ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল ইংল্যান্ড। দক্ষিন আফ্রিকার বিরুদ্ধে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে রবিবার (৭ সেপ্টেম্বত) ৩৪২ রানে জিতেছে ইংল্যান্ড। এই সংস্করণে আগের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ভারতের। ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কাকে দেশের মাটিতে ৩১৭ রানে হারিয়েছিল তারা।
৭২ রান ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। ১৯৯৩ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৯ এখনও তাদের সর্বনিম্ন। পেশাদার ক্রিকেটে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে ৮২ বলে তিন ছক্কা ও ১৩ চারে ১১০ রান করেন বেথেল। ক্যারিয়ারের ১৯তম মেঞ্চুরি ও ইংল্যান্ডে দশম সেঞ্চুরিতে রুট ৯৬ বলে ছয় চারে করেন ১০০ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার কেউ বিশের ঘর ছাড়াতে পারেননি। তাদের কম রানে থামাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা আর্চারের। ১৮ রানে ৪ উইকেট নেন এই গতিময় পেসার। লেগ স্পিনার রাশিদ ৩ উইকেট নেন ১৩ রানে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ড প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় তৃতীয় ওভারে, বেন ডাকেটের ব্যাটে। নান্দ্রে বার্গারের ওই ওভারে আরও দুটি চার মারেন জেমি স্মিথ। সেই যে শুরু, এরপর কেবল সামনেই ছুটতে থাকে ইংলিশরা। জমে ওঠা ডাকেট ও স্মিথের ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে নবম ওভারে। কর্বিন বশের বলে মিডউইকেটে ধরা পড়েন ৬ চারে ৩১ রান করা ডাকেট।
বশের পরের ওভারে স্মিথকেও বিদায় করার সুযোগ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু কাভারে সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি ম্যাথু ব্রিটস্কি। ২৩ রানে জীবন পেয়ে ৩৮ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন স্মিথ। সিরিজে এটি তার দ্বিতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস।
সপ্তদশ ওভারে স্মিথের প্রতিরোধ ভাঙেন কেশাভ মহারাজ। ১ ছক্কা ও ৯ চারে ৪৮ বলে ৬২ রান করে ফেরেন ইংলিশ ওপেনার। ভাঙে রুটের সঙ্গে তার ৫৮ রানের জুটি। এরপর শুরু রুট আর বেথেলের চোখধাঁধানো জুটির পথচলা। যেখানে একশর বেশি রান করে অগ্রণী ছিলেন বেথেলই।
শুরুতে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান বাড়াতে থাকেন ২১ বছর বয়সী বেথেল। আরেকপ্রান্তে প্রায় একই গতিতে রান আসে অভিজ্ঞ রুটের ব্যাটেও। ৪৮ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন বেথেল, রুট পঞ্চাশে পা রাখেন ৫৬ বলে। ফিফটি আগে ৪৫ রানে জীবন পান বেথেল। ভিয়ান মুল্ডারের বলে তরুণ ব্যাটসম্যানের ক্যাচ নিতে পারেননি বার্গার।
পঞ্চাশ ছোঁয়ার পরের বলেই ডেওয়াল্ড ব্রেভিসকে ছক্কায় ওড়ান তিনি। এরপর অভিষিক্ত কোডি ইউসুফকে মারেন টানা দুই চার। ব্রেভিসের পরের ওভারে আরেকটি ছক্কা হাঁকান বেথেল। ফিফটির পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন তিনি। ৪০তম ওভারে বার্গারকে চার মেরে কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কের ঠিকানায় পৌঁছে যান বেথেল ৭৬ বলে। পঞ্চাশ থেকে একশ স্পর্শ করতে তার লাগে কেবল ২৮ বল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো বটেই, পেশাদার ক্রিকেটেই এই প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন তিনি। সেঞ্চুরি ছোঁয়ার ওভারে বার্গারকে আরও দুটি চার মারেন বেথেল। কিন্তু এরপর আর টিকতে পারেননি তিনি। পরে ওভারে মহারাজের বলে স্টাম্পড হয়ে শেষ হয় তার চমৎকার ইনিংসের পথচলা।
বেথেলের বিদায়ে ইতি ঘটে ১৪৪ বল স্থায়ী ১৮২ রানের জুটির। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে এটি ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ জুটি। আগের সেরা ছিল পল কলিংউড ও ওয়াইস শাহর ২০০৯ সালে গড়া ১৬৩ রানের যুগলবন্দি।
বেথেল ফেরার এক বল পর রান আউটে কাটা পড়েন হ্যারি ব্রুক। তাতে কী, আরেক প্রান্তে নেমেই ঝড় তোলেন জস বাটলার। মুখোমুখি প্রথম দুই বলেই মুল্ডারকে চার মারেন তিনি। কয়েক ওভার পর সেঞ্চুরির উষ্ণ ছোঁয়া পান রুটও। ঠিক ১০০ রানেই বিদায় নেন তিনি বশের বলে। ভাঙে ৩৮ বলে ৬৯ রানের বিধ্বংসী জুটি। খুনে ব্যাটিংয়ে ২৭ বলে ফিফটি করেন বাটলার। ১ ছক্কা ও ৮টি চারে ৩২ বলে ৬২ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ১ ছক্কা ও ২টি চারে ৮ বলে ১৯ রানের ক্যামিও খেলেন উইল জ্যাকস।
রান তাড়ায় আর্চারের করা ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই এইডেন মার্করামকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পরের ওভারে মুল্ডারকে বিদায় করেন ব্রাইডন কার্স। দুই ব্যাটসম্যানের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি। তৃতীয় ওভারে রায়ান রিকেলটন ও পরের ওভারে ম্যাথু ব্রিটস্কির উইকেট নেন আর্চার। ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ ওয়ানডেতে পঞ্চাশ ছোঁয়ার অনন্য কীর্তির পর এবার ৪ রানেই থামেন ব্রিটস্কি। ৭ রানে ৪ উইকেট হারানোর ধাক্কা আর সামাল দিতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
২৪ রানে ৬ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা ২৫ রানের ছোট্ট একটা জুটি পায় কর্বিন বশ ও মহারাজের ব্যাটে। মহারাজকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন রাশিদ। ইউসুফের পর বশকে থামিয়ে তিনিই দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৪১৪/৫ (স্মিথ ৬২, ডাকেট ৩১, রুট ১০০, বেথেল ১১০, ব্রুক ৩, বাটলার ৬২, জ্যাকস ১৯; বার্গার ১০-০-৯৫-০, ইউসুফ ১০-০-৮০-০, বশ ১০-০-৭৯-২, মুল্ডার ৮-০-৬৪-০, মহারাজ ৮-০-৬১-২, ব্রেভিস ৪-০-২৮-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০.৫ ওভারে ৭২ (মার্করাম ০, রিকেলটন ১, মুল্ডার ০, ব্রিটস্কি ৪, স্টাবস ১০, ব্রেভিস ৬, বশ ২০, মহারাজ ১৭, ইউসুফ ৫, বার্গার ২*, বাভুমা আহত অনুপস্থিত; আর্চার ৬-৩-৯-৪, কার্স ৬-১-৩৩-২, ওভারটন ২-০-৮-০, রাশিদ ৩.৫-০-১৩-৩)
ফল: ইংল্যান্ড ৩৪২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জফ্রা আর্চার
সিরিজ: দক্ষিণ আফ্রিকা ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা সিরিজ: কেশাভ মহারাজ ও জো রুট
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ