এক হীরক খণ্ডেই বদলে গেছে ভাগ্য। তিনি রাতারাতি হয়ে গেছেন লাখপতি। ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলার। খনিতে কাজ করতে গিয়ে রাজু গাউন্ড নামের এক শ্রমিক বড় আকারের একটি হীরার সন্ধান পেয়েছেন। ১৯ দশমিক ২২ ক্যারেটের সেই হীরাটির মূল্য অন্তত ৮০ লাখ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ কোটি টাকারও বেশি।
হীরাটি পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের (কালেক্টর) কার্যালয়ে সেটি জমা দিয়েছেন রাজু। কালেক্টর সুরেশ কুমার জানিয়েছেন, শিগগিরই হীরাটি নিলামে তোলা হবে। তারপর সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে সরকারের পাওনা অর্থ ও কর কেটে রেখে বাকি অর্থ রাজুকে ফেরত দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, পান্না জেলাটির অবস্থান মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলে। এই অঞ্চলের জেলাগুলোতে ছোটো ছোটো অসংখ্য হীরার খনি রয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ভূতত্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলের জেলাগুলোর বিভিন্ন খনিতে এখনও মজুত রয়েছে ১২ লাখ ক্যারেটের সমপরিমাণ হীরা।
এসব হীরার অবস্থান ভূপৃষ্ঠের একেবারেই অগভীরে। ফলে সেখানে হীরার অনুসন্ধান চালানোর জন্য ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণ বহনযোগ্য যন্ত্র দিয়েই অনুসন্ধান সম্ভব।
বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলের বাসিন্দাদের অনেকেই সরকারের কাছে এক বছরের জন্য বিভিন্ন খনি লিজ নিয়ে সেগুলোতে অনুসন্ধান চালান। তবে সবসময় যে খনিতে হীরা মিলবে তেমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। মূলত বর্ষাকালেই চলে এই অনুসন্ধান কার্যক্রম।
রাজুও তাদের মতোই একজন। গত ১০ বছর ধরে সরকারের কাছ থেকে খনি লিজ নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন তিনি। অন্যান্যদের মতো বর্ষাকালে তিনি খনিতে অনুসন্ধান করেন, আর বছরের বাকি সময় ব্যস্ত থাকেন কৃষিকাজে। এবারই প্রথম ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো তার, পেলেন হীরার দেখা।
রাজু বিবিসিকে বলেছেন, তার বাবা প্রায় দুই মাস আগে পান্নার কাছে কৃষ্ণ কল্যাণপুর পট্টি গ্রামে খনিটি ইজারা নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তার পরিবার খনি ইজারা নেয়, বর্ষা মৌসুমেই তারা বেশি খনিতে খনন কাজ করেন। এসময় রাজমিস্ত্রির কাজ বন্ধ থাকে। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই দরিদ্র এবং আমাদের অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই। তাই কিছু অর্থ উপার্জনের আশায় আমরা এটি করি।’
রাজু আরও বলেন, ‘এটি ক্লান্তিকর কাজ। আমরা একটি গর্ত খনন করি, মাটি এবং পাথরের খণ্ডগুলি বের করি, একটি চালুনিতে ধুয়ে ফেলি এবং তারপরে হীরা খুঁজতে হাজার হাজার শুকনো, ছোট পাথরের মধ্যে দিয়ে সাবধানে চালনা করি।’ তিনি আরও বলেন, "আমি পাথর ভেদ করে চালনা করছিলাম এবং একটি কাঁচের টুকরো সদৃশ কিছু দেখতে পেলাম। আমি এটি আমার চোখের সামনে ধরেছিলাম এবং একটি ক্ষীণ আভা দেখতে পেয়েছি। তখনই আমি বুঝতে পারলাম যে আমি একটি হীরা খুঁজে পেয়েছি।"
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল