ম্যাচের নবম বলে অলি রবিনসনের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে উপড়ে গেল ডিন এলগারের অফ স্টাম্প। শুরু হলো বোলারদের আধিপত্য, চলল দিন জুড়ে। ধুঁকতে ধুঁকতে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে গেল ১১৮ রানেই। ইংল্যান্ডের ইনিংসেও সেই একই চিত্র, টপাটপ পড়ল উইকেট। দিন শেষে কোনোমতে লিড পেলেও স্বস্তিতে নেই তারাও।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দ্যা ওভালে সিরিজ নির্ধারণী টেস্টের তৃতীয় দিনে দুই দল মিলিয়ে পতন হয়েছে ১৭ উইকেটের। আদৌতে এটি প্রথম দিন, ম্যাচের প্রথম দুই দিন যে খেলাই হয়নি। ৬ উইকেটে ৩৬ রানের ধ্বংসস্তূপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয় ১১৮ রানে। জবাবে ২ উইকেটে ৮৪ রানের অবস্থান থেকে দিন শেষে ইংল্যান্ডের রান ৭ উইকেটে ১৫৪। এগিয়ে আছে তারা ৩৬ রানে।
প্রোটিয়াদের অল্পতে থামিয়ে দেওয়ার মূল কারিগর রবিনসন। ২৮ বছর বয়সী এই পেসার ৪৯ রানে নেন ৫ উইকেট। অভিজ্ঞ পেসার স্টুয়ার্ড ব্রডের প্রাপ্তি ৪১ রানে ৪টি। টেস্টে পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটের তালিকায় দুই নম্বরে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রাথের পাশে বসেছেন তিনি, দুইজনের উইকেট ৫৬৩টি করে। একটি উইকেট নিয়ে টেস্ট ইতিহাসের সফলতম পেসার জেমস অ্যান্ডারসনের উইকেট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৫৬।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে আট নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ৩০ রান করেন বোলার মার্কো ইয়ানসেন। পরে বল হাতেও দলের সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম তিনিই। ৩৪ রানে নেন ৪ উইকেট। ইংল্যান্ডের হয়ে ৬৭ রান করে আউট হন অলি পোপ। তার ৭৭ বলের ইনিংসটি গড়া ১৩টি চারে।
সিরিজের তৃতীয় এই টেস্টে প্রথম দিনে টস হলেও খেলা হয়নি বৃষ্টির কারণে। দ্বিতীয় দিনে খেলা হয়নি প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি সম্মান জানাতে। অবশেষে তৃতীয় দিনে মাঠে গড়ায় খেলা। রানিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এ দিন খেলা শুরুর আগে পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা। গাওয়া হয় দুই দলের জাতীয় সঙ্গীত। রানির মৃত্যুর পর যেহেতু রাজার যুগ শুরু হয়ে গেছে, তাই ইংল্যান্ডের জাতীয় সংগীতে ‘গড সেভ দা কুইন’ এর বদলে গাওয়া হয় ‘গড সেভ দা কিং’, ১৯৫২ সালের পর যা প্রথম।
সকালে আকাশ ছিল মেঘলা। রোদের লুকোচুরিও ছিল। ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট খুব কঠিন ছিল না যদিও। নিখুঁত লাইন-লেংথে বোলিংয়ের পুরস্কার পান ইংলিশ বোলাররা। রবিনসনের ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হন এলগার। পরের ওভারে অ্যান্ডারসনের অফ স্টাম্পের বলে খোঁচা দিয়ে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন আরেক বাঁহাতি ওপেনার সারেল এরউইয়া।
কিগান পিটারসেন বোল্ড হন রবিনসনের বল ছেড়ে দিয়ে। রায়ান রিকেলটনকে কট বিহাইন্ড করে নিজের প্রথম উইকেট পান ব্রড। রবিনসনের পরপর দুই ওভারে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন কাইল ভেরেইনা ও ভিয়ান মুল্ডার। দ্বাদশ ওভারে তখন ৩৬ রানে ৬ উইকেট নেই দক্ষিণ আফ্রিকার। টেস্টে এর চেয়ে কম রানে তারা প্রথম ৬ উইকেট হারিয়েছিল কেবল একবারই, ২০১৫ সালে নাগপুরে ভারতের বিপক্ষে ৩৫ রানে ৬টি।
এরপর খায়া জন্ডোর সঙ্গে ৩৬ ও কেশভ মহারাজের সঙ্গে ২৭ রানের জুটিতে দলের স্কোরকে কিছুটা ভদ্রস্থ করেন ইয়ানসেন। দুইবার জীবন পাওয়া ইয়ানসেনকে ফিরিয়েই ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান রবিনসন। বাকি ৩টি উইকেটই নেন ব্রড।
জবাবে ইংল্যান্ড অ্যালেক্স লিসকে হারায় চতুর্থ ওভারেই। তাকে বোল্ড করে দেন ইয়ানসেন। এই পেসার পরে বিদায় করেন আরেক ওপেনার জ্যাক ক্রলিকেও, এলবিডব্লিউ করে। তৃতীয় উইকেটে ৪১ রানের জুটি গড়েন রবিনসন ও জো রুট। কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই ধস নামে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে। ইয়ানসেনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন রুট (২৩)। অভিষিক্ত হ্যারি ব্রুক ১২ রান করে ধরা পড়েন স্লয়ার লেগে।
আনরিক নরকিয়ার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করে স্লিপে ক্যাচ দেন বেন স্টোকস। ফিফটি করে দলকে টানছিলেন যিনি, সেই পোপ কট বিহাইন্ড হয়ে যান কাগিসো রাবাদার বলে। এই পেসার দ্রুত বিদায় করেন ব্রডকেও। ইংল্যান্ডের জন্য স্বস্তি, আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা শেষ হয়ে যায় আগেভাগে। বেন ফোকস ১১ ও রবিনসন ৩ রানে অপরাজিত আছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৩৬.২ ওভারে ১১৮ (এলগার ১, এরউইয়া ০, পিটারসেন ১২, রিকেলটন ১১, জন্ডো ২৩, ভেরেইনার ০, মুল্ডার ৩, ইয়ানসেন ৩০, মহারাজ ১৮, রাবাদা ৭*, নরকিয়া ৭; অ্যান্ডারসন ৮-২-১৬-১, রবিনসন ১৪-৩-৪৯-৫, ব্রড ১২.২-১-৪১-৪, লিচ ২-১-১০-০)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৩.৪ ওভারে ১৫৪/৭ (লিস ১৩, ক্রলি ৫, পোপ ৬৭, রুট ২৩, ব্রুক ১২, স্টোকস ৬, ফোকস ১১*, ব্রড ৬, রবিনসন ৩*; রাবাদা ১১.৪-১-৭৮-২, ইয়ানসেন ১১-২-৩৪-৪, মুল্ডার ২-০-১১-০, নরকিয়া ৯-০-২৯-০)
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ