নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ফুলের ঘাট এলাকায় দেখা যায় পানের বরজের নজরকারা দৃশ্য। পান চাষ একটি দীর্ঘমেয়াদী লাভজনক ফসল। পান চাষে তুলনামূলক ভাবে অন্যান্য ফসলের চেয়ে রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেকটাই কম। চাষীদের পরিশ্রমে গড়া বাঁশের কাঠি আর খড়ের ছাওনী দিয়ে ছায়াঘেরা মনোরম পরিবেশের বরজে বেড়ে উঠছে পান গাছ। অধিক লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে পান চাষীর সংখ্যা। পান চাষে প্রাথমিক পর্যায়ে বিঘা প্রতি খরচ গুনতে হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। আর এই খরচে উৎপাদন হচ্ছে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকার পান। যা নিজের এলাকার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে অন্যান্য জেলায়।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার ফুলের ঘাট এলাকার কৃষক মজনু মিয়া বলেন, রংপুরের গঙ্গাচড়া এলাকায় গিয়ে পানের আবাদ দেখেছি। সেখানকার কৃষকদের সাথে কথা বলে পান চাষে আগ্রহ বাড়ে। তারপর সেখান থেকে চারা এনে কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী জমিতে রোপন করি। প্রাথমিক পর্যায়ে চারা রোপন ও বরজ তৈরী করতে খরচ হয়েছে বিঘা প্রতি এক লাখ টাকা। পরে চারার সাথে বাঁশের কাঁঠি দিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও পান গাছের পরিচর্যা আর সার প্রয়োগে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চারা রোপণের ছয়মাস পর থেকে পান উৎত্তোলন করতে পেরেছি।
ওই গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, প্রায় ছয় বছর ধরে পানের আবাদ করছি। শুরুর দিকে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে এখন আর সেরকম হয়না। একবার চারা রোপন করলে আর রোপন করতে হয় না। তবে প্রতিবছর বরজ সংস্কার করতে হয়। এতে প্রায় লাখ খানেক টাকা খরচ হয়। গাছের পরিচর্যাও করতে হয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোগও দেখা দেয়। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সহায়তায় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়।
একই গ্রামের পান চাষী রাজু মিয়া বলেন, আমরা বাজারে তিন ধরনের সাইজে পান বিক্রি করি। ৮০টি পান এক’শ ধরা হয়। এই এক’শ পানের বড় সাইজটি বাজারে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, মাঝারি সাইজের পান বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর ছোট সাইজের পান বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। এসব পান বিক্রি করতে কোন হাট-বাজারেও যেতে হয় না। বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা বাড়িতে এসেই পান নিয়ে যায়। পান চাষ অন্যান্য ফসলের চেয়েও অধিক লাভজনক। একারণে আশেপাশের কৃষকরাও পান আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা মাগুড়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, মরণব্যাধি তামাকের পরিবর্তে পান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অধিক লাভজনক হওয়ায় ব্যাপক সাড়া মিলছে চাষীদের।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে এই উপজেলার কৃষকদের পান চাষের আগ্রহ বাড়ছে। উপজেলায় প্রায় ১১একর জমিতে মিঠা জাতের পান চাষ হচ্ছে। পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে যত্ন ও পরিচর্যা করে চারা লাগানোর ছয় মাস পর থেকে পান উত্তোলন করছে চাষীরা। এসব পান বড়, মাঝারি, ছোট আকারে বিভক্ত করে বিক্রি করা হচ্ছে বাজারে। তবে এই পানের চারা একবার রোপন করা পান হলে উৎপাদন করা যাবে ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত। এই গাছ থেকেই চারা তৈরি করা যায়।
বিডি প্রতিদিন/এএম