গেলো কয়েকদিনের উদ্ভুত পরিস্থিতির পর অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে অবস্থিত দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের মোকামের সার্বিক পরিস্থিতি। তবে সরবরাহ ঘাটতির কারণে সব জাতের ধানের দাম চড়া। যার প্রভাব পড়ছে চালের বাজারেও। মূলত ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত টাকা তুলতে না পারায় ব্যবসায়ীরা মোকামের জন্য চাহিদা মতো ধান কিনে আনতে পারছেন না। এছাড়া একই সংকটে চালকল মালিকরাও মোকাম থেকে পর্যাপ্ত ধান কিনতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর তীরে ধানের হাট বসছে। যা দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে ধানের মোকাম হিসেবে পরিচিত। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে মোকামে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণাসহ অন্তত ৭ জেলার ব্যবসায়ীরা। আর এই মোকামের ধান যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় আড়াইশ চালকলে। মূলত মোকামে বিআর-২৮, বিআর-২৯ এবং মোটা জাতের ধান পাওয়া যায়। ধানের মৌসুমে প্রতিদিন ৭-৮ কোটি টাকার ধান কেনাবেচা হয় মোকামে।
বর্তমানে মোকামে দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার মণ ধান আসছে। তবে চাহিদা মতো যোগান না থাকায় ধানের বাজারদর ঊর্ধ্বমুখী। আগস্ট মাসের প্রায় প্রতিদিনই ধানের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীয়রা। বর্তমানে মোকামে বিআর-২৮ জাতের ধান প্রতি মণ কেনাবেচা হচ্ছে ১৪৫০ টাকা, বিআর-২৯ ধান ১৩৪০ থেকে ১৩৬০ টাকা এবং মোটা ধান কেনাবেচা হচ্ছে ১১৩০ থেকে ১১৪০ টাকায়। ধানের এই দর স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৭০ টাকা বেশি বলে জানিয়েছেন চালকল মালিকরা।
এদিকে, ধানের দাম বাড়ায় চালের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে আশুগঞ্জ মোকাম থেকে প্রতি বস্তা (৫০ কোজি) বিআর-২৮ চাল ২৮০০ টাকা এবং বিআর-২৯ জাতের চাল বেচাকেনা হচ্ছে ২৭০০ টাকায়-যা গত ১০ দিনের তুলনায় অন্তত ১০০ টাকা বেশি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চালকলগুলো থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০কোটি টাকার চাল বাজারজাত করা হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে।
আশুগঞ্জ মোকামের ব্যবসায়ী মোবারক মিয়া জানান, তিনি গত ৭-৮ বছর ধরে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে এনে আশুগঞ্জ মোকামে বিক্রি করছেন। সম্প্রতি দেশের উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত টাকা তুলতে পারছেন না। এর ফলে টাকার অভাবে মোকামের জন্য চাহিদা মতো ধানও কিনে আনতে পারছেন না। এতে করে সংকটের কারণে ধানের বাজার দর বাড়ছে বলে জানান তিনি।
চাল ব্যবসায়ী জসিম মিয়া জানান, আশুগঞ্জের ব্যাংকগুলোতে লেনদেন এখনও স্বাভাবিক হয়নি। যার ফলে ব্যাংকে গিয়ে ব্যবসায়ীরা চাহিদা মতো টাকা তুলতে পারছেন না। ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট চলছে বলে গ্রাহকদের জানানো হচ্ছে। এর ফলে ১০-২০ হাজার টাকার বেশি কোনো গ্রাহককে দেওয়া হচ্ছে না।
আশুঞ্জের রজনীগ্ধা এগ্রোফুডের স্বত্বাধিকারী মো. হাসান ইমরান বলেন, আমরা চালকলগুলোর জন্য পর্যাপ্ত ধান পাচ্ছিনা মোকামে। ধানের ব্যবসায়ীরা যেমন টাকার জন্য ধান কিনে আনতে পারছেন না, তেমনি আমরাও ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পারার কারণে ধান কিনতে পারছি না।
আশুগঞ্জ উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ব্যাংকিং কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলে ধান-চালের বাজারও স্বাভাবিক হবে না। বর্তমানে সংকটের কারণে ধানের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এতে করে চালের দামও বাড়ছে। তবে শীঘ্রই যদি ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট দূর হয়-তাহলে ধান-চালের বাজার আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যাংকার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কাইয়ূম খাদেম বলেন, দেশের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোতে স্বাভাবিক লেনদেন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গ্রাহকরা আতংকে ব্যাংক থেকে প্রচুর টাকা উত্তোলন করছেন। উত্তোলনের বিপরীতে ব্যাংকে টাকা জমা না হওয়ায় নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। তবে আমরা কোনো গ্রাহককেই ফিরিয়ে দিচ্ছি না, সবাইকেই কম-বেশি করে টাকা দিচ্ছি।
বিডি প্রতিদিন/এএ