রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শীর্ষ ধনী নারীদের কার কত সম্পদ

তানভীর আহমেদ

শীর্ষ ধনী নারীদের কার কত সম্পদ

ফ্রাঁসোয়াস বেতেনকোর্ত মেয়ার

৮৩. বিলিয়ন

বিশ্বের শীর্ষ ধনী নারী ফ্রাঁসোয়াস বেতেনকোর্ত মেয়ার। ফ্রান্সের নারী শিল্পপতির সম্পদের পরিমাণ ৮৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বেতেনকোর্ত পরিবারের সদস্য বলেই তাঁর সম্পদের পরিমাণ আকাশ ছুঁয়েছে এমনটা বললে ভুল হবে না। তাই বলে তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিভার কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাঁর দাদা বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড লরিয়েল প্রতিষ্ঠা করেন। লরিয়েল বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্য তৈরি করে থাকে। এই ফ্যাশন ব্র্যান্ডের শেয়ারের মালিকানা তাঁর দাদার কাছ থেকে আসে তাঁর মায়ের কাছে। তাঁর পরিবার এই কোম্পানির ৩৩ শতাংশের মালিকানা পায়। তাঁর মা ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ৯৪ বছর বয়সে মারা যান। বেতেনকোর্ত মেয়ার তাঁর মায়ের কাছ থেকে বিপুল সম্পদের মালিকানা পান।

 

জুলিয়া কোচ

৫৯. বিলিয়ন

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কোচ ইন্ডাস্ট্রিজের ৪২ শতাংশ শেয়ারের মালিক জুলিয়া ও তাঁর তিন সন্তান। কোচ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসা সার, তেল, পেট্রোলিয়াম, কাগজসহ বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে আছে। কোচ ইন্ডাস্ট্রিজকে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বলে আখ্যায়িত করে। এই সাম্রাজ্য বিস্তার করেছেন জুলিয়া কোচের স্বামী ডেভিড কোচ। স্বামীর মৃত্যুর পর শীর্ষ ধনী নারীর তালিকায় উঠে আসেন জুলিয়া কোচ। আশির দশকে নিউইয়র্ক সিটিতে আসেন তিনি। সে সময় ভেবেছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ক্যারিয়ার গড়বেন। তখন ফ্যাশন ডিজাইনার অ্যাডলফোর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯১ সালে ডেভিড কোচের সঙ্গে দেখা হয়। ১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন। ২০১৯ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর বিপুল সম্পদের মালিক হন জুলিয়া কোচ। এখন তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৫৯.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

এলিস ওয়ালটন

৫৯. বিলিয়ন

এলিস ওয়ালটন ব্যবসায়ী হিসেবে দারুণ সফল। ক্রিস্টাল ব্রিজেস মিউজিয়াম অব আমেরিকান আর্টের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন। বয়স ৭৩। এখনো তাঁর ব্যবসায়িক দক্ষতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে সাহস করবে না। ওয়ালমার্টের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটনের একমাত্র কন্যা তিনি। তাঁর বাবার মৃত্যুর পর তিনি ওয়ালমার্টের ১৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন। ওয়ালমার্ট ফ্যামিলি হোল্ডিংস ট্রাস্ট অ্যান্ড ওয়ালটন এন্টারপ্রাইজের নামে ছিল বিপুল সম্পদ। ওয়ালমার্টের প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের শেয়ারের মালিক হয়ে যান এলিস ওয়ালটন। ওয়ালমার্ট থেকেই তাঁর আয়ের বড় অংশ আসে। তাঁর রয়েছে সুপার মার্কেটের বিশাল নেটওয়ার্ক। বড় সুপার মার্কেট, সস্তায় পণ্য বিক্রি করে এমন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বড় মুদির দোকান- সব ধরনের ব্যবসাই রয়েছে তাঁর। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ালমার্টের ব্যবসা দেখাশোনা করে এলিস ওয়ালটনের সম্পত্তির পরিমাণ ৫৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ক্যামেরার সামনে খুব একটা ধরা দেন না। একটু আড়ালে থাকতেই তিনি পছন্দ করেন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী নারী।

 

জ্যাকুলিন মার্স

৩৯. বিলিয়ন

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কনফেকশনার মার্সের এক-তৃতীয়াংশের মালিক তিনি। তাঁর দাদা/নানা ফ্র্যাঙ্ক ১৯১১ সালে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরিবারের এই ব্যবসায় তিনি কাজ করেছেন প্রায় ২০ বছর। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি বোর্ডের সদস্যও ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে পোষা প্রাণীর জন্য যারা খাবার তৈরি করে তাদের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ এই মার্স কোম্পানি। মার্স পরিবারকে ধনী পরিবার হিসেবেই শুধু নয়, অনেকেই চেনে ‘ক্যান্ডি ফ্যামিলি’ বলে। ‘মিল্কি ওয়ে’, ‘এম অ্যান্ড এম’ অথবা ‘স্নিকার বার’ এসব চকলেটের বেশির ভাগই মার্স পরিবারের মালিকানায়। মার্সের হয়ে জ্যাকুলিন মার্স কাজ করছেন। তাঁর অর্থের পরিমাণ ৩৯.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার দুই ভাইকে নিয়ে চলছে মার্স কোম্পানি। একুশ শতকে এসে মার্সের ব্যবসা হঠাৎ করেই ব্যাপক লাভের মুখ দেখে। মার্স ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চকলেট পণ্য বিক্রি করে। এ ব্যবসায়িক সফলতার পেছনে জ্যাকুলিন মার্স কঠোর শ্রম দিয়েছেন।

 

মিরিয়াম এডেলসন

৩৪. বিলিয়ন

৩৪.৩ বিলিয়ন ডলার নিয়ে শীর্ষ নারী ধনকুবেরের তালিকায় রয়েছেন মিরিয়াম এডেলসন। তাঁকে দুটি পরিচয়ে চেনে গোটা বিশ্ব। প্রথমত তিনি ইসরায়েলের বিখ্যাত সংবাদপত্র ইসরায়েল হায়োমের প্রকাশক। দ্বিতীয়ত তিনি বিশ্বখ্যাত লাস ভেগাস স্যান্ডসের বড় অংশের মালিক এখন। তাঁর স্বামী ছিলেন বিশ্বের বিখ্যাত ধনী ব্যক্তি শেলডন এডেলসন। তিনি লাস ভেগাস ক্যাসিনো মুঘল হিসেবে পরিচিত ছিলেন। শেলডন এডেলসন ক্যাসিনো তথা জুয়ার ব্যবসার মাধ্যমে অর্জন করেন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। স্বামীর উপার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের দেখভালের দায়িত্ব পান মিরিয়াম। নিজে পেশায় একজন চিকিৎসক।

 

ম্যাকেনজি স্কট

২৮. বিলিয়ন

বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে বিপুল সম্পদের মালিকানা পান ম্যাকেনজি স্কট। ম্যাকেনজি বিয়ে করেছিলেন ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোসকে। সংসার করেছেন ২৫ বছর। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিয়ে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন বেজোস। এ নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে নানা ধরনের খবর বেরোয়। জেফ বেজোসকে ডিভোর্স সেটেলমেন্টের জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা দিতে হয় সে সময়। আপসরফা হিসেবে ম্যাকেনজি স্কট অ্যামাজনের ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন। বিশাল অঙ্কের টাকা পেলেও ম্যাকেনজি তখন ঘোষণা দেন তিনি তাঁর সম্পদের অর্ধেকই দান করে দেবেন। বর্তমানে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ২৮.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিয়ে বিচ্ছেদের পর তিনি তাঁর নামের শেষে ‘বেজোস’-এর বদলে ‘স্কট’ লিখছেন।

 

জিনা রাইনহার্ট

২৮. বিলিয়ন

অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ধনী জিনা রাইনহার্ট। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ২৮.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বিশ্বখ্যাত হ্যানকক প্রসপেক্টিং গ্রুপের মালিক ও চেয়ারম্যান। জিনা রাইনহার্ট ১৯৫৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহন করেন। ১৯৯২ সালে জিনা তাঁর পিতা লৌহ খনির ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ল্যাং হ্যানককের কাছ থেকে ব্যবসায়িক দায়িত্ব বুঝে নেন। পরিবারের ট্রাস্ট তহবিল নিয়ে তাঁর সঙ্গে ছেলে জন হ্যানকক ও মেয়ে বিয়াংকা রাইনহার্টের দীর্ঘ আইনি লড়াই চলে। তবে এর মীমাংসা হয়েছে এবং দুই সন্তান ২৯২ কোটি ডলারের ট্রাস্ট তহবিলের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছেন। তাঁর সব থেকে বেশি আয় হয় রিনো টিন্টের সঙ্গে যৌথ মালিকানার প্রতিষ্ঠান হোপ ডাউন্স থেকে। এ ছাড়া তাঁর আকরিক খনির ব্যবসা রয়েছে। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম গবাদি পশুর উৎপাদক প্রতিষ্ঠানটিও তাঁর।

 

সুজান ক্লাটেন

২৬. বিলিয়ন

এখন সুজান ক্লাটেনের বয়স ৬০ বছর। সম্পদ এসে ঠেকেছে ২৬.৭ বিয়িলন মার্কিন ডলারে। কয়েক বছর ধরে তাঁর সম্পদ কমছে। জার্মান এই নারীর রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যালস ও গাড়ির ব্যবসা।

রাসায়নিক কোম্পানি আলটানা এজির ৫০% তিনি পেয়েছেন উত্তরাধিকার সূত্রে, তার পিতা-মাতা মারা যাওয়ার পর। বিএমডব্লিউ গাড়ির ৫০ শতাংশেরও মালিকানা তাঁর ও তাঁর এক ভাইয়ের।

পরে আটলান্টার একক মালিক হন তিনি। আরও কিছু কোম্পানিরও শেয়ার কিনে নেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে বায়ু শক্তি থেকে শুরু করে গ্রাফাইট উৎপাদনকারী কোম্পানিও রয়েছে। তার অর্থ আয়ের বড় মাধ্যম ছিল আটলান্টা ফার্মাসিউটিক্যালস। তাঁর হাত ধরে কোম্পানিটি প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। কিন্তু ২০০৬ সালে কোম্পানির সব ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসা বিক্রি করে ২০০৯ সালে সুজান আটলান্টার অন্যসব শেয়ার কিনে নেন। বিএমডব্লিউ দিয়ে তাঁর ব্যবসায়িক ভিত্তি শক্তিশালী হয়।

 

আইরিস ফন্টবোনা

২৪. বিলিয়ন

স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রচুর সম্পদের মালিক হন আইরিস ফন্টবোনা। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ২৪.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইরিস ফন্টবোনার স্বামী ছিলেন প্রয়াত আন্ড্রিনিকো লুসিক। ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে এক সময় পরাজিত হন আন্ড্রিনিকো লুসিক। তাঁর মৃত্যুর পর আন্ড্রিনিকো লুসিকের খনি এবং পানীয় ব্যবসার দায়িত্ব নেন আইরিস ফন্টবোনা ও তাঁদের তিন পুত্র। তাঁরা সবাই মিলে এখন এন্টোফাগস্টা পিএলসি নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। এ প্রতিষ্ঠানের চিলিতে কপার খনি ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ রয়েছে। তবে সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বেশি আগ্রহ আইরিস ফন্টবোনার।

সর্বশেষ খবর