ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আন্দোলনের মুখে নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। আজ রবিবার বেলা ১১ টার দিকে তিনি পদত্যাগ করেন বলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামান শাহীন জানিয়েছেন। পরিচালক পদত্যাগ করলেও বেলা ১ টা পর্যন্ত কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক আকিব।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামান শাহীন জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় হাসপাতালের শিশু মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক শিশুর মৃত্যু হয়। তখন শিশুর স্বজনরা এক চিকিৎসককে শারিরীকভাবে আঘাত করে। অন্যান্য সকল চিকিৎসককে হুমকি দিয়েছে। যে কারণে শনিবার সকাল থেকে ইন্টার্নী চিকিৎসকরা ধর্মঘটের ডাক দেয়। ইর্ন্টান চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার না করায় রবিবার বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করা হয়। সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করে। চিকিৎসকদের দাবির প্রেক্ষিতে পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ পত্র পেয়েছি। সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটা মেনে চলা হবে।
পদত্যাগকৃত পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি বরিশালের সন্তান। বরিশালের প্রতি, এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার আবেগ আছে, ভালোবাসা আছে। তবে পরিচালকের পদে এখন থেকে আমি আর থাকবো না।
পদত্যাগ পত্রে পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম লিখেছেন, 'আমি পরিচালক হিসেবে এই হাসপাতাল পরিচালনায় অপরাগ বিধায় স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে অত্র হাসপাতালের পরিচালনার দায়িত্ব থেকে বিরত আছি। অবিলম্বে আমার দায়িত্ব হস্তান্তর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি।'
এর আগে সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনরতরা প্রথমে হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করে। এরপর তারা পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত আইন-শৃংখলা বাহিনী মোতায়েনসহ বিভাগীয় কমিশনার, সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতনরা বৈঠকে বসেন।
বিক্ষুব্ধরা শিক্ষার্থীরা জানান, 'গত ৩ আগস্ট পরিচালক সাইফুল ইসলামসহ তার অনুসারীরা স্বৈরাচারের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে। এছাড়াও পরিচালকের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত। মেডিকেলের সকল টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, টাকা লুটপাট করা, সৎ যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানী করে। তার বিগত কর্মকাণ্ডের জন্য আগেই তার পদত্যাগ দাবি করা উচিত ছিলো। সে হাসপাতালের প্রত্যেক ক্ষেত্রেই অনিয়ম ও দুর্নীতি করে মেডিকেলের চিকিৎসা ব্যবস্থা বাণিজ্য নির্ভর করেছে।'
শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। ইন্টার্নসহ সিংহভাগ চিকিৎসক কর্মবিরতি পালন করায় রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক আকিব জানান, তাদের দাবি মেনে পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। তারা নিজেরা এখন মিটিং করছেন। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চিকিৎসকের উপর হামলার ঘটনায় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাষ্টার বাদী হয়ে এক নারীকে আসামীকে করে মামলা করেছে বলে জানিয়েছে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন। আসামীকেও অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ