জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ অধিনায়ক মাশরাফি মোর্ত্তজার প্রত্যাবর্তন হলেও আলোচনার তুঙ্গে তার অবসর। গত বিশ্বকাপের শুরু থেকেই বেশ বলাবলি শুরু হয়েছিল, মাশরাফি কবে অবসর নেবেন। গতকাল জিম্বাবুয়ে সিরিজ সামনে রেখে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মাশরাফি মোর্ত্তজা। স্বভাবতই শুরু থেকেই তার অবসর নিয়ে প্রশ্ন উঠে। কিন্তু মাশরাফি সাফ জানিয়ে দিলেন যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা বোর্ডকেই জানাবেন। এসময় তিনি আত্মসম্মান বা লজ্জার প্রশ্নে যে প্রতিক্রিয়া জানান, তা মুহূর্তে আলোচনার জন্ম দেয়।
আজ রবিবার বিকেলে টাইগারদের খেলা দেখতে সিলেটে এসে সে বিষয়ে মুখ খুলেছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুরো প্রেসকনফারেন্সটা দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে আপনারা ওকে বেশি খোঁচাচ্ছিলেন। এরকম একটা সময় যখন আপনাদের তার পাশে থাকা উচিৎ, সে সময় তাকে আপনারা একটি বেশি কষ্ট দিয়ে দিচ্ছেন। এই ব্যাপারে আলাপ করা উচিতই না আমাদের। ও বলে দিয়েছে কী চায়। ক্যাপ্টেন কে হবে এটা বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে, ও কখন অবসর নিবে এটা ওর ব্যাপার।’
মাশরাফির কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে পাপন আরও বলেন, ‘যেটা বলার কথা সেটাই বলেছে। সমস্যা হচ্ছে আমি একটা জিনিস আপনাদের কাছে অনুরোধ করব, আমি সবসময় দুটো প্লেয়ারের কথা বলি, সাকিবের মত খেলোয়াড় আমাদের রিপ্লেসমেন্টে নেই, মাশরাফি অ্যাজ এ ক্যাপ্টেন আমাদের রিপ্লেসমেন্ট নাই। মাশরাফির অবদান কোনোভাবেই খাট করার সুযোগ নেই।’
উল্লেখ্য, গতকাল মাশরাফির প্রতি প্রশ্ন ছিল, যে প্রশ্নটা আপনার কাছে আসে তা অনেকটা আত্মসম্মানের। যে জায়গাটায় এখন দাঁড়িয়ে আছেন, বিশেষ করে ৮ ম্যাচে উইকেট নেই। ২০০১ সালে যখন শুরু করলেন নভেম্বরে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে, ওয়ানডে খেললেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুরু হয়েছিল, ফ্লাওয়ার ব্রাদার্সের উইকেট নিলেন। ২০০৭-২০০৮ সালে তিন চারটা ম্যাচে আপনি উইকেট পাননি, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আপনাকে পড়তে হয়নি। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে বলেই কী একটা বাড়তি মোটিভেশন কাজ করছে, আপনার যদিও মোটিভেশনের দরকার পড়ে না।
উত্তরে মাশরাফি বলেছিলেন, প্রথমত হচ্ছে যে, আত্মসম্মান বা লজ্জা- আমি কি চুরি করি মাঠে? আমি কি চোর? খেলার সাথে লজ্জা, আত্মসম্মান আমি মেলাতে পারি না। এত জায়গায় এত চুরি-চামারি হচ্ছে, তাদের লজ্জা নাই? আমি মাঠে এসে উইকেট না পেলে আমার লজ্জা লাগবে কেন। আমি কি চোর? উইকেট আমি নাইবা পেতে পারি, আমার সমালোচনা আপনারা করবেন, সাপোর্টাররা করবে, লজ্জা পেতে হবে কেন? আমি কি বাংলাদেশের হয়ে খেলছি নাকি অন্য দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলছি, যে আমার লজ্জা পেতে হবে। আমি পারিনি আমাকে বাদ দিয়ে দেবে। জিনিসটা সাধারণ। এখন কথা হচ্ছে, আমার লজ্জা, আত্মসম্মানবোধ কার সঙ্গে দেখাতে যাব?
আমি তো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে নামছি। আমি কি বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষের মানুষ। যে কেউ পারফর্ম নাই করতে পারে। সেটা তো তার ডেডিকেশন না থাকে, কোনো জায়গায় ঘাটতি থাকে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আসতেই পারে। আরেকটা সমালোচনা হতে পারে স্বাভাবিক- যেটা সারা পৃথিবীতেই হতে পারে, যে আমি উইকেট পাই না আমার সমালোচনা হবে। কিন্তু কথা যখন আসে লজ্জা, আত্মসম্মানবোধ তখন আমার প্রশ্ন থাকে। আমার সমালোচনা করুক কিন্তু আমার আত্মসম্মানবোধ! আমি ক্রিকেট খেলতে এসে কি আমার আত্মসম্মানবোধ বিসর্জন দিতে আসছি নাকি। আমি কি অন্য দেশের হয়ে খেলছি নাকি চুরি-চামারি করছি। তা তো না। সুতরাং এই জিনিসটার সঙ্গে আমি মোটেও একমত না বলেও মাশরাফি উল্লেখ করেন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক