামধনুর মতো বাঁকানো সুইং খেলতে বেগ পেতে হয়েছিল পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের। ২০০৬ সালের পাকিস্তান সফরেও নজর কাড়েন পাঠান। করাচি টেস্টের প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। পিছন ফিরে তাকিয়ে পাঠান এদিন বলেন, ‘‘পাকিস্তান সফর থেকে দারুণ স্মৃতি নিয়ে প্রতিবার দেশে ফিরেছিলাম। অনূর্ধ্ব-১৯ খেলার সময়ে প্রথমবার পাকিস্তানে গিয়েছিলাম। সেখানে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়ান টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৯টি উইকেট নিয়েছিলাম। তার মধ্যে ছিল একটি হ্যাটট্রিকও।’’
বলের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ের হাতও ছিল ভাল পাঠানের। ২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে শতরানও হাঁকিয়েছিলেন তিনি। জাতীয় দলের কোচ গ্রেগ চ্যাপেল তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠাতেন পাঠানকে। সেই সময় থেকেই তাঁর বোলিং গ্রাফ পড়তে থাকে। বোলিংয়ে ধার হারাতে থাকেন বাঁ হাতি এই অলরাউন্ডার।
দেশের হয়ে ২৯টি টেস্ট থেকে ১০০টি উইকেট পেয়েছেন পাঠান। ১২০টি ওয়ানডে-তে ১৭৩টি উইকেটের মালিক তিনি। ২৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ থেকে ২৮টি উইকেট পেয়েছেন তিনি। টি টোয়েন্টি (২০০৭) বিশ্বজয়ী দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। নিজের ক্যারিয়ারের দিকে পিছন ফিরে তাকিয়ে পাঠান বলেন, ‘‘আমার ক্রিকেট জার্নি শেষ। মন প্রাণ দিয়ে ক্রিকেট খেলেছি। পিছন ফিরে নিজের ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে আমার গর্ব হয়।’’
তবে যেভাবে পাঠানের ক্যারিয়ারের সূচনা হয়েছিল শেষটা সেভাবে হল না। পাঠান বলেন, ‘‘২৭-২৮ বছর বয়সে একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার শীর্ষে পৌঁছায়। তারপর সেই ক্রিকেটার ৩৫ বছর পর্যন্ত খেলে যায়। ২৭ বছর বয়সেই ৩০১টি আন্তর্জাতিক উইকেট আমার ঝুঁলিতে ছিল। ভেবেছিলাম ৫০০-৬০০টি উইকেট পেয়ে শেষ করব।’’ সেটা আর হল না।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব