দেশের উত্তরাঞ্চলের জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে আরো তিনদিন লাগতে পারে৷ বিশেষ করে জামালপুরে এখনো নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার ভাটিতে যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকাভুক্ত রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪ হতে ৮৮ মি.মি./ ২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা কম।
আগামী এক দিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে, পরবর্তী চার দিন হ্রাস পেতে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এই সময়ে ব্ৰহ্মপুত্র-যমুনা নদী অববাহিকাভুক্ত কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা ও মানিকগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
রাজশাহী বিভাগের গঙ্গা নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং তার ভাটিতে পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত গঙ্গা অববাহিকাভুক্ত রাজশাহী বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪ হতে ৮৮ মি.মি./ ২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা কম।
আগামী পাঁচ দিন গঙ্গা নদীর পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে, অপরদিকে আগামী এক দিন পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী চার দিন হ্রাস পেতে পারে। এই সময়ে গঙ্গা-পদ্মা নদী অববাহিকাভুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারিপুর, ও শরীয়তপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি নেই।
সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, আগামী তিন দিন পর্যন্ত গঙ্গা সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকাভুক্ত সিলেট বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪ হতে ৮৮ মি.মি./ ২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা কম।
আগামী তিন দিন সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে। এই সময়ে সুরমা-কুশিয়ারা নদী অববাহিকাভুক্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদী সমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ১ দিন তিস্তা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ২ দিন নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে। এই সময়ে অববাহিকাভুক্ত কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও গাইবান্ধা জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
সিলেট বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, খোয়াই ও ধলাই নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে, এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৩ দিন সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, খোয়াই ও ধলাই নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে। এই সময়ে অববাহিকাভুক্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
ময়মনসিংহ বিভাগের সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংস ও জিঞ্জিরাম নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে, এবং জিঞ্জিরাম নদী জামালপুর জেলার গোয়ালকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল স্থিতিশীল রয়েছে, এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, আগামী ০৩ দিন পর্যন্ত ময়মনসিংহ বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪ হতে ৮৮ মি.মি./ ২৪ ঘন্টা) প্রবণতা কম।
আগামী ৩ দিন সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংস ও জিঞ্জিরাম নদীসমূহের পানিে সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। এই সময়ে অববাহিকাভুক্ত নেত্রকোণা ও ময়মনসিংহ জেলায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং জিঞ্জিরাম নদী অববাহিকাভুক্ত জামালপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
ঢাকা জেলা এবং এর চারপাশের প্রধান নদীসমূহ- বুড়িগঙ্গা, টঙ্গী খাল, তুরাগ ও বালু স্থিতিশীল রয়েছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৫ দিন পর্যন্ত ঢাকা জেলা এবং এর চারপাশের প্রধান নদীসমূহ স্থিতিশীল থাকতে পারে। এই সময়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে মুহুরি ও ফেনী নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, আগামী ৩ দিন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতিভারী বৃষ্টিপাতের (৮৮ মি.মি/২৪ঘণ্টা) প্রবণতা কম। আগামী ৩ দিন গোমতী, ফেনী ও মুহুরি নদীর পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এই সময়ে অববাহিকাভুক্ত ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
মাতামুহুরী ও সাঙ্গু নদীসমূহের পানির সমতল স্থিতিশীল, অপরদিকে হালদা নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৩ দিন মাতামুহুরী, হালদা ও সাঙ্গু নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে। এই সময়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদী অববাহিকা বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীসমূহের পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে কোনো মৌসুমি লঘুচাপ/নিম্নচাপ নেই। তাই আগামী তিন দিন পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীসমূহে স্বাভাবিক জোয়ার পরিলক্ষিত হতে পারে।
বিডি-প্রতিদিন/শআ