শনিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেট অ্যাওয়ার্ড জয়ী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল ফারুক

কম্পিউটার প্রকৌশলে বাংলাদেশির চমক

তানভীর আহমেদ

কম্পিউটার প্রকৌশলে বাংলাদেশির চমক

অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল ফারুক। বাংলাদেশের বুয়েট থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক করেছেন। পিএইচডি করেছেন কার্লসরুয়ে ইউনিস্টিউট অব টেকনোলজি থেকে। গবেষণার জন্য থমাস আলভা এডিসন পেটেন্ট অ্যাওয়ার্ড, আই ট্রিপলই সিইডিএ আর্লি ক্যারিয়ার অ্যাওয়ার্ডসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। আরও সুরক্ষিত ও উন্নত সাইবার ফিজিক্যাল ডিজাইনিংয়ে গবেষণা চালিয়ে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছেন এই বাংলাদেশি কম্পিউটার প্রকৌশলী।

 

কম্পিউটিং সিস্টেমের নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করছেন কম্পিউটার প্রকৌশলীরা। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া কম্পিউটার প্রকৌশলীদের একজন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল ফারুক। নানা পুরস্কার আর সম্মাননায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশের নাম ছড়িয়েছেন বিশ্বজুড়ে।

বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে জন্ম তার। বেড়ে ওঠা সেখানেই। পড়াশোনা করেছেন টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এরপর মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে। এইচএসসি শেষ করে ভর্তি হন বুয়েটে। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন ২০০২ সালে। উচ্চশিক্ষার পরবর্তী পর্যায়ে যান প্রবাসে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে জার্মানির দ্বিতীয় সেরা বিশ্ববিদ্যালয় আরডব্লিউটিএইচ আকেন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে এমএস ডিগ্রি নেন। সেখানে থাকতেই তিনি মৌলিক গবেষণা কাজে মনোযোগী হন। এমএস ডিগ্রি শেষ করে জার্মানির প্রথম সারির কম্পিউটার সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় কার্লসরুয়ে ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। মাল্টি কোর সিস্টেম ও কমিউনিকেশন আর্কিটেকচারে তিনি অসামান্য উন্নয়ন ঘটান। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ডিজাইনিংয়ে তিনি পিএইচডি সফলভাবে শেষ করেন। সাইভার ফিজিক্যাল সিস্টেম উন্নয়নে মূলত তিনি কাজ করছেন। কীভাবে কম্পিউটারের সিস্টেম ডিজাইন আরও নিরাপদ ও কার্যকর হতে পারে এ বিষয়ে তিনি গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বৈদ্যুতিক গাড়ি, স্মার্ট পাওয়ার গ্রিড সিস্টেম এবং স্মার্ট ম্যানুফেকচারার সিস্টেমে তার এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য তার গবেষণার ফলাফল নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতে কার্যকরী হয়ে উঠবে। তিনি ২০১৬ সালে সবচেয়ে কনিষ্ঠ গবেষক হিসেবে পেয়েছেন সম্মানজনক ইডিএ অ্যাওয়ার্ড। প্রতি বছর সারা বিশ্বের হাজারো গবেষকের মাঝ থেকে মাত্র একজন গবেষক এই পুরস্কার পেয়ে থাকেন। ২০১৬ সালে তিনি অন্যতম সম্মানজনক থমাস আলভা এডিসন পেটেন্ট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। বৈদ্যুতিক গাড়ির শক্তি সরবরাহ ও পরিচালনা কী করে আরও সুরক্ষিত করা যায় এ বিষয়ে গবেষণা করে তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৭ সালে তিনি পেলেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার সিনেট অ্যাওয়ার্ড। প্রতি বছর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একজন প্রফেসরকেই এই গবেষণা, শিক্ষকতা ও দায়িত্বশীলতার মূল্যায়নে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। হেনরি স্যামুয়েলি স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকেও তিনি গবেষণায় অবদানের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। পিএইচডি শেষ করে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন সিমেন্স করপোরেট রিসার্চে তিনি কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন। এখন তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত। তিনি গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। সাইবার ফিজিক্যাল সিস্টেম ডিজাইনিংয়ে তিনি যুগান্তকারী অবদান রাখতে চান। তার গবেষণা সফল হলে ইন্টারনেট কম্পিউটিং সফটওয়্যার ডিজাইন আরও সুরক্ষিত ও কার্যকরী হবে। বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রমে কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়টি যুগোপযোগী ও সহজীকরণে তিনি কাজ করছেন। সিলেবাস প্রণয়ন পরিকল্পনায় তিনি সহযোগিতা করছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কম্পিউটার প্রকৌশল হিসেবে নিজের মৌলিক গবেষণার জন্য তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর