নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের অন্তর্গত গয়লার ঘোপ গ্রাম। এই গ্রামটিকে তিন দিকে ঘিরে রেখেছে বড়াল নদ। অনেকটা ইংরেজির ইউ বর্ণাকৃতিতে ঘেরা গ্রামটি দেখতে কিছুটা দ্বীপের মতো। স্থলভাগের সাথে সংযুক্ত শুধুমাত্র উত্তর দিকের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। অন্য তিন দিকের মধ্যে গ্রামটি থেকে বের হওয়ার দুটি পথ রয়েছে। সে দুটি পথেই প্রধান অন্তরায় নদ। পথ দুটি গোচর-গয়লার ঘোপ ঘাট এবং গয়লার ঘোপ-পাঁকা ঘাট। এই দুই পথে বর্ষা মওসুমে নৌকায় এবং শুষ্ক মওসুমে বাঁশের সাঁকোয় পারাপার হন সাধারণ মানুষ। গয়লার ঘোপের উত্তর পাশে প্রায় দশটি গ্রামে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসতি। নদী বিধৌত এ গ্রামটি সবজি চাষে বিখ্যাত। এখানকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়।
উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটর দূরে হওয়ায় এসব কৃষিপন্য খুব কম দামে জামনগর বাজারে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করতে হয়। অন্যদিকে গ্রামটির পূর্ব দক্ষিণে রয়েছে পাঁকা ইউনিয়নের পাঁকা গ্রাম। গয়লার ঘোপের শিক্ষার্থীরা পাশের জামনগর এবং পাঁকা গ্রামের প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে পড়ালেখা করে। গয়লার ঘোপ থেকে নদ পার হয়ে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে আড়ানী রেলস্টেশন। অদূরে রয়েছে বাঘার আড়ানীর একটি বিখ্যাত হাট। কিন্তু নিকটবর্তী পাঁকার এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, বড়াল পাড়ের পাঁকা হাট ও আড়ানীর হাটসহ এই অঞ্চলের মানুষের সাথে যোগাযোগের প্রধান বাধা বড়াল নদ। বর্ষা মওসুমে নৌকা আর শুষ্ক মওসুমে বাঁশের সাঁকোয় নদ পারাপার হতে হয়। গয়লার ঘোপ গ্রাম থেকে উপজেলা সদরের সহজ পথ পাঁকা হয়ে আড়ানী-বাগাতিপাড়া সড়ক।
কিন্তু জামনগর হয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যেতে হয় এ গ্রামটির মানুষদের। ফলে সাধারন মানুষদের প্রায়শই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অথচ একটি ব্রিজ বদলে দিতে পারে ওই গ্রামের মানুষের ভাগ্যের চাকা। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের পূর্বে এলাকা বাসির দাবির মুখে ব্রিজটি করার প্রতিশ্রুতি দেন। ক্ষমতায়নের পর কেউতা বাস্তবায়ন করেন না। গয়লার ঘোপ গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ব্রিজের অভাবে তাদের উৎপাদিত কৃষি পন্য সঠিকভাবে বাজার জাত করতে পারছেন না। পাঁকা গ্রামের ব্যবসায়ী কালাম জানান, বর্ষাকালে ছাত্র-ছাত্রীদের নৌকায় অনেক কষ্টে পার হতে হয়। অন্য সময়ে বাঁশের সাঁকো তাদের ভরসা। তাছাড়াও ব্যবসার মালামাল বহনে গয়লার ঘোপের মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নৌকার মাঝি ইদ্রিস আলী জানান, তিনি প্রতিদিন দেড় থেকে দুইশ লোক পার করেন। এতে তার জীবিকা চলে। কিন্তু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব আর সবিজ উৎপাদনকারীদের ন্যায্য মূল্য পেতে ওই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজন বলে মনে করেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বেশ কয়েক বার মাপজোঁক নিলেও পরে আর কোন খবর নাই। কৃষকদের কৃষি পণ্য সঠিক ভাবে বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে এবং সাধারণ মানুষসহ ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে বড়াল নদের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী বলেন, অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় গয়লার ঘোপ-পাঁকা ঘাটে ব্রিজটি স্থাপন করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুর রহমান জানান, ওই ঘাটে একটি ব্রিজের প্রকল্প পাঠানো হয়েছিল। মাটি পরীক্ষার তথ্যও ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার এ অনুমোদন সংক্রান্ত একটি মেইল বার্তা তিনি পেয়েছেন। ওইখানে ২০০ মিটার দীর্ঘ একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ