মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী জেলায় রাস্তার ধারে এক নারীর যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার ভিডিও গত কয়েকদিন ধরে ভাইরাল হয়ে গেছে। উজ্জয়িনীর ‘কয়লা ফটক’ মোড়ের ফুটপাথে বুধবার প্রকাশ্যেই ৪০ বছরের এক নারীকে মদ খাইয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ২৮ বছরের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
আশ্চর্যজনকভাবে যেখানে এ ঘটনা ঘটেছে, সেটি উজ্জয়িনীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা। একই রাস্তায় একটি পেট্রোল পাম্প, উজ্জয়িনীর চরক হাসপাতাল ছাড়াও রয়েছে মদের দোকানও। ওই ঘটনার সময় বহু মানুষ আসা-যাওয়া করলেও কেউ ভুক্তভোগীকে নারীকে রক্ষায় এগিয়ে যায়নি। বরং কয়েকজন ঘটনার ভিডিও করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে ভারতজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়।
ওই ইস্যুতে রাজ্যের রাজনীতিও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ভাইরাল ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে কংগ্রেস ক্ষমতাসীন বিজেপিকে চাপে ফেলেছে। আবার পালটা আক্রমণ করে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কংগ্রেস রাজ্যকে বদনাম করার চেষ্টা করছে।
এ ঘটনা এমন সময় ঘটলো, যখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে একজন তরুণী চিকিৎসককে হাসপাতালের ভেতরে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় সেখানে তুমুল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
উজ্জয়িনীতে সেদিন কী ঘটেছিল সেখানে :
উজ্জয়িনীর পুলিশ সুপার প্রদীপ শর্মা বিবিসিকে বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকালের ঘটনা এটি। উজ্জয়িনীর যে অঞ্চলে এ ঘটনাটি ঘটছে তা জমজমাট এলাকা। পুলিশ সুপার বলেন, নির্যাতিতা ও অভিযুক্ত দুজনেই একে অন্যকে আগে থেকেই চিনতেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি রাস্তায় একটি ঠেলাগাড়ি নিয়ে দোকান চালায়। আর ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী পুরনো জিনিসপত্র কেনাবেচা করেন। সেদিন দুজনেই কথা বলতে বলতে মদ খেয়েছিলেন। নেশা কাটার পরে ওই নারী জানিয়েছেন যে ওই ব্যক্তি বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারপরেই তারা দুজনে মদপান করেন। ওই সময়েই এই ঘটনা হয়।
তার কথায়, ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের মামলা রুজু করে অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। অভিযুক্তর জেল হয়েছে। তদন্ত চলছে। একই সঙ্গে কে বা কারা ভিডিওটি বানিয়ে ভাইরাল করল, সেটাও খোঁজা হচ্ছে।
পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে যে, বছর আটেক আগে ওই নারী উজ্জয়িনীতে আসেন এবং তার একটি ছেলেও আছে। তবে এখন তিনি আর পরিবারের সঙ্গে থাকেন না।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ঘটনার সময় এক পথচারী পুলিশকে খবর দেন। সেখানে পৌঁছে ওই নারীকে সহায়তা দিয়ে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তার নেশা কাটার পরে ওই নারীর বয়ান রেকর্ড করে মামলা করা হয়।
মানুষ দাঁড়িয়ে ধর্ষণ হওয়া দেখল: মধ্যপ্রদেশে নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন, এমন একজন সমাজকর্মী অর্চনা সহায় বলছিলেন, মানুষের এরকম আচরণ খুবই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, নারী বা কিশোরীর শ্লীলতাহানি হোক বা ধর্ষণের মতো ঘটনা, এরকম ক্ষেত্রে সমাজ যে মনোভাব দেখিয়ে থাকে, তা খুবই দুঃখজনক। ওই ঘটনা থামানোর কোনো চেষ্টা না করেই ঘটনার ভিডিও বা ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মানুষ। এ ঘটনার ক্ষেত্রে ভিডিওটি যিনি করছেন এবং সেখান দিয়ে চলাফেরা করা মানুষ সবাই বুঝতে পারছিলেন যেকোনো নারী স্বেচ্ছায় তার সঙ্গে এরকম ঘটনা ঘটতে দেবেন না। তার পরেও কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করল না, উপরন্তু কয়েকজন ঘটনার ভিডিও করতে থাকলেন!
তার কথায়, যারা এরকম ঘটনার ভিডিও করে সেটি ভাইরাল করে দেয়, তাদের শাস্তি দেওয়া যাবে, এরকম একটি আইন আনা দরকার।
বিডি-প্রতিদিন/শআ