নতুন করে চরে জমি জরিপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভূমি অফিস। এতে নতুন করে জমি হারানোর আতঙ্কে আছেন চরের মানুষ কারণ কর্তৃপক্ষ জরিপে নামলেই জমি হারাতে হয় তাদের। অভিযোগ আছে, জরিপকারীরা একজনের জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড করে দেন। এ নিয়ে ভোগান্তির শেষ থাকে না চরবাসীর। শুধু তাই নয়, এতে সামাজিক বিরোধ বাড়ে বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে চর আষাড়িয়াদহ ইউপির চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা বলেন, ‘গতবারের জরিপে একজনের জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড করে দেওয়া হয়েছে। ফলে সামাজিক বিরোধ বেড়েছে। আমি আসার পর অর্ধশত অভিযোগ পেয়েছি। এগুলো মীমাংসাও হচ্ছে না।’
কৃষক রাফিকুল ইসলাম জমির কাগজপত্রও বোঝেন না। ৪০ বছর আগে একখণ্ড জমি কেনেন। পরে দেখেন, ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি। বাধ্য হয়ে রাফিকুল প্রতিবছর সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ওই জমি চাষবাস করেন। এতদিন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু ওই জমি এখন রেকর্ড হয়েছে এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তির নামে। রাফিকুলের আশঙ্কা, যে কোনো সময় ওই চক্রটি লাঠিসোঁটা নিয়ে জমিতে নামবে। তখন তিনি জমির দখল হারাবেন। রাফিকুলের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আমতলা খাসমহলে। শুধু রাফিকুল নয়, চর আষাড়িয়াদহের দুটি মৌজার অর্ধশত ব্যক্তির জমি অন্যের নামে রেকর্ড হয়েছে। আর এ ঘটনা ঘটেছে ২০০৯-১০ সালের দিকে, যখন চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আষাড়িয়াদহ খাসমহল ও হনুমন্তনগর মৌজায় দিয়ারা সেটেলমেন্টের মাধ্যমে বিআরএস রেকর্ড হয়।
সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের দিয়াড় মানিকচক, আষাড়িয়াদহ মৌজায় দিয়ারা সেটেলমেন্টের জন্য নোটিস জারি করা হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে চরবাসী। তারা বলছেন, আগেরবার দিয়ারা জরিপের সময় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র সার্ভেয়ারদের হাত করে অনেক কৃষকের জমি তাদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে। এবারও ওই চক্রটি দিয়ারা জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে। তারা এই জরিপ চান না। জরিপ যদি করতেই হয় তাহলে তা যেন বিভাগীয় সেটেলমেন্টের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত হয় দাবি তাদের। এ দাবিতে গত ২ ডিসেম্বর ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে একটি আবেদন করেছেন। এতে বলা হয়, নতুন জেগে ওঠা চরের জন্য দিয়ারা সেটেলমেন্ট জরিপ পরিচালিত হয়। কিন্তু এবার বিআরএস রেকর্ডের জন্য দিয়ারা জরিপ হবে বলে নোটিস দেওয়া হয়েছে। সরকারি লোকের বাইরে এই জরিপ হলে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হবে। অনেক কৃষকের জমি ফের যাবে প্রভাবশালীদের নামে।
এদিকে, দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশন, রাজশাহীর চার্জ অফিসার সলিল কিশোর চাকমা বলেন, ‘স্থানীয় ভূমি মালিকদের আপত্তি থাকলে তো আমরা জরিপ করতে পারব না। সেটা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। গতবারের জরিপে একজনের জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এবার সেটা হবে না। এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ হচ্ছে।’