রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

আনন্দবাজার থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিন

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত, ভারতীয় প্রবীণ সাংবাদিক

আনন্দবাজার থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিন

আনন্দবাজার পত্রিকা ১০০ বছর অতিক্রম করে এখন ২০০ বছরের পথে পা দিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৩ বছর অতিক্রম করে ১৪ বছরে আজ পা দিল। বাংলা সংবাদপত্রে ১৯২২ সালের ১৩ মার্চ আনন্দবাজার প্রথম প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনও এই মার্চ মাসেই যাত্রা শুরু করেছিল। আমার সৌভাগ্য আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রায় ৪৫ বছর ধরে কাজ করেছি।  অভিজ্ঞতার অন্ত নেই। বাংলাদেশ প্রতিদিনেও ৭ থেকে ৮ বছর ধরে আমি নিয়মিত কলাম লিখে যাচ্ছি। শুরুতেই একটি কথা বলে রাখতে চাই- আমি চাকরিসূত্রে বহু অজানাকে জেনেছি, অচেনাকে চিনেছি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকেই আমার জন্মস্থান বরিশালের ঝালকাঠিতে আবার নতুন করে আমি ফিরে গেছিলাম। যদি সংবাদপত্রে কাজ না করে কোনো সরকারি বা বেসরকারি অফিসে কাজ করতাম তাহলে হয়তো আমাকে সেই ঝালকাঠির মধ্যেই আবদ্ধ থাকতে হতো। কিন্তু আমি তা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম অজানাকে জানার জন্য। অচেনাকে চেনার জন্য। এ দুটি কাজ আমার কতটা সফল হয়েছে তা আমি নিজে কোনো ভাষণ দিয়ে বলতে পারব না। ১৯৭৭ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়ে আমি একটি বই লিখেছিলাম-MIDNIGHT MASSACRE IN DHAKA যা ভারতের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। আমার সঠিক তারিখ মনে নেই, প্রায় ৯-১০ বছর আগে কলকাতা থেকে একজন আমাকে ফোন করেছিলেন। ফোনে আমার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করতে চাইলেন। আমি সেদিনই বিকালে পার্ক স্ট্রিটে এক রেস্তরাঁয় তাঁকে আসতে বলেছিলাম। আমাদের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে ভারত ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মতবিনিময় হয়। তিনি যেদিন ঢাকায় ফিরে যাবেন, সেদিন সকালে আমাকে ফোন করে আমার বাড়িতে আসতে চান। ৫ ঘণ্টা আমার বাড়িতে আলোচনায় তিনি বলেন, আপনার বইটার একটা বাংলা ভাষায় কপি পাওয়া যাবে? আমি খুঁজে তাঁকে একটি বই দিলাম। তিনি ঢাকায় ফিরে গিয়ে আমাকে ফোন করে জানালেন, আমি নিয়মিত বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখতে চাই কি না। সেদিন আমি তাঁকে কোনো কথা দিইনি। এবার তাঁর নামটি বলছি। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক, পীর হাবিবুর রহমান। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সাংবাদিক। বাংলাদেশের লেখকদের মন তিনি জয় করেছিলেন। তিনি মহারোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক মাস আগে ইহলোক ত্যাগ করেন। তিনি যখন চিকিৎসার জন্য মুম্বাইতে এসেছিলেন, তখন আমাকে ফোন করেছিলেন। পরদিন আমিও তাঁকে হাসপাতালে ফোন করি। তার মৃত্যুর কয়েক দিন আগে আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে বেশ কিছু সময় তাঁর রোগ নিয়ে কথাবার্তা হয়েছিল।

দোলযাত্রার দিনই আনন্দবাজারের যাত্রা শুরু। ১৯২২ সালের ১৩ মার্চ। লাল কাগজে ছাপা আনন্দবাজার পত্রিকার জন্ম পরাধীন ভারতবর্ষে। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন তখন সবে দানা বাঁধছে। জন্মদিন থেকে ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তি পর্যন্ত বহুবার রাজরোষে পড়তে হয়েছে আনন্দবাজারকে। ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে যেমন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা দুঃখ, কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তেমনই আনন্দবাজার পত্রিকা ও তার কর্মকর্তাদের বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। জরিমানা দিতে হয়েছে হাজার হাজার টাকা। ১৯২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বাঙালি বীর যতীন্দ্রনাথ সম্পর্কে সম্পাদকীয় প্রকাশের জন্য ভারতীয় দন্ডবিধির ১২৪(ক) ধারা অনুসারে আনন্দবাজার পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রফুল্ল কুমার সরকার ও মুদ্রক অধরচন্দ্র দাসকে জেলহাজতে রাখা হয়। পরে তাঁরা মুক্তি পান। ১৯২৬ সালে আবার ফৌজদারি দন্ডবিধি ১৫৩(ক) ধারা অনুসারে ইংরেজ সরকার পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করে। ১৯২৭ সালের ২৫ জুলাই আনন্দবাজার পত্রিকার সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারকে অভিযুক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।

 

এবার দেখা যাক কে কবে আনন্দবাজারের সম্পাদক ছিলেন-

প্রফুল্ল কুমার সরকার      (১৯২২, ১ জুন-১৯২৩, ৬ অক্টোবর)

সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার   (১৯২৩, ৭ অক্টোবর-১৯৩০, ০১ অক্টোবর)

মাখনলাল সেন (১৯৩০, ১ নভেম্বর-১৯৩০, ২৬ নভেম্বর)

সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার   (১৯৩১, ১১ জুন-১৯৪১, ৬ জানুয়ারি)

প্রফুল্ল কুমার সরকার      (১৯৪১, ৭ জানুয়ারি-১৯৪৪, ১৪ এপ্রিল)

চপলাকান্ত ভট্টাচার্য         (১৯৪৪, ১৬ এপ্রিল-১৯৫৪, ২৪ জুন)

নলিনীকিশোর গুহ           (১৯৫৪, ২৫ জুন-১৯৫৫, ৩ অক্টোবর)

চাপলাকান্ত ভট্টাচার্য        (১৯৫৪, ৪ অক্টোবর-১৯৫৯, ৩১ জানুয়ারি)

বর্তমান সম্পাদক অতিদেব সরকার।

এবার একটু পেছনের দিকে তাকাই। সেপ্টেম্বর মাসে আমি প্রথম আনন্দবাজারে চাকরি পাই রিপোর্টার হিসেবে। আমাকে আনন্দবাজারে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে ছিলেন আনন্দবাজারের কার্যনির্বাহী সম্পাদক সন্তোষ কুমার ঘোষ। ফরিদপুর জেলার রাজবাড়ীতে তাঁর জন্ম। তিনি একাধারে সাংবাদিক এবং বড়মাপের লেখক। তিনি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারও পেয়েছিলেন। আনন্দবাজারকে টেনে নিয়ে যাওয়ার পেছনে তাঁর ছিল অসাধারণ ভূমিকা। তিনিও পীর ভাইয়ের মতো মহারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

প্রথম দিন সন্তোষবাবু আমাদের চিপ রিপোর্টার, যার অধীনে আমি নিয়মিত কাজ করব সেই শিবদাস ভট্টাচার্য (যশোরের মাগুরায় বাড়ি) কাছে নিয়ে গেলেন। বললেন, এই নিন, আপনি লোক খুঁজছিলেন, আপনাকে ভালো লোক দিয়ে গেলাম। বলেই উনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। শিববাবু প্রথমে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তো কাগজে যোগ দিলা, তোমার দায়বদ্ধতা কার কাছে? এ প্রশ্নটি শুনে আমি একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, তোমাকে ছোটখাটো প্রেস কনফারেন্স দেওয়া হবে। প্রেস ক্লাবে বা কোনো হোটেলে। সেখানে চা-টা খাবা কিন্তু বিস্কুটটা খাবা না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, বিস্কুট খাব না কেন? উনি বললেন, ওরা যা খুশি তাই বলবে। আমি নাও ছাপতে পারি, বিস্কুট খেলে দায়বদ্ধতা চলে আসবে। তাই চা খেয়েই চলে আসবে।

কল্যাণীতে বিয়ারের কারখানার উদ্বোধন। সেখানে আমাকে পাঠানো হলো। ফিরতেই শিবদা প্রশ্ন করলেন, ওখানে কী হলো? আমি জবাব দিলাম, নতুন বিয়ারের কারখানার উদ্বোধন হয়েছে। উনি বললেন, দাঁড়াও আমি অশোকবাবুর সঙ্গে কথা বলে আসি।  ওই কোম্পানি এক পাতা বিজ্ঞাপন দিতে চেয়েছিল। অশোকবাবু তা প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন, আমি মদের কোম্পানির বিজ্ঞাপন নিইনি। এক লাইনও ছাপা হবে না।

আমার তৃতীয় অ্যাসাইনমেন্টটিও অভূতপূর্ব। সেটিও        আমাকে লিখতে হয়নি। বিবেকানন্দ রক-এর উদ্যোক্তারা কলকাতায় প্রেস কনফারেন্স করে মদের ফোয়ারা ছুটিয়েছিল। অফিসে এসে বলতেই শিবদা বললেন, বিবেকানন্দের নামে মদ খাওয়ানো হয়েছে। এক লাইনও লিখবে না।

যতদিন যাচ্ছে, ততই আমার ওপর শিবদা দায়িত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ’৬৫ সালের গোড়ার দিকে পশ্চিমবঙ্গে প্রচ- খাদ্যাভাব দেখা দেয়। তখন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেন। তিনি রেশনিং প্রথা চালু করার জন্য আদেশ দিলেন। কিন্তু সরকারি ভান্ডারে চাল-গম কিছুই বিশেষ নেই। বামপন্থিরা এ সুযোগ নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রীকে প্রফুল্ল সেন একটি চিঠি লিখেছিলেন। উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রের পক্ষে এই চাল-গম দেওয়া সম্ভব নয়। একদিন অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি সে সময় মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে ফোন। মুখ্যমন্ত্রী এখনই আপনাকে ডাকছেন। একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা রাইটার্স বিল্ডিং চলে গেলাম। একজন মন্ত্রী চিৎকার করে আমাকে বললেন, সকাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী তোমাকে খুঁজছেন। কোথায় থাক? প্রফুল্ল সেন আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললেন, আমার ঘরে চল। বললেন, শোন, কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম চাল-গম দেবে না। আমি জোতদারদের ওপর লেভি বসিয়ে দিলাম। ফসলের তিন ভাগ সরকারকে দিতে হবে। বামপন্থিরা এ নিয়েও তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করল। তাই আমি ঠিক করেছি এবং নির্দেশ দিয়েছি এ বছর থেকে পশ্চিমবঙ্গে পাট চাষ হবে না। পাট বিদেশে রপ্তানি করে ভারত সরকার ৫০০-৭০০ কোটি টাকা রোজগার করে। তুমি কৃষিমন্ত্রীর ঘরে যাও। ও তোমাকে বুঝিয়ে দেবে কোথায় কত পাট চাষ হয়। কারণ আমাদের ধানের জমি সবই তো বাংলাদেশে চলে গেছে। কৃষিমন্ত্রী আমাকে সব বুঝিয়ে দিলেন। আমি অফিসে ফিরে সেটার ফাইল করলাম। সেটা আমাদের ডাক সংস্করণে লিড হয়ে বেরোল।

বামপন্থিরা আন্দোলনকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেল যে, এমন দিন ছিল না, যেদিন কলকাতার রাস্তায় ট্রাম-বাস পোড়ানো হয়নি। জেলায় জেলায় যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। রাস্তায় রাস্তায় ভিখারিরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যেত। বামপন্থিদের মধ্যে এই আন্দোলনে বড় ভূমিকা দেখা যায়। প্রফুল্ল সেন ছিলেন যোলআনা গান্ধীবাদী নেতা। স্বাধীনতার আগে তিনি একটানা ১১ বছর আরামবাগ জেলে ছিলেন। মশার দাপটে তিনি কেরোসিন তেল গায়ে মেখে ঘুমাতেন। তিনি জেল থেকে গান্ধীজিকে চিঠি লিখেছিলেন, জেলে খদ্দরের মশারি পাওয়া যায় না। জেলে আমাদের ম্যালেরিয়া হচ্ছে।

আনন্দবাজারের ৫০ বছর উপলক্ষে ৭২ সালে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। অশোকবাবুর নির্দেশে সব কর্মচারী সেদিন ধুতি-পাঞ্জাবি পরে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। ১০০ বছর উপলক্ষে প্রধান বক্তা ছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। শতবর্ষের অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের মধ্যে আমিও ছিলাম। ইন্দিরা সেদিনের বক্তৃতায় স্বাধীনতা আন্দোলনে আনন্দবাজারের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। আনন্দবাজারের একটি ইংরেজি দৈনিক ছিল হিন্দুস্থান স্যান্ডার্ড। সেটিই পরে হলো দ্য টেলিগ্রাফ। চাকরি পাওয়ার মাস ছয়েক পরে সন্তোষবাবু ১৭ জন রিপোর্টারকে তাঁর ঘরে ডাকলেন। কে কোন মন্ত্রক রিপোর্ট করবে তার দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন। আমার নামে কিছু ছিল না।

আমি জিজ্ঞাস করলাম, আমি কী করব? তিনি বললেন, তুমি বাজার ঘুরে যাও। কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসগুলোতে ঘোর। সেখানে খবর পাবে। এক দিন বাড়ি ফেরার পথে প্রফুল্ল সেনের বাড়িতে গেলাম। গিয়ে দেখি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব কে কে রায়। হাতে একটা ফাইল। ওপরে লেখা আছে রিলিজ অব জ্যোতি বসু অ্যান্ড আদার পলিটিক্যাল ডিটেনি। আমি প্রফুল্ল বাবুকে জিজ্ঞাস করলাম, আপনি কি জ্যোতি বাবুদের ছেড়ে দিচ্ছেন? উনি গম্ভীর হয়ে বললেন, হ্যাঁ। ছাড়ব না তো কী করব? তোমাদের কাগজের বিড়লার দালালটা (একজন সিনিয়র রিপোর্টার) রোজ নয় তাই লিখে যাচ্ছে।

৬৫ সালে রেশনিং শুরু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ শুরু হলো। যুদ্ধ শেষ হলো। যুদ্ধের পরে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী কলকাতা এলেন ব্রিগেডে জনসভা করতে। আমার অ্যাসাইনমেন্ট ছিল এয়ারপোর্ট টু এয়ারপোর্ট। দুই দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী কলকাতা এসেছিলেন। আমি হিন্দি বুঝি না। তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শাস্ত্রীজির মিডিয়া অ্যাডভাইজার কুলদীপ নায়ারকে ধরলাম। তাকে অনুরোধ করলাম শাস্ত্রীজির হিন্দি বক্তৃতা আমাকে ইংরেজিতে বলে দিতে। তিনি বলেও দিয়েছিলেন। তিনি একটি স্লোগান দিয়েছিলেন জয় জওয়ান জয় কিষাণ। এই স্লোগানটি এখনো ভারতবর্ষের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেমন বঙ্গবন্ধুর স্লোগান ‘জয় বাংলা’ এখনো বাংলাদেশে ঘরে ঘরে উচ্চারিত হয়।

’৬৫ যুদ্ধের পর পূর্ববাংলা থেকে যখন উদ্বাস্তুরা আসতে থাকলেন তখন আমাকে একদিন বাদে একদিন পেট্রাপোল সীমান্তে যেতে হতো শরণার্থীদের খবর নেওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত আমি হাঁফিয়ে উঠে চিফ রিপোর্টারকে বলেছিলাম, রোজ ভোর ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ডিউটি করতে পারছি না।

৪৫ বছরের অভিজ্ঞতা লেখা খুবই কঠিন একটা ব্যাপার। ঘটনার তো বিরাম নেই। একটা কথা লিখতেই হচ্ছে। ’৭১-এর আগস্ট মাস শেষে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাগভাগরার একটি জনসভায় বক্তৃতা করতে এসেছিলেন। তিনি রাত কাটান উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির কাছে সামরিক বাহিনীর ৩৪ কোর ডিভিশনে। তার কনভয় যখন যায় তখন তার চিকিৎসক ডা. মাথুরকে ফেলে গিয়েছিল। তাকে আমি গাড়িতে তুলে নিয়ে ওই সভায় ঢুকে পড়ি। অত্যন্ত গোপন ওই মিটিংয়ে শ্রীমতি গান্ধী বলেছিলেন যুদ্ধ হবে। আপনারা জিতবেন তো? আমি সেখান থেকে বেরিয়ে এসে উত্তরবঙ্গের এক সহকর্মীর বাড়ি থেকে সেই রাতেই স্টোরি ফাইল করি। ’৮২ সালে কলকাতা বইমেলায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অশোক সরকার মারা যান। হাসপাতালে গোটা আনন্দবাজার। বার্তা সম্পাদক বিজয় চক্রবর্তী আমাকে বললেন, তুমি দুই ভাইকে জিজ্ঞাস কর কাল কাগজ বেরুবে কি না, আর সম্পাদক কে হবে? আমি জিজ্ঞাস করতেই অভীক বাবু বললেন, আপনি ভাঙ্গুকে জিজ্ঞাস করুন। ভাঙ্গু (অরূপ বাবু) বললেন, আমি জানি না, আপনি টুকুনকে জিজ্ঞাস করুন। পরে অরূপ বাবু বললেন, আপনি বাড়ি গিয়ে মাকে জিজ্ঞাস করুন। আমি চলে গেলাম মদন মোহনতলার বাড়িতে।

বাড়ি গিয়ে দেখি সারদা মিশনের সন্ন্যাসিনীরা তাকে ঘিরে বসে আছেন। আছেন দুজন মন্ত্রীও। আমি জিজ্ঞাস করলাম, কে সম্পাদক হবেন? উনি ধীরে ধীরে বললেন, অভীক বাবু।  আমি অফিসে ফিরে আসতেই আমাকে সবাই ঘিরে ধরলেন, আমি বললাম, উনি টুকুন অর্থাৎ অভীক বাবুকেই সম্পাদকের দায়িত্ব নিতে বলেছেন। পরদিন থেকে সম্পাদকীয় পদে বসেন অভীক বাবু।

কাকতালীয় হলেও একটা ব্যাপার এখানে উল্লেখ করা যায়।  তা হলো আনন্দবাজার এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের মতো আমার জন্মও মার্চ মাসের ১০ তারিখে। 

সর্বশেষ খবর