আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনার পর তাদের যৌক্তিক ২২ দফা দাবী মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে দাবী বাস্তবায়নে ভিসির আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরাও। এর ফলে গত ৭ দিনের অচলাবস্থার অবসান হয়েছে আজ সোমবার। এদিকে, আন্দোলন প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় প্রাণ ফিরেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন উপাচার্য। এর আগে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে ১৯ সদস্যের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন উপাচার্য। এ সময় ববির ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান, রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম সহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ৬ কর্মকর্তা এবং মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম রউফ খান উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে ভিসি সাধারন শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির হলে শিক্ষার্থীরা ভিসিকে স্বাগত জানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা উল্লেখ না করার অভিযোগে গত ১৭ জুলাই বরিশাল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এবং ১৯ জুলাই সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ নগরীতে মানববন্ধন করে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ২১ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে। তখন ছাত্রলীগের একদল উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী মানববন্ধনের ব্যানার ছিনিয়ে নেয়। এসময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অশালীন আচরণের অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।
এরপর ২৩ জুলাই থেকে ভিসির অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে সাধারন শিক্ষার্থীদের কিছু মৌলিক অধিকারের দাবী যুক্ত করায় আন্দোলনে যোগ দেয় সাধারন শিক্ষার্থীরাও। সেই থেকে ২২ দফা দাবীতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভিসি ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের দাবী মেনে না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভিসি অপসারণের ১ দফা দাবিতে আন্দোলন করে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত ছিল।
অবশেষে ভিসি শিক্ষার্থীদের দাবীগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়ায় আন্দোলন প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, গত রবিবার রাতে বরিশাল সার্কিট হাউজে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি’র নেতৃত্বে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধ ও সুশীল সমাজের সাথে ভিসি ও স্থানীয় প্রশাসনের সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সার্বিক বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক বলেন, রবিবার রাতে স্থানীয় সুশীল সমাজের সাথে বৈঠকে তাদের প্রত্যেকটি দাবীর বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটানো হয়েছে। আগামীতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের পোষ্যদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
এই বৈঠকের ধারাবাহিকতায় সোমবার ক্যাম্পাসে গিয়ে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের সমস্যার বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। ভিসি বলেন, তাদের দাবীগুলো যৌক্তিক। এগুলোর মধ্যে কিছু স্বল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা যাবে। আর কিছু দাবি বাস্তবায়নের দেড় ২ বছর লেগে যাবে। শিক্ষার্থীরা বাস্তবতা অনুধাবন করে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আশস্ত হয়ে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
বিডি-প্রতিদিন/৩১ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব