ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে যে রাসায়নিক গোডাউনটিতে গতকাল আগুন লাগে সেটি এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, বরং রাসায়নিকের আগুন থেকে টক্সিস গ্যাস বা বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়ে বাতাসে মিশে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বুধবার বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, এছাড়া আরও এক ধরনের গ্যাস বের হচ্ছে যা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ক্ষতিকর।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাইকে সতর্ক করছি। সবাই দূরত্ব বজায় রাখুন। যেহেতু কেমিক্যাল সেহেতু অনেক সময় লাগতে পারে। কারণ কেমিক্যালের বিষয়টি ডিফিকাল্ট। নীতিমালা অনুযায়ী গুদামজাত না হলে বড় বিস্ফোরণ বা বিক্রিয়া হতে পারে। যে কারণে এটা নিয়ন্ত্রণে সময় লাগবে।
কাজী নজমুজ্জামান বলেন, সকালে রাসায়নিক গুদামের মেইন গেট খুলে দেখেছি। প্রচণ্ড ধোঁয়া আছে ভেতরে। সাদা ধোঁয়ার জন্য ভেতরে ঢোকা যাচ্ছে না। অপারেশন কাজের জন্য এখনো নিরাপদ নয়। দীর্ঘ সময় লাগবে অপারেশন শেষ করতে হবে। আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে।
তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা জায়গাটি পরিদর্শন করেছে এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে উদ্ধার কাজ চালানো হবে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তাদের একটি হ্যাজমেট টিম দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এছাড়া অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে বুয়েটের একটি দলও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
প্রসঙ্গত, হ্যাজমেট টিম ফায়ার সার্ভিসের একটি বিশেষায়িত টিম, যারা রাসায়নিক বা বিপজ্জনক পদার্থের কারণে সংঘটিত অগ্নিকান্ডের ক্ষেত্রে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে থাকে।
এদিকে, ওই কেমিক্যাল গোডাউন ও সংলগ্ন প্রিন্টিং কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নিহত শ্রমিকের প্রত্যেক পরিবারকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে দুই লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে এবং আহত শ্রমিকদের চিকিৎসায় ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে।
বুধবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি তিনি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব লস্কার তাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে একটি বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এছাড়াও দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, আহত ও নিহতদের তালিকা প্রণয়ন, পরিদর্শন প্রক্রিয়ায় কোনো গাফিলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা, কারখানার ঝুঁকি নিরূপণ, ঝুঁকি নিরসনের সুপারিশ এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ