নানা জটিলতার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে ভারতীয় মাছের আমদানি। আমদানিকৃত মাছের উপরে নতুন করে আমদানি মূল্য নির্ধারণ ও শুল্ককর আরোপ করার কারণে গতকাল থেকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে সকল ধরনের মাছের আমদানি। আমদানিকারকদের অভিযোগ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দেড়গুণ মূল্য বেশি নির্ধারণ করে শুল্ক আদায় ও নতুন শর্ত আরোপ করায় বেনাপোল দিয়ে গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে মাছের আমদানি ৫০ শতাংশ কমে গেছে।
সম্প্রতি কাস্টমসের চাপিয়ে দেওয়ার কারণে গত ৯ আগস্ট শনিবার থেকে মাছ আমদানি বন্ধ রেখেছে আমদানিকারকরা। মাছ আমদানি বন্ধের ফলে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কাস্টমস। গত শনিবার থেকে বেনাপোল স্থলবন্দরে কোন মাছের গাড়ি বা ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৬ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের মাছ বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতো। সরকার এ খাত থেকে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আদায় করতো।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে সামুদ্রিক মাছ প্রতি কেজি ০.৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে শুল্কায়নের নির্দেশনা থাকলেও কাস্টমস পচনশীল মাছের শুল্কায়ন মূল্য পুনরায় নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ০.৭৫ সেন্ট দরে শুল্কায়ন করছেন। যার ফলে প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত ২০ টাকা রাজস্ব প্রদান করতে হচ্ছে। ফলে প্রতিটি পণ্য চালানে কয়েক লাখ টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব প্রদান করতে হচ্ছে। তবে মিঠা পানির মাছের ক্ষেত্রে আমদানিকৃত মাছের দাম বাড়ানো হয়নি। প্রতি কেজি মিঠা পানির মাছ ১.৫০ মার্কিন ডলার দরে যথারীতি শুল্কায়ন হচ্ছে।
তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নতুন করে শর্ত আরোপ করে বলেছে প্রতিটা আমদানিকৃত পণ্য চালানে ৮০ ভাগ মিঠাপানির সঙ্গে ২০ শতাংশ সামুদ্রিক মাছ আমদানি করতে হবে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ আমদানি কারকরা। তাদের দাবি কাস্টম কর্তৃপক্ষের বেধে দেয়া সিদ্ধান্তে মাছ আমদানি করা হলে তাদের প্রতি ট্রাকে মোটা অংকের অর্থ লোকসান দিতে হবে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার সাজ্জাদ ইন্টারপ্রাইজের মালিক নাসির উদ্দিন বলেন, অতিরিক্ত শুল্ক ও অযৌক্তিক শর্তের কারণে আমরা আত্মিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। পূর্বের তুলনায় আমদানি খরচ বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। কাস্টমস কর্তৃর্পক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না এলে আমরা বাধ্য হয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে মাছ আমদানি বন্ধ করে দেবো।
বেনাপোল কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মির্জা রাফেজা সুলতানা বলেন, মাছ আমদানিতে বাধা নেই মিঠাপানির মাছের গাড়িতে আমদানি করতে হবে আশি শতাংশ ও সামুদ্রিক মাছ আমদানি করতে হবে বিশ শতাংশ। মাছ আমদানিকারকরা যে ঘোষণা দিয়ে মাছ আনতে চাচ্ছে তা শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। গত ৬ মাসের পণ্য চালান তদারকিতে তথ্যের গড়মিল পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহে কিছু অনিয়ম হয়েছে। এ সমস্ত আমদানিকারককে জরিমানা আরোপ করা। বৈধ আমদানিকারকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
বেনাপোল কাস্টমসের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থ-বছরে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মাছ আমদানি হয় ৪৩ লাখ ৪৯৩ মেট্রিক টন। ২০২৪-২০২৫ অর্থ-বছরে মাছ আমদানি হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার ১১৮ মেট্রিক। ডলার সংকটের কারণে সময় মত এলসি না দিতে পারা এবং মাছের শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধির কারণে মাছ আমদানি কম হয়েছে বলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মনে করেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত