আনন্দের ছলে নানা রঙে, নানা ঢঙে চলমান অসংগতি তুলে ধরে সমাজে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন নেত্রকোনার এক যুবক। নেট দুনিয়ায় যিনি ‘ভাইসাব’ নামে পরিচিত। আঞ্চলিক ভাষায় প্রতিবাদের এক প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যদিও সামিউল হক ভূইয়া নামের যুবক মূলত একজন অভিনয় শিল্পী। কিন্তু তার অভিনব প্রতিবাদ সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এখন কোটি মানুষের কাছে সমাদৃত। কোনো ধরনের সভা-সেমিনার ছাড়াই সমাজের অসংগতির বিরুদ্ধে তুখোড় প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন তিনি। প্রতিটি ঘটনার পেছনের কারণ তুলে ধরে বর্ণনা করেন তিনি। পথ দেখান সমাধানের। অনেক সময় কিছু বিষয় বেশ আলোচিত হয়ে পড়ে। সাড়া ফেলেন দেশজুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিজের জেলাসহ সমগ্র দেশ এমনকি আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও তিনি থাকেন সোচ্চার। ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি নিজের অবস্থান থেকে করে যাচ্ছেন বড় একটি সামাজিক আন্দোলন।
তার বাচনভঙ্গিতে রয়েছে আশ্চর্য রকমের মনোযোগ আকর্ষণ। ফলে লাইক কমেন্টের মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করতে পারছেন লাখ লাখ মানুষ। ছড়িয়ে যাচ্ছে কোটি মানুষের কাছে। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে বাদ যায় না কোনো অনিয়ম দুর্নীতির খবরও।
এতে দেখা যায়, বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে কোথাও কোথাও পরিবর্তনও ঘটছে। ফানের মাধ্যমে আঞ্চলিক ভাষায় সমাজের বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরে এর সমাধানের পথ বের করে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেন ইচ্ছে করলেই সমাজটাকে সুন্দর করা যায়। সেই সঙ্গে আয়ের একটি উৎস্য খুঁজে নিয়েছেন। অন্যদেরও উৎসাহিত করেন।
ভাইসাব নামে পরিচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর সামিউল নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামের একজন বাসিন্দা। ব্যাংক কর্মকর্তা বাবার চাকরির সুবাদে তিনি জেলার দুর্গাপুর বারহাট্টা উপজেলায় পার করেছেন স্কুল জীবন। ময়মনসিংহে কলেজ জীবন শেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন থিয়েটার নিয়ে কাজ করেন। এর এক পর্যায়ে দেশে করোনার সংক্রমণে শুরু হয় লকডাউন। বন্ধ হয়ে যায় সামিউলের প্রদর্শনী। প্রায় এক বছর বন্ধ থাকে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রদর্শনীর পিপাসায় কাতর হন তিনি। এ থেকে ভাবনা আসে কী করে মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। কীভাবে মানুষের সঙ্গে শেয়ার করবেন। কেউ গানের মাধ্যমে, কেউ কবিতার মাধ্যমে নিজের দর্শন শেয়ার করে। এসব চিন্তা মাথায় ভর করে। এ নিয়ে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ফেসবুকে একটি পেইজ ক্রিয়েট করেন। ফান করে নাম দেন একেবারে গ্রামের একটি সম্বোধন ‘ভাইসাব’। পরবর্তীতে হ্যাপি নিউ ইয়ার নিয়ে নিজ এলাকার মানুষের অর্থাৎ গ্রামের মানুষের বক্তব্য নিয়ে একটি কনটেন্ট পোস্ট করেন ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি।
প্রথম তিন মাস তেমন কোনো সাড়া না মিললেও একের পর এক ঘটনা নিয়ে তৈরি কনটেন্ট দিতে দিতে পেইজ রিচ হতে শুরু করে। কয়েক মাসে ১০ লাখ ভিও চলে আসে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে পেজে সাড়ে ১৬ লাখ শুধু সাবক্রাইবারই রয়েছে। লাইক ভিও কমেন্ট শেয়ার যা মিলিয়ে এখন কোটি মানুষের ভাইসাব। এতে একটি ভালো আয়ও আসে। যদিও তিনি একান্তই নিজের বলে প্রকাশ করতে চাননি। তবে এটি প্রায় লাখ টাকা মাসে আয়ের একটি উৎস। তিনি বর্তমানে কয়েকটি ছবির কাজ করছেন। তার মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য দুটির কাজ চলছে। তার টিভি নাটক রয়েছে চারটি। একটি ঈদে মুক্তি পায়। এ ছাড়াও ফেস্টিভ্যাল ফিল্ম রয়েছে তিন থেকে চারটি।