দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৮৮ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ফলে প্রথম ইনিংস শেষে লঙ্কানদের লিড ৯২ রানের। এই লিড নিয়ে তারা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে। দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে নাহিদ রানা ও শরিফুল ইসলামরা দ্রুত উইকেট নিলেও, স্বাগতিক টাইগাররা পরিপূর্ণ ফায়দা তুলতে পারেনি। দ্বিতীয় দিন শেষে লঙ্কানরা ১১৯ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়েছে, তবে প্রথম ইনিংসে পাওয়া ৯২ রান মিলিয়ে তাদের মোট লিড দাঁড়িয়েছে ২১১–তে।
প্রথম দিনের শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছিল বাংলাদেশ। তিন উইকেট হারিয়ে তারা তখনই ছিল ভীষণ চাপে। দ্বিতীয় দিনের সকালও খুব বেশি আশা জাগানিয়া হয়নি বাংলাদেশের জন্য। প্রথম ঘণ্টায়ই আউট হয়ে যান আগেরদিনের অপরাজিত ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয়। লাহিরু কুমারার অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের বল জয়ের ব্যাটে লেগে চলে যায় তৃতীয় স্লিপে। ৪৬ বলে ১২ রান করে ফেরেন জয়।
শাহাদাৎ হোসেন দীপু এরপর সঙ্গী হন তাইজুলের। মাঝে একবার ক্যাচ তুলেও বেঁচে যান তাইজুল। দীপুর হাত ধরে আসে বাউন্ডারি। তাইজুলও তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন দারুণভাবে। কিন্তু আবারও বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেন কুমারা। এবার তিনি তুলে নেন দীপুর উইকেট। কিছুটা বউন্স করা বল প্রথম স্লিপে ক্যাচ যায়। ২৬ বলে এর আগে ১৮ রান করেন দীপু। বাংলাদেশের জন্য এরপর বড় ভরসা হয়ে ছিলেন লিটন দাস। তাইজুলও টিকে ছিলেন ক্রিজে।
এই দু'জনের জুটিতে আবারও আশার আলো খুঁজে পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ফের কুমারা উইকেট তুলে নেন। এবার তিনি বোল্ড করেন লিটন দাসকে। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে পড়া বল ভেতরে ঢুকে স্ট্যাম্পে আঘাত করে। ৭৬ বলে তাইজুলের সঙ্গে ৪১ রানের জুটি ছিল লিটনের। লাঞ্চের ঠিক আগে লিটন আউট হন, তখন নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাইজুলের সঙ্গে তিনিই সেশনের বাকি সময়টা কাটিয়ে দেন। লাঞ্চের সময় তাইজুলের রান ছিল ৪২, ফিরে এসে একটি বাউন্ডারি ও সিঙ্গেলস নেন তিনি। প্রায় পুরোটা সময় ধরে লড়াই করা তাইজুল শেষ অবধি হাফ সেঞ্চুরি করার আগেই আউট হয়ে যান।
৮০ বলে ৬ চারে ৪৭ রান করার পর কাসুন রাজিথার অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৩৪ বলে ১১ রান করে রাজিথার বলেই আউট হয়ে যান মেহেদী হাসান মিরাজও।
ওখান থেকে বড় লিডের পথেই ছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ৩৫ বলে ৪০ রান করে সেটি হতে দেননি খালেদ ও শরিফুল। ২ ছক্কায় ২১ বলে ১৫ রান করেন শরিফুল এবং ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৮ বলে ২২ রান করেন খালেদ। লঙ্কানদের পক্ষে বিশ্ব ফার্নান্দো চার ও তিনটি করে উইকেট নেন কাসুন রাজিথা ও লাহিরু কুমারা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে সুবিধা করতে পারেনি শ্রীলঙ্কাও। অভিষিক্ত নাহিদ রানার হাত ধরে আসে প্রথম উইকেট। তার অফ স্টাম্প ছুয়া বল নিশান মাদুশকার ব্যাটে লেগে যায় উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে। ইনিংসের দ্বিতীয় ও ম্যাচে নিজের পঞ্চম উইকেটও নেন নাহিদ।
১০ বলে ৩ রান করা কুশল মেন্ডিসকে আউট করেন তিনি। দুর্দান্ত বল করতে থাকা নাহিদ এবার দেন বাউন্সার। সেটিকে হুক করতে দেরি করে ফেলেন মেন্ডিস। বল যায় লিটনের গ্লাভসে। এতে ২৩ বছর পর প্রথমবারের মতো অভিষেকে পাঁচ উইকেট পান বাংলাদেশি কোনো বোলার। সবশেষ ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন মানজারুল ইসলাম রানা।
এরপর দিমুথ করুণারত্নের সঙ্গী হয়ে জুটি বাধেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। তাদের থিতু হতে যাওয়া জুটি ভেঙে দেন তাইজুল ইসলাম। আগের বলেই ক্যাচ তুলেও বেঁচে গিয়েছিলেন ম্যাথিউস। কিন্তু পরের বলেই তার ব্যাট ছুয়ে লিটন দাসের গ্লাভসে যায় বল। ২৪ বলে ২২ রান করে ফেরেন ম্যাথিউস। তার সঙ্গে ২৮ রানের জুটি ভাঙে করুণারত্নের।
এক ওভার পর দিনেশ চান্দিমালকে আউট করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৬৪ রানে চার উইকেট হারিয়ে বেশ চাপেই পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এরপর ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে করুণারত্নের জুটিতে আবারও ম্যাচে ফিরে আসার চেষ্টা করে শ্রীলঙ্কা। এই জুটিতেই দিনশেষ হয়ে যাবে এমন মনে হচ্ছিল।
কিন্তু এবার বাংলাদেশের জন্য ত্রাতা হন শরিফুল ইসলাম। তার বাউন্সারে চমকে যাওয়া করুণারত্নে ক্যাচ দেন ফাইন লেগে। ৭ চার ও ১ ছক্কায় ১০১ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। তার বিদায়ের পর আর কোনো উইকেট তুলে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ৩৬ বলে ১৯ রান করে ধনঞ্জয়া ও ২ বলে শূন্য রানে অপরাজিত আছেন বিশ্ব ফার্নান্দো।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ