১৬ আগস্ট, ২০২২ ২৩:০৬

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় ও'ব্রায়েনের

অনলাইন ডেস্ক

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় ও'ব্রায়েনের

কেভিন ও’ব্রায়েন।

ওয়ানডে ক্রিকেটের পাট এক বছর আগেই চুকিয়ে ফেলেছেন কেভিন ও’ব্রায়েন। আয়ারল্যান্ডের হয়ে তিনি খেলে যাচ্ছিলেন কেবল টি-টোয়েন্টি। পাখির চোখ করেছিলেন এ বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে। কিন্তু লম্বা সময় ধরে যে দলেই জায়গা হচ্ছে না। হতাশা নিয়েই তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন এই আইরিশ অলরাউন্ডার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) অবসরের কথা জানান ও’ব্রায়েন। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে টি-টোয়েন্টির বৈশ্বিক আসরে খেলতে না পারার হাহাকার ফুটে ওঠে ৩৮ বছর বয়সী ক্রিকেটারের কথায়। তিনি জানান, দেশের হয়ে ১৬ বছরে ৩৮৯ ম্যাচ খেলার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিচ্ছি। আশায় ছিলাম অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টানব। কিন্তু গত বিশ্বকাপের পর আইরিশ দলে জায়গাই হচ্ছে না। আমার মনে হয়, নির্বাচক ও ম্যানেজমেন্ট অন্যভাবে চিন্তা করছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছিলেন ও’ ব্রায়েন। কিন্তু নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। তিন ইনিংসে তার রান যথাক্রমে ৯, ৫ ও ২৫। শ্রীলঙ্কা ও নামিবিয়ার বিপক্ষে হেরে আয়ারল্যান্ডও উঠতে পারেনি সুপার টুয়েলভে। গত অক্টোবরে নামিবিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের ওই ম্যাচের পর আর আইরিশদের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ পাননি ও’ব্রায়েন।

শেষটা ভালো না হলেও আয়ারল‍্যান্ডের দারুণ সব অর্জনের স্বাক্ষী তিনি, এর অনেকগুলোর রচনা তার হাত ধরেই। আইরিশ ক্রিকেটে তিনি মহানায়ক। আয়ারল্যান্ডের অনেক জয়ের নায়ক তিনি। নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে বেশ কিছু রেকর্ড। তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৬৩ বলে খেলা ১১৩ রানের ইনিংস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৫০ বলে সেঞ্চুরি করে দলকে স্মরণীয় জয়ের পথে এগিয়ে নেন তিনি। যা এখনও টিকে আছে বিশ্বকাপে দ্রুততম শতক হিসেবে। ৩২৭ রান তাড়ায় আয়ারল্যান্ড যখন ১০৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল, উইকেটে নেমে ম্যাচের গতি পাল্টে দেন ও’ব্রায়েন। ম্যাচ জিতে আয়ারল্যান্ড গড়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড।

২০০৬ সালে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা ও’ব্রায়েন এই সংস্করণে খেলেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৫৩ ম্যাচ। ২৯.৪২ গড়ে তার করা ৩ হাজার ৬১৯ রান দলটির তৃতীয় সর্বোচ্চ। সেঞ্চুরি দুইটি, ফিফটি ১৮টি। পেস বোলিংয়ে ৩২.৬৮ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ১১৪টি, যা আয়ারল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ। আইরিশদের হয়ে ওয়ানডেতে একশ উইকেট নেই আর কোনো বোলারের। ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ নিয়েছেন ৬৮টি, সেখানেও তিনি সবার উপরে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে প্রথম বলেই অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসকে ফিরিয়ে দেন ও’ব্রায়েন। এই সংস্করণে ক্যারিয়ারের প্রথম বলে উইকেট পাওয়া ১৬তম ক্রিকেটার তিনি। ওয়ানডের দুই বছর পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় ও’ব্রায়েনের। এই সংস্করণে তার ১১০ ম্যাচের চেয়ে আয়ারল্যান্ডের হয়ে বেশি খেলেছেন কেবল পল স্টার্লিং (১১৩ ম্যাচ)। ২৮.৭৯ গড়, এক সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে রান করেছেন ১ হাজার ৯৭৩। যা দেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৫২ ইনিংসে বল হাতে নিয়ে উইকেট নিয়েছেন ৫৮টি।

২০১৭ সালে টেস্ট খেলুড়ে দল হিসেবে স্বীকৃতি পায় আয়ারল্যান্ড। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সাদা পোশাকে কেবল তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে আইরিশদের। সবগুলো ম্যাচই খেলেছেন ও’ব্রায়েন। ৫১.৬০ গড়ে যেখানে তার রান ২৫৮। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন ও’ব্রায়েন। উপহার দেন ১১৮ রানের ইনিংস। আয়ারল্যান্ডের হয়ে টেস্ট সেঞ্চুরি নেই আর কারও। এই সংস্করণে তার ফিফটি আছে একটি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই সেঞ্চুরি করা আয়ারল্যান্ডের একমাত্র ব্যাটসম্যান ও’ব্রায়েন। প্রাপ্তিতে ভরা ক্যারিয়ারের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার কথা বললেন তিনি বিদায় বেলায়। তিনি বলেন, আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলা প্রতিটি মিনিট আমি উপভোগ করেছি। মাঠে অনেক বন্ধু হয়েছে এবং জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় মনে রাখার মতো অনেক সুখস্মৃতি আমার আছে।

খেলোয়াড়ি জীবন শেষে পরবর্তী ক্যারিয়ার গড়তে চান তিনি কোচিংয়ে। এরই মধ্যে সেই পথে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যালেঞ্জ লিগে ইতালির কোচিং স্টাফে ছিলেন তিনি, কাজ করেছেন এস্তোনিয়ার পরামর্শক হিসেবেও।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর