বগুড়ার গুনাহারের দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো সাহেববাড়ী। এটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত একটি ঐতিহ্যবাহী ভবন। বাড়িটির চারপাশে নান্দনিক দৃশ্য লুকিয়ে আছে। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুনাহারের খ্যাতিমান জমিদারদের বিলাসবহুল এ বাড়িটি। অনেক বছর আগে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও জমিদারদের কর্মযজ্ঞের স্মৃতি এখনো মানুষের মুখে মুখে রয়েছে এ অবকাঠামোতে।
জানা যায়, দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তরে গুনাহার গ্রামে এ বাড়িটি অবস্থিত। জমিদার বা সাহেববাড়ীটি খাঁন বাহাদুর মোতাহার হোসেন খানের। খাঁন বাহাদুর মোতাহার হোসেন খাঁন ছিলেন দুই পুত্র ও পাঁচ কন্যার জনক। তিনি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে বাংলা বিহার, উড়িষ্যার এক্সসাইজ কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন শৌখিন মানুষ। ১৯৩৯ সালে তিনি গুনাহারের মতো নিভৃত পল্লীতে নির্মাণ করেন রাজপ্রাসাদতুল্য দ্বিতল বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন এবং বিলাসবহুল ভবন। ভবনের চারপাশ ঘিরে খনন করা হয়েছিল বিশাল নিরাপত্তা দিঘি। এ দিঘিতে জমিদার পরিবারের সদস্যরা বিকালে নৌভ্রমণ করতেন। পাশাপাশি জমিদারবাড়ীর পশ্চিম পাশে বিশাল একটি ঘাট বাঁধানো দর্শনীয় পুকুর ছিল। এ পুকুরেই জমিদার পরিবারের সদস্যরা গোসল করতেন। পুকুরের পশ্চিম দক্ষিণে বিশাল উঁচু সীমানা প্রাচীর ছিল যা আজও জীর্ণশীর্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির ভিতরের সৌন্দর্যের কথা বলে শেষ করার মতো নয়। যে সৌন্দর্যের কারণে বাড়িটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসতেন অগণিত মানুষ। ১৯৫২ সালের ২ জুলাই নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন মোতাহার হোসেন খাঁন। তিনি জীবদ্দশায় নিজের পরিবার পরিজনদের চেয়ে প্রজাদের কথাই বেশি ভাবতেন। আর সে কারণে মৃত্যুর পরও তার কর্মযজ্ঞের স্মৃতি আজও তাকে অমর করে রেখেছেন। বর্তমানে বাড়িটি মোতাহার হোসেন খাঁনের চতুর্থ ও ৫ম কন্যাদ্বয় চিরকুমারী রওশন মহল ও জৈলুশ মহলের নামে পরিচালিত হচ্ছে। বগুড়া শহরে অবস্থানরত চিরকুমারী রওশন মহল বাড়িটি নিজ দায়িত্বে দেখাশোনা ও সংস্কার কাজ করে থাকেন। এদিকে প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ বাড়িটি আজ প্রায় ধ্বংস হতে চলেছে। মোতাহার হোসেন খানের কর্মযজ্ঞের স্মৃতিকে আরও স্মরণীয় করে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার ধ্বংসাবশেষ বাড়িটির অবকাঠামো ঠিক রেখে পরিকল্পিত এবং দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করতে খাঁন পরিবারের প্রতি আহ্বান জানান পর্যটকরা। এতে পর্যটকের সংখ্যা যেমন বাড়বে তেমনি এলাকার ঐতিহ্যবাহী বাড়িটিও সুরক্ষিত হবে।
স্থানীয়রা জানান, বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এটি সংস্কার করে পর্যটন এলাকা হিসেবে এ এলাকাকে গড়ে তোলা সম্ভব। এতে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হবে।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি জানান, বাড়ির মালিকরা পূর্ব পুরুষদের এ বাড়ি নিজেদের মালিকানায় রাখার কথা জানান। তাই গুনাহারের দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো সাহেব বাড়িটি সংস্কার বা সরকারি মালিকানায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।