জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ার পাশাপাশি গভীর সমুদ্রেরও তাপমাত্রা বাড়ছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে সমুদ্রের নিচের পরিবেশে, যেখানে সামুদ্রিক প্রাণীরা বাস করে।
শুধু তাপমাত্রা বৃদ্ধিই নয়, সমুদ্রের পানির লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের মাত্রা এবং পুষ্টির ঘনত্বেও প্রভাব পড়ছে। এটা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রের উপর দীর্ঘমেয়াদে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থা সিআইএসআরও (CSIRO) এবং চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের বিজ্ঞানীদের এক যৌথ গবেষণায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক সাময়িকী ‘নেচার’-এ এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে গভীর সমুদ্রের তাপমাত্রার অস্বাভাবিক পরিবর্তন ও তার প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
গবেষকরা সতর্ক করেছেন, সমুদ্রের এই উষ্ণায়ন প্রক্রিয়া উপেক্ষা করা হলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকৃত বিপদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উপকূলীয় এলাকার তাপমাত্রা নিয়ে আগ্রহ থাকলেও গভীর সমুদ্রের তাপমাত্রা নিয়ে যথেষ্ট তথ্য নেই। অথচ, গভীর সমুদ্রের তাপমাত্রার এই পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে প্রবাল প্রাচীর ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও তাপপ্রবাহের প্রভাব ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করছে এবং প্রতিনিয়ত এ ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের কারণে সমুদ্রের গভীর স্তরে বাস করা জীবজন্তু ও উদ্ভিদের বাসস্থানগুলোতে পরিবর্তন ঘটছে, যা এক সময় পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামুদ্রিক জীবের টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগুলো বিলীন হয়ে যেতে পারে এবং সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়বে।
উপকূলীয় এলাকায় তাপমাত্রা সম্পর্কে তথ্য থাকলেও, গভীর সমুদ্রের এই ধরনের সমস্যাগুলো নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে তাদের সাম্প্রতিক গবেষণা পরিষ্কারভাবে দেখাচ্ছে যে, এই ধরনের উপেক্ষা করা সমস্যাগুলো ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল