কথা ছিল এ মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় আসবেন ঢালিউডের বিউটি কুইন খ্যাত জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা। সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু বাদ সাধল অসুস্থতা। পায়ের সমস্যাটা আবার বেড়েছে। ২০১৯ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বাসার কাছে বরফে পিছলে পড়ে হাঁটুতে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় এলে তাঁর বারিধারার বাসায় গিয়ে দেখা যায় তিনি খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। জানালেন দুর্ঘটনার কথা। এরপর ওই বছরের মার্চে ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯৯ সাল থেকেই সেখানে স্থায়ীভাবে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার পর পায়ের অবস্থার আরও অবনতি হলে একপর্যায়ে অস্ত্রোপচারও করাতে হয়। এরপর ভালো-মন্দ মিলিয়ে চলছে তাঁর জীবন। গত সপ্তাহে একাই দেশে আসেন তাঁর স্বামী চলচ্চিত্র প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক। মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, হ্যাঁ, শাবানার আমার সঙ্গেই আসার কথা ছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্য, অসুস্থতা আবার বেড়েছে। তাই তিনি আসতে পারেননি। তিনি এখন ঘরের হালকা-পাতলা কাজ করেন আর ধর্ম-কর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। বাসা থেকে খুব একটা বেরও হন না। এদিকে ওয়াহিদ সাদিক জানান, তিনি নারী জাগরণের অগ্রদূত ‘বেগম রোকেয়া’র জীবনী নিয়ে একটি ছবি নির্মাণ করতে চান। নব্বই দশকের প্রথমদিকে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সুভাষ দত্ত শাবানাকে বেগম রোকেয়ার চরিত্রে কাস্ট করে ছবিটি নির্মাণ করতে যাচ্ছিলেন। এর মহরত এবং কিছুটা শুটিংও হয়েছিল। পরে নানা কারণে ছবিটির নির্মাণকাজ আর শেষ করতে পারেননি সুভাষ দত্ত। এবার এ ছবিটি নতুন করে নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন জানিয়ে ওয়াহিদ সাদিক বলেন, শাবানা তো অভিনয় থেকে বিদায় নিয়েছেন, এমনকি ছবি প্রযোজনায়ও আর ফিরবেন না, তাই তাঁকে আর বেগম রোকেয়ার চরিত্রে অভিনয় করাতে পারছি না। এখন এ চরিত্রে কাকে নেব সেটাই চিন্তা করছি। দেশে তেমন কাউকে এ চরিত্রের জন্য উপযুক্ত মনে হচ্ছে না। তাই বলিউড থেকে কাউকে নেওয়া যায় কি না ভাবছি। তিনি বেগম রোকেয়ার জীবনের নানা দিক জানতে শিগগিরই এ মহীয়সী নারীর গ্রামের বাড়ি রংপুর যাবেন বলে জানালেন। গত বছরের ৭ জানুয়ারি শাবানার স্বামী ওয়াহিদ সাদিকের মাধ্যমে অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক শাবানা ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি আবার চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসছেন। কলকাতার সঙ্গে যৌথ আয়োজনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েও এগিয়ে যাচ্ছিলেন ওয়াহিদ সাদিক। কিন্তু হঠাৎ করে শাবানা চলচ্চিত্র থেকে নিজের অবসরের ঘোষণা দিলে থমকে যায় সেই ছবি নির্মাণ। ওয়াহিদ সাদিক হতাশ হয়ে ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রে।
ওয়াহিদ সাদিক বলেন, ‘শাবানা ১৯৯৭ সালেই অভিনয় থেকে অবসর নিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হয়েছেন। এরপর মাঝেমধ্যে দেশে এলেও বহু প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও আর অভিনয়ে ফেরেননি। তবে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার চলচ্চিত্র প্রযোজনার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু চলচ্চিত্রের ব্যবসা তখন একেবারেই অনুকূলে না থাকায় শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এর আগে শাবানা অনেকবারই গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, চলচ্চিত্রের কল্যাণেই আজ তাঁর নাম, খ্যাতি, যশ হয়েছে। তাই অভিনয় থেকে বিদায় নিলেও চলচ্চিত্র প্রযোজনা করবেন। চলচ্চিত্রের প্রতি সেই শ্রদ্ধাবোধ থেকে গত বছর তিনি আবার চলচ্চিত্র প্রযোজনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু এ সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে প্রচুর মানুষ শাবানার সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে তাদের মত জানান। এর মধ্যে অনেকেই শাবানাকে বলছেন, তিনি যেহেতু দীর্ঘদন ধরে চলচ্চিত্র থেকে দূরে এবং ধর্ম-কর্ম ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত আছেন তাই চলচ্চিত্রে তাঁর আর না ফেরাই উচিত। শাবানা তাঁর ভক্ত অনুরাগীদের মতামতকে সম্মান জানিয়ে ও নিজের ইচ্ছায় চলচ্চিত্র থেকে অবসরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। শাবানাও জানিয়েছেন তাঁর ও তাঁর স্বামীর চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা এস এস [শাবানা-সাদিক] প্রোডাকশন আর খোলা হবে না এবং এ সংস্থা থেকে আর কোনো চলচ্চিত্রও নির্মাণ হবে না। বরং তাঁর স্বামী ওয়াহিদ সাদিকের নামে ডব্লিউ এস [ওয়াহিদ সাদিক] প্রোডাকশন চালু করে তা থেকেই তাঁর স্বামী চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারেন। এদিকে ওয়াহিদ সাদিক আবারও বলেন, দেশীয় চলচ্চিত্রে প্রাণ ফেরাতে আবার নির্মাণে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী অভিনেত্রী শাবানা ১৯৯৭ সালের দিকে চলচ্চিত্র জগৎ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হই। এরপর প্রায় প্রতিবছরই দেশে এলেও চলচ্চিত্রের ব্যবসা অনুকূলে না থাকায় আর নির্মাণে ফিরতে পারিনি। এবার আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, সব চূড়ান্ত করতে হয়ত কিছুটা দেরি হতে পারে; কিন্তু ছবিটি নির্মাণ হবেই। ওয়াহিদ সাদিক বলেন, শুধু এ ছবিটি নয়, আরও কয়েকটি প্রজেক্ট নিয়ে আসছি। তাঁর কথায়, ছবির সবকিছু চূড়ান্ত করে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকায় ছবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেব। তিনি আরও জানান, যদি ব্যবসায়িক আনুকূল্য পান তাহলে তাঁর নতুন চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ‘ডব্লিউ এস প্রোডাকশন’ নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যাবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন দেশে সিনেমা হল ও সিনেপ্লেক্সের সংখ্যা বাড়ানো। কারণ দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিনেমা হল না থাকায় চলচ্চিত্র নির্মাণে লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত আনার নিশ্চয়তার অভাবে নির্মাতারা এখন চলচ্চিত্র নির্মাণে সাহস পান না। তিনি সিনেমা হল বৃদ্ধির জন্য সরকার ও সিনেমা হল মালিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। এর আগে শাবানা ও ওয়াহিদ সাদিক তাদের চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা এস এস প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৯ সালে। ওই বছর প্রথম ছবি নির্মাণ করেন ‘মাটির ঘর’। ছবিটি পরিচালনা করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক প্রয়াত আজিজুর রহমান। এতে প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেন শাবানা ও রাজ্জাক। এরপর ছুটির ঘণ্টা, আমি সেই মেয়ে, স্বামী কেন আসামীসহ স্থানীয় ও যৌথ প্রযোজনায় প্রায় দুই ডজন ছবি নির্মাণ করা হয় এই প্রোডকাশন হাউস থেকে এবং সবই বাম্পার হিট ব্যবসা করে। এস এস প্রোডকশন প্রযোজিত সর্বশেষ ছবি ‘স্বামী কেন আসামী’। এটি মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। শাবানা ও ওয়াহিদ সাদিকের ছবির মাধ্যমেই ঢাকার ছবিতে অভিনয় করেন বলিউড অভিনেত্রী জয়া প্রদা, অভিনেতা চাঙ্কি পান্ডে, কলকাতার অভিনেতা-অভিনেত্রী রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিত, ঋতুপর্ণা সেনসহ অনেকে।