সিরিজ শুরুর আগে কমবেশি সব ক্রিকেটবোদ্ধাই টিম ইন্ডিয়ার নামের পাশে ফেভরিট তকমা বসিয়ে দিয়েছিলেন। আর হবে নাই বা কেন? দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ে যাওয়ার আগে বিরাট কোহলিরা যে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দেশ থেকে টেস্ট সিরিজ জিতে ফিরেছেন। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজেও বড় বেশি বেগ পেতে হয়নি। স্টিভ স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন, জো রুটদের সামনে তো পিটারসেন, এলগাররা কিছুই না। অন্তত অভিজ্ঞতার দিক থেকে আর সামর্থ্যের দিক থেকে। আর তাদের কাছেই শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হতে হল কোহলি বাহিনীকে।
যে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ইতিহাসের পাতায় নাম ওঠার কথা কোহলিদের, সেই সিরিজ ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের বইয়ে আরও একটা সাধারণ পৃষ্ঠা হয়ে থেকে গেল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করা শ্রেয়াস আইয়ার গোটা সিরিজে সুযোগ পেলেন না, রাহানে এবং পূজারা জুটি কেন বার বার ব্যর্থতা সত্ত্বেও সুযোগ পাচ্ছে, দ্বিতীয় ম্যাচে ভাল লড়াই করা বিহারীও শেষ ম্যাচে সুযোগ পেলেন না কেন, দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ পেসার ইশান্ত শর্মা গোটা সিরিজে বেঞ্চ বসে রইলেলেন কেন? সিরিজ শেষে একগুচ্ছ প্রশ্ন ছাড়া আর একটা জিনিসই পেয়েছে ভারতীয় দল, সেটা হল বিতর্ক। বলা ভাল, গোটা প্রোটিয়া সিরিজে ভারতের প্রাপ্তি শুধু অনাবশ্যক বিতর্ক।
বিতর্ক শুরু হয়েছিল সিরিজ শুরুর আগে থেকেই। দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ে যাওয়ার আগে সাংবাদিক বৈঠকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মোটামুটি গোটা ভারতীয় বোর্ডকেই নিজের শত্রু বানিয়ে ফেললেন অধিনায়ক কোহলি। যার রেশ এখনও বর্তমান। এই বিতর্ক যে কোহলিকে খেলা চলাকালীনও তাড়া করে বেড়ায়নি, সেটা কে বলতে পারে? সেই বিতর্কের জবাব হয়তো ভারতে ফিরে বিরাটকে আবার দিতে হবে।
সিরিজ চলাকালীনও বিতর্ক কম হয়নি। আফ্রিকা উড়ে যাওয়ার আগে সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্ফোরণ ঘটানো বিরাট কোহলি প্রথম দুই টেস্টের আগে বা পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখিই হলেন না। নেটদুনিয়ায় প্রশ্ন ওঠা শুরু হল, তাহলে কি বিরাট কোহলিকে সাংবাদমাধ্যমের সামনে আসতে দিচ্ছে না বোর্ড? রাহুল দ্রাবিড় যতই সেই বিতর্ক ‘ডিফেন্ড’ করার চেষ্টা করুন না কেন, তাতে বিশেষ সুবিধা হয়েছে বলে মনে হয় না। শেষ টেস্টের আগে আবার সাংবাদিক বৈঠকে এসে বিরাট কোহলিকে বলতে হল, ‘আমার মনে হয় না, আমার আর কিছু প্রমাণ করার আছে।’ যা আগের বিতর্কে আরেকটু ঘি ঢেলে দিয়েছে।
সিরিজ চলাকালীন সবচেয়ে বড় বিতর্কটি হল কেপ টাউন টেস্টের তৃতীয় দিন। একটি ডিআরএসের সিদ্ধান্ত বিপক্ষে যাওয়ার পর যেভাবে ভারত অধিনায়ক স্ট্যাম্প মাইকে গিয়ে গালিগালাজ করলেন, সেটা আর যাই হোক ভদ্রলোকের খেলায় শোভনীয় নয়। শুধু বিরাট কেন, রাহুল, অশ্বিনরাও যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখালেন, সেটাও বেশ অস্বস্তিকর। এছাড়াও বার কয়েক আম্পায়ারকে চমকানো, জ্যানসেন, ভ্যান ডার ডুসেনদের স্লেজিং করা এসব তো আছেই। বহু বছর বাদে যখন ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস লেখা হবে, তখন এই সিরিজ থেকে প্রাপ্তি বলতে এই বিতর্ক বলতে আর কী লেখা যাবে? ঋষভ পন্থের কেপটাউনের সেঞ্চুরিটুকুই যা পাওনা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ