পুঁইশাক গাছের ডাটার সঙ্গে জন্ম নেওয়া ছোট ছোট দানায় ভাগ্য বদলে যাচ্ছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না গ্রামে কৃষকদের। এটি এখন স্থানীয় কৃষকদের প্রধান চাষে পরিণত হয়েছে। গ্রামের মাঠের দিগন্ত জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে পুঁইশাকের ফল বা মেচড়ি। কৃষকদের চাষ দেখতে ও তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে দূর দূরান্ত থেকে আসছেন অন্য এলাকার কৃষকেরা।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না গ্রামের লিয়াকত মন্ডল নামের এক কৃষক ভারতে বেড়াতে যাওয়া এলাকার এক ব্যক্তির মাধ্যমে ভারতীয় সিংলা জাতের এই বীজ সংগ্রহ করেন। এরপর ১০ কাঠা জমিতে এ জাতের পুঁইশাকের ফল (মেচড়ি) বীজ বোপণ করেন। প্রথম বছরেই বাজিমাত। খরচ বাদ দিয়ে দুই লাখ টাকার বেশি মেচড়ি বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছেন। তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে স্থানীয় কৃষকরা এটি চাষ করে নিজ নিজ ভাগ্য বদলে ফেলেছেন। একইসঙ্গে এলাকার নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ভোরের আলো ফুটতেই দৈনিক পারিশ্রমিক ভিত্তিতে গাছ থেকে ফল তুলে তা বস্তায় ভরেন পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা।
খেতে সুস্বাদু মেচড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসে স্থানীয় বাজার থেকে কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি পুঁইশাকের ফল বা মেচড়ি ৯৫ টাকায় বিক্রি করছেন কৃষকেরা। তবে এখন শীত মৌসুমে দাম একটু কম। আবহাওয়ার বৈরিতা না থাকলে এ সবজি আবাদে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কম। তাছাড়া বিক্রিতে নেই কোনো ঝামেলা। দামও অনেক বেশী পাওয়া যায়। এখন ওই গ্রামের প্রধান অর্থকারী ফসল পুঁইশাকের ফল (মেচড়ি) চাষ। বর্তমানে ওই গ্রামের কৃষকেরাই নয়, আশে-পাশের ইউনিয়ন গুলো কৃষকেরা ব্যাপকভাবে এ চাষ শুরু করেছেন।
সদর উপজেলা সাগান্না গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, মেচড়ি চাষ করে এক বিঘা জমিতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খরচ হয় ৪৫/৫০ হাজার টাকা। ফলন ভাল হলে প্রতি বিঘা জমি থেকে এক মৌসুমে সংগ্রহ করা যায় চার লক্ষাধিক টাকা ফল। জুলাই মাসের প্রথম থেকে জমিতে রোপণ করতে হয় চারা। এরপর বাঁশ খুঁটি ও সুতা দিয়ে তৈরি করা হয় মাঁচা। পরবর্তীতে দুইমাস অতিবাহিত হলে সংগ্রহ করা যায় ফল। একটানা ফল সংগ্রহ চলে চার থেকে ছয়মাস পর্যন্ত। সাধারণত ফলের মান ও সংখ্যা বৃদ্ধি করতে জমিতে জৈব সার দস্তা সার ও বোরন পরিমিত মাত্রাই ব্যবহার করা হয়।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নূর-এ-নবী জানান, এবছর নয় হেক্টর জমিতে সিংলা জাতের এই পুঁইফলের চাষ সাগান্না ইউনিয়নে সাগান্না গ্রামের কৃষকেরা। এই আসলে এজাত সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর ডোগা বিক্রি করা যায় না। ডোগা ও পাতা বেশী বেশী ছেটে দিতে হয়। এতে করে ফলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এর বীজ বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। কৃষকেরা নিজেই বীজ সংগ্রহ করে এলাকার কৃষকদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। এটা প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলা করতে পারে। বৃষ্টি জমে থাকলে গাছের কোনো সমস্যা হয় না।
তিনি বলেন, জৈব সার বেশী ব্যবহার করতে হয়। মাঝে মাঝে স্প্রে করা লাগে। তাই এই পুঁই ফলে রোপণের আগে বেড তৈরী শুরু করে শেষ পর্যন্ত কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছি। এফল চাষে খরচ একেবারে কম ফলন বেশী। এসব এলাকার কৃষকেরা এটি আবাদ করে ভালো আয় করছেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম