যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়া কথিত ব্যক্তির বিমার পাঁচ মিলিয়ন ডলারের লোভ দেখিয়ে অভিনব উপায়ে প্রতারণার ঘটনায় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের আরও এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট থানা।
শুক্রবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার ভুলতা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পান্না বেগম (৪১) নামে ওই প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার করার সময় পান্না বেগমে কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আদায়কৃত নগদ ৬ লাখ ১ হাজার ২৫০ টাকা, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৬টি অ্যাকাউন্টের চেকের পাতা, ৩টি ভিসা কার্ড, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪টি মোবাইল ফোন, ৮টি সিমকার্ড, পান্না ইন্টারন্যাশনাল নামে ভুয়া এজেন্সির ৮টি ভিজিটিং কার্ড, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১টি রাবার স্ট্যাম্প ও ১টি সিল প্যাড এবং ১টি অফিসিয়াল হাত ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।
নিউমার্কেট থানা সূত্র জানা যায়, পাঁচ মিলিয়ন ডলারের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ভুক্তভোগী মো. নুরুজ্জামান বাদী হয়ে গত ১২ অক্টোবর নিউমার্কেট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে আন্না হ্যারিসন ‘Anna Harrison’ নামে ফেসবুক আইডির সঙ্গে বাদী মো. নুরুজ্জামানের যোগাযোগ হয়। সে বাদীকে জানায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ বেলটন নামে এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত থাকা অবস্থায় মারা যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের এলাইনস ব্যাংকে বেলটনের পাঁচ মিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে। সে বাদীকে উক্ত মৃত ব্যক্তির আত্মীয় পরিচয় দেওয়ার জন্য বলে এবং এলাইনস ব্যাংক ম্যানেজারের একটি হোয়াটস অ্যাপ নম্বর দেয়। আন্না হ্যারিসন তার বানানো ম্যাসেজ সেই ব্যাংক ম্যানেজারকে দিতে বলে। তারপর বাদীকে সে তার কথিত আইন উপদেষ্টার নম্বর দিলে বাদী তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। কথিত আইন উপদেষ্টা বিমার টাকা পাওয়ার জন্য বাদীকে ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার পাঠাতে বলে। পরবর্তী সময়ে আন্না হ্যারিসন ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধের একটি পেমেন্ট স্লিপ বাদীকে দেয়।
এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, পরবর্তী সময়ে কথিত ব্যাংক ম্যানেজার বিমার পাঁচ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য একটি শিপিং কোম্পানির কাছে ২টি লাগেজ দিয়েছে বলে বাদীকে জানায় এবং প্রমাণ স্বরূপ একটি ভিডিও দেখায়। ব্যাংক ম্যানেজার বিমা খরচ এবং ডেলিভারি খরচ বাবদ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে বাদী তার কথা মতো ডাচ বাংলা ব্যাংকের উত্তরা শাখার একটি অ্যাকাউন্টে তা দেয়। এরপর গত ৩ অক্টোবর সকাল ৮টায় একটি নম্বর থেকে অজ্ঞাতনামা একজন ফোন করে নিজেকে ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেয় এবং বাদীর দু'টি লাগেজ কাস্টমসে আটকে আছে বলে জানায়। লাগেজ দু'টি ছাড়াতে চার লাখ সাত হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে বাদী তাদের কথা মতো ইসলামী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে তা দেয়। এরপর বাদী কথিত কাস্টমস কর্মকর্তার কথা মতো আয়কর ও ট্যাক্স বাবদ আরও ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ইসলামী ব্যাংকের আরেকটি অ্যাকাউন্টে দেয়। এসব টাকা দেওয়ার পরও তারা বাদীর কাছে আরও ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চায়। এভাবে বার বার টাকা চাওয়ায় বাদীর সন্দেহ হলে তিনি বিমানবন্দর কাস্টমসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ। এভাবে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি বাদীর কাছ থেকে সব মিলিয়ে ১৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়।
থানা সূত্রে জানা যায়, তদন্তাধীন এ মামলায় তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পান্না বেগমকে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার ভুলতা বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতার পান্না বেগম সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য হিসেবে মূলত 'Anna Harrison' নামে ফেইক ফেসবুক আইডিটি পরিচালনা করত এবং নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে ভিকটিমদেরকে ফোন করে তাদের কাছে টাকা চাইত। এভাবে প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে একই কৌশলে অসংখ্য মানুষকে ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের নামে নিউমার্কেট থানায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর সকালে রাজধানীর বনশ্রীর মডেল এজেন্সি নামে একটি অফিস থেকে এ প্রতারক চক্রের সদস্য মো. আজিজ মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত