সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুরুতর আহত হন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র ফটো সাংবাদিক রোহেত আলী রাজীব। সেদিনের সেই রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার গলা জড়িয়ে যাচ্ছিল তাঁর। রাজীব বলেন, গত ১৮ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেছিলাম। তখন খবর পেলাম যাত্রাবাড়ীতে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। বাইক নিয়ে ছুটে গেলাম সেখানে। গিয়ে দেখি ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ এবং পিকেটারদের মাঝে এ সংঘর্ষ হচ্ছিল। হানিফ ফ্লাইওভার টোলপ্লাজা দাউদাউ করে জ্বলছিল। সে ছবি তুললাম। পিকেটারদের ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করছিল। এর মাঝে আমি নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে থাকি। হঠাৎ একটি ইট আমার পেছনে এসে লাগে। ইট লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমি পড়ে যাই। কোমরে এবং পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পাই। হাঁটতে পারছিলাম না। সঙ্গে যে কজন সহকর্মী ছিলেন তাঁরা আমাকে টেনে তুললেন। এ সময় ঢাকা টাইমসের সিনিয়র সাংবাদিক হাসান মেহেদী আমাকে তাঁর কাঁধে হাত রেখে অনেক দূর নিয়ে এলেন। তিনি নিজে আমাকে পানি খাওয়ান। মেহেদী বললেন, আপনি আগে ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকআপ করে বাসায় বিশ্রাম নেন। এরপর তিনি আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিলেন। আমি চলে আসি। এর মাঝে বাংলাদেশ প্রতিদিনের চিফ ফটোগ্রাফার আবু তাহের খোকন এসে আমাকে মেডিকেল চেকআপের ব্যবস্থা করান। বাসায় আসার দুই ঘণ্টা পর ফেসবুকে দেখি যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষের সময় সাংবাদিক হাসান মেহেদী নিহত হয়েছেন। প্রথমে একটু খটকা লাগল। এরপর ফেসবুকে যখন ভালোভাবে দেখি তখন বুঝতে পারি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসান মেহেদী নিহত হয়েছেন। যে ছেলেটি আমাকে উঠালেন, পানি খাওয়ালেন তিনিই মারা গেলেন। এটি আমার জন্য খুবই মর্মান্তিক সংবাদ। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন।
সংঘর্ষের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজীব আরও বলেন, আমার তোলা ছবিতে প্রথম সারিতে যাদের দেখা গেছে তাদের বেশির ভাগই লুঙ্গি পরা ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে তারা একজনও স্টুডেন্ট নন। যারা ইটপাটকেল মারল, সংঘর্ষ করল, আগুন দিল তাদের টোকাই মনে হয়েছে। স্টুডেন্টসরা টোলপ্লাজায় আগুন দেবে এটি আমার কখনো মনে হয় না। দেখেই বোঝা গেছে এরা টোকাই কিংবা বাইরের লোক। চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, ১৮ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছি। রিপোর্টে দেখা গেল পায়ের হাড় এবং টিস্যুগুলো দুর্বল হয়ে গেছে। ডাক্তার প্লাস্টার করে দিলেন। এখন বাসায়ই চিকিৎসা নিচ্ছি। তবে ১৮ তারিখের ঘটনা আমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা টাইমসের মেহেদী। তিনি ওই সময় আমাকে সাহায্য করেছেন। আমি পড়েছিলাম। সেদিন যদি তিনি আমাকে না বাঁচাতেন হয়তো আমিও তাঁর জায়গায় থাকতাম। পরে আমি জানলাম তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তাঁকে উদ্ধারের কেউ ছিল না। খুব কষ্ট লাগছে। যে ছেলেটি আমাকে উদ্ধার করেছেন তিনি দুনিয়াতে নেই- এটি আমাকে সারা জীবন পোড়াবে।