ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পুলিশের অনেক কর্মকর্তা এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। এছাড়া দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন অনেকেই। এই তালিকায় নতুন যোগ হয়েছে পুলিশের এক সময়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা মীর রেজাউল আলম। গত ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি বিমানবন্দর দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি পালিয়ে গেছেন। পুলিশের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, মীর রেজাউল আলম পুলিশের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর এলাকার চৌগাছিতে। তিনি সর্বশেষ অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত ছিলেন। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর তিনি আর অফিস করেননি। এর মধ্যে তিনি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ফন্দি আঁটেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি সিডনি চলে যান।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, পুলিশের বিশেষ শাখার ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে তিনি ইমিগ্রেশন পার হয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পুলিশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশেষ শাখার ওই কর্মকর্তা মীর রেজাউল আলম ছাড়াও আরও অনেককেই বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় পুলিশ কর্মকর্তা মীর রেজাউল আলমের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা দায়েরের পর থেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে তিনি পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অতিরিক্ত আইজিপি মীর রেজাউল আলম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। এছাড়া ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও, অপারেশন শাখার দায়িত্বে এবং কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
পুলিশ সদর দফতর জানায়, ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর মোট ১৮৭ জন কর্মকর্তা ও সদস্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া প্রায় দুই ডজন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় তিন শ’ পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে পুলিশের সাবেক দুই কর্মকর্তা এ কে এম শহীদুল হক, আছাদুজ্জামান মিয়া, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আরও দেড় ডজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। যে কোনো সময় সেসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের গ্রেফতার করা হতে পারে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ঢাকার ৫০ থানায় যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের অনেককেই গ্রেফতার করা হবে। ইতোমধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ও গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া যেসব এলাকায় পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারীরা নিহত হয়েছেন, সেসব এলাকার উপ-কমিশনার ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ও সহকারী কমিশনারদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও সমালোচিত কর্মকর্তা সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের অবস্থান নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে তাকে আর প্রকাশ্যে কোথাও দেখা যায়নি। একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি মারধরের শিকার হয়ে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত পারি দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এছাড়া আরেক আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে গেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া পুলিশের আওয়ামী ঘনিষ্ঠ আরও কয়েকজন কর্মকর্তাও বিভিন্ন কৌশলে দেশ ছেড়েছেন বলেও জানা গেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল