কথায় বলে ‘যার নাই কোন গুণ, তার নাম বেগুন।’ সেই বেগুনও আজ শুক্রবার নাটোর বাজারে একশ’ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত কাল বৃস্পতিবার পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২৮০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০ টাকা এবং আগাম জাতের ফুলকপি প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ করে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এখন বাজার গিয়ে মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। অন্যদিন বেছে নিতে পারলেও আজ শুক্রবার পোকা ও পচা বেগুন নিতে হয়েছে।
স্থানীয় সবজি বিক্রেতারা জানান, শুক্রবার সকাল থেকে সবজির আমদানি নেই। চাহিদার চেয়ে আমদানি কম হওয়ায় বেশি দাম দিয়ে প্রতিটি সবজি কিনতে হয়েছে। কোন সবজি বেছে নেয়া যায়নি।
নাটোর শহরের নিচাবাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মজিবর, বাবু, আয়চাদ ও সাদ্দাম হোসেন জানান, নাটোরের সবজি বাজারগুলোতে প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে পাইকার ও ফরিয়া বা কৃষকরা বিভিন্ন সবজি বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। কিন্তু শুক্রবার যে কজন সবজি নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য তা ছিল চাহিদার তুলনায় একেবারে কম। ফলে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু রাখার স্বার্থে প্রতিযোগীতা করে অন্যান্য দিনের তুলনায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হয়েছে।
খুচরা সবজি বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, প্রতিদিন নিচাবাজার থেকেই তারা প্রথমে পাইকারি মূল্যে সবজি কেনেন। ঘাটতি হলে তারা স্টেশন বাজার থেকে নিয়ে আসেন। আজ শুক্রবার কোন বাজারেই চাহিদা অনুযায়ী সবজির সরবরাহ ছিলনা। ফলে বেশি দামেই কিনতে হয়েছে।
পাইকারি বিক্রেতা মাহাবুব ও মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, তারা দুদিন ধরে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরেও প্রতিদিনের সবজি কিনতে পারেননি।
জেলা কৃষি বিপণণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, সবজি পচনশীল পণ্য হওয়ায় টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সবজির একটি বড় অংশ ক্ষতি হয়েছে। টানা বর্ষণের কারণে অনেক কৃষকের জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম ছিল। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাজারে সবজির আমদানি আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
করোটা গ্রামের রুহুল আমিন জানান, তিনি প্রায় একবিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছিলেন। টানা বর্ষণের কারণে জমির ফুলকপি নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুল হক জানান, গত দুদিনে নাটোরে প্রায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিগত কয়েকদিন প্রায় একই পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। ফলে অনেক জমিতে পানি জমে ফসলের একটা বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খরিপ-২ মৌসুমে নাটোর জেলায় সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৭২৭ হেক্টর জমিতে। ফসল পাওয়া গেছে প্রায় ৮ হাজার টন। অতি বর্ষণ স্বত্ত্বেও আগাম ফসল হিসেবে ফুলকপি বাজারে উঠেছে। এছাড়া যে সব ফসল পানিতে নষ্ট হয়েছে সে সব জমির পানি বের হওয়ার জন্য নালা কেটে দেয়া সহ উঁচু জমিতে নতুন করে বেড তৈরি করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যাতে করে যে সব জমির ফসল নষ্ট হয়েছে সেসব জমিতে পুনরায় রবি মৌসুমের ফসল আবাদ করা যায়। কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে নানা পরমর্শ দেয়া হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল