গাছ জনগণের সবচেয়ে বড় বন্ধু, সেই ভাবনা থেকে শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে আজ অবধি বৃক্ষরোপণ করে যাচ্ছেন মহাদেবপুরের রাইগাঁ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান। দেশের তথা মানুষের কল্যাণে তিনি প্রায়ই এ ধরনের ব্যতিক্রমি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরিবেশ রক্ষা ও নানা কল্যাণমূলক কাজ করে ইতোমধ্যে নজর কেড়েছেন তিনি। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে একটি শুভ কাজ দিয়ে তার দিন শুরু। আর এভাবে চলছে দীর্ঘ সময়।
বদলগাছীর শেষ প্রান্ত থেকে মাতাজী হয়ে নজিপুরের শুরু পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তায় প্রায় ৩ হাজার রঙিন ফুলের বিভিন্ন গাছ লাগিয়েছেন আরিফুর রহমান। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু, জাকারান্ডা, পলাশ, কদম, টগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। যা বর্তমানে শোভাবর্ধন করছে। এছাড়া রাইগাঁ ইউনিয়নের প্রতিটি সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, খাস জায়গা, কাঁচা-পাকা রাস্তার দুই পাশসহ মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শশ্মানঘাট, স্কুল, কলেজ এবং মহাদেবপুর-বদলগাছী দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার বৃক্ষরোপণ করেছেন। যা এখনও চলমান রয়েছে। এছাড়া ওই ইউনিয়নের বহুতি গ্রাম থেকে নিজ গ্রাম শহরাই হয়ে ডাবরকুড়ি পর্যন্ত প্রায় ৬২০টি তালগাছ লাগিয়েছেন ছাত্রজীবনে বন্ধুদের সাথে নিয়ে। সেটি তালপার্ক নামে পরিচিতি। এখনও বিভিন্ন রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানে ফুল, ফল, বনোজ, ঔষধিসহ নানা প্রজাতির গাছ রোপণ অব্যাহত রেখেছেন। এই বৃক্ষপ্রেমিক এলাকায় সবুজের ফেরিওয়ালা নামেও বেশ পরিচিত।
নওগাঁর তেঁতুলিয়া বিএমসি কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান সরদার একই সাথে অধ্যক্ষের পদেও রয়েছেন। সবদিক সামলিয়ে তিনি এলাকায় খুবই জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। তার এ বৃক্ষপ্রেম অত্র এলাকায় সবুজায়নের প্রেরণা হয়ে আছে ও থাকবে নবীন প্রবীনদের মনে। তাকে অনুসরন করছে অনেক তরুণ। তিনি তরুণদের আইডলে পরিনত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মানুষের ভালোবাসা পাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। অনেক কিছুর বিনিময়ে এটি অর্জন করতে হয়। প্রবল আন্তরিকতা আর বুকের ভেতরের ভালোবাসার আকাশ ছাড়া এগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। অধ্যক্ষ আরিফ তা পেরেছেন এবং করে দেখিয়েছেন। তাই রাইগাঁর মানুষের হৃদয়ে সুউচ্চতায় অবস্থান করতেও পেরেছেন। মাতাজিহাট বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই দেখেছি অধ্যক্ষ আরিফ একজন সমাজ দরদী মানুষ। মানুষের সেবা করা ও বিপদে সহায়তায় তিনি সব সময় আন্তরিক। এছাড়া বৃক্ষরোপণ তার নেশায় পরিনত হয়েছে। শহরাই তাল পার্কের তালগাছগুলো ছাত্রজীবনে লাগিয়েছেন অধ্যক্ষ ও চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান।
সমাজ সেবক আফাজ উদ্দীন বলেন, তিনি একজন ভাল মানুষ এবং আমাদের অনুপ্রেরনা। তিনি শহরাই তালপার্কের তাল গাছগুলো রোপন করেছেন। কবি গুলজার রহমান বলেন, বৃক্ষপ্রেমিক ছাড়াও তিনি একজন কবি ও সাদা মনের মানুষ। একটু সময় পেলেই বৃক্ষরোপণ বের হয়ে যান। এলাকায় খুব জনপ্রিয় এ মানুষটি অলরাউন্ডার হিসাবেই সবার কাছে পরিচিত।
বৃক্ষপ্রেমী অধ্যক্ষ আরিফুর রহমান বলেন, তালগাছ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে জনগণকে রক্ষা করে সেজন্য ছাত্রজীবনে বন্ধুদের সাথে নিয়ে তালগাছগুলি রোপণ করেছি। রাইগাঁ ইউনিয়নের সকল রাস্তায় তালবীজ লাগিয়েছি। এছাড়াও ইউনিয়নকে সবুজ ও রঙ্গিন করতে দীর্ঘ সময় ধরে প্রায় পঞ্চাশ হাজার গাছ লাগিয়েছি। সারাজীবন গাছ লাগানো চলমান থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ। কারো একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। আত্মতৃপ্তি থেকে মানুষকে সাহায্য আর প্রকৃতিতে সবুজায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবাই মিলে ভালো ভালো কাজ করলে দেশে দারিদ্র্য কমে যাবে, প্রকৃতি ফিরে পাবে তার নিজস্ব রূপ। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই গাছ রোপণের উৎসাহ পেয়েছি। স্বপ্ন দেখি একদিন লাল সবুজের খেলা হবে দূর থেকে মানুষ দেখতে আসবে। এই কারণে কৃষ্ণচুড়া এবার রোপণ করেছি।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ