প্রশংসা মাত্রই আল্লাহর জন্য। অতঃপর রসুলুল্লাহ (সা.), তাঁর বংশধর, সাহাবা ও তাঁর হেদায়েতের অনুসারীদের প্রতি দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক। অন্য কারও জন্মবার্ষিকী পালন করা নাজায়েজ। এটি দীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত একটি বিদাত। কেননা রসুল (সা.) এবং চার খলিফা ও তাঁরা ব্যতীত অন্য সাহাবিগণ (রা.) এবং সর্বোত্তম যুগের নিষ্ঠাবান অনুসারীগণও তা উদযাপন করেননি, অথচ তাঁরা ছিলেন সুন্নত সম্পর্কে সর্বাধিক অভিজ্ঞ। রসুল (সা.)-কে পরিপূর্ণ মহব্বতকারী এবং তাঁরা পরবর্তীদের তুলনায় ছিলেন তাঁর আনীত শরিয়তের সর্বাধিক অনুসারী।
রসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের দীনে নব প্রথা সৃষ্টি করল যা তার অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারি-মুসলিম)।
তিনি অন্য হাদিসে বলেন, তোমরা আমার সুন্নত এবং আমার পরবর্তী হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতকে ধর এবং তা দৃঢ়তার সঙ্গে দাতে নাতে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং তোমরা দীনে নব আবিষ্কৃত বিষয়ে সাবধান থেক। কেননা দীনের মধ্যে প্রত্যেক নব প্রথাই বিদাত আর প্রত্যেক বিদাতই গোমরাহি। অপর এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হবে, তা অনুসরণ করে চলবে না সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য নয়। (বুখারি ও মুসলিম)।
উল্লিখিত হাদিসগুলোতে বিদাতের উদ্ভাবন ও তার প্রতি আমলের ব্যাপারে কঠোরভাবে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা তাঁর পাক কলামে ঘোষণা করেন : রসুল তোমাদের যা দিয়েছেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। (সুরা হাশর-৭)।
তিনি আরও বলেন, সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের সাবধান হওয়া উচিত। বিপর্যয় তাদের ওপর আপতিত হবে অথবা আপাতিত হবে তাদের ওপর কষ্টদায়ক শাস্তি। (সুরা নূর-৬৩)।
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতের আশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সুরা আহজাব-২১)।
আল্লাহপাক আরও বলেন, মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা সততার সঙ্গে তাঁদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে আর তিনি তাঁদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাঁরা চিরস্থায়ী হবে। তা মহা সাফল্য। (সুরা তওবা-১০০)। তিনি আরও বলেন : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সুরা মায়িদা-৩)।
এ বিষয়ে কোরআন মজিদে বহু আয়াত রয়েছে। নব আবিষ্কারকদের দৃষ্টিতে মনে হয়, আল্লাহ যেন এ উম্মতের জন্য দীনকে পরিপূর্ণ করেননি এবং রসুল (সা.) ও তাঁর উম্মতের জন্য যা কিছু করণীয় তা বলে দিয়ে যাননি। তাই যারা পরবর্তীতে আল্লাহর শরিয়তে তাঁর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে এমন কিছু আবিষ্কার করে বসল, যার অনুমতি তিনি দেননি। যা নিঃসন্দেহে ভয়ানক এবং আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধাচরণ।
অথচ আমাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, রসুল (সা.) তাঁর উম্মতকে জান্নাতে যাওয়ার এবং জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য এমন কোনো পথ নেই যা তিনি বর্ণনা করেননি। যেমন বিশুদ্ধ হাদিসে এসেছে :
আবদুল্লাহ বিন আমর (রাজিআল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক নবীকে এ দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন যে, তিনি তাঁর উম্মতের জন্য যা কল্যাণকর মনে করবেন তা যেন তাদের বর্ণনা করেন এবং তাদের জন্য যা অকল্যাণকর মনে করেন তা থেকে যেন তাদের সতর্ক করেন। (সহিহ মুসলিম)।
আর সর্বজনবিদিত কথা হলো- আমাদের নবী (সা.) নবীদের মধ্যে সর্বোত্তম, তাবলিগ বা প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি পরিপূর্ণতার মূর্ত প্রতীক, খাতামুল আম্বিয়া বা নবীদের শেষ ব্যক্তিত্ব, কারও জন্মদিন পালন যদি দীনের অন্তর্ভুক্ত হতো, যে দীনের প্রতি আল্লাহতায়ালা রাজি-খুশি তবে অবশ্যই রসুল (সা.) তাঁর উম্মতের জন্য তা বর্ণনা করতেন বা তিনি তাঁর জীবদ্দশায় নিজে করতেন বা সাহাবিগণ (সা.) করতেন। সুতরাং রসুল (সা.) এবং সাহাবারা যা করেনি তার বাইরে আমরা সুন্দর মনে করে যা কিছুই করি না কেন তা অবশ্যই ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তা নব আবিষ্কৃত বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত। যে বিষয়ে রসুল (সা.) তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। যেমন- আগের হাদিসগুলোতে বর্ণিত হয়েছে।
তাই আসুন আমরা রসুলের উম্মতেরা তার সুন্নত আঁকড়ে ধরার প্রতিজ্ঞা করি। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাদের তাঁর কোরআন এবং তাঁর রসুল (সা.) সুন্নাহ অনুসরণে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক