১১দিনের অচলাবস্থার পর রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। এর আগে শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হল এবং ডাইনিং খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থানের কারণে উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হককে ছুটিতে যাওয়ার পাশাপাশি তাকে আর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করতে না দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবহিত করার কথা জানিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম।
অভিভাবক সুলভ আচরণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জানিয়ে আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মহিউদ্দিন আহমেদ শিফাত বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগ কিংবা তাকে ছুটিতে পাঠানোর লিখিত প্রমাণ ছাড়া আন্দোলন প্রত্যাহার করতে অসম্মতি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘ ১১দিনের অচলাবস্থা নিরসনে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বরিশাল সার্কিট হাউজের সভাকক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সমঝোতা সভার আয়োজন করে বিভাগীয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের ২৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সাথে সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ সদস্যের শিক্ষক প্রতিনিধি এবং ৩ সদস্যের সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষ হয় বিকেল ৪টায়।
বৈঠক শেষে শিক্ষার্থী শিফাত উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তারা এতদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অভিভাবক সলভ আচরণ পাননি। সভায় তাদের সেই অভিভাবক শূন্যতা পূরণ হয়েছে। বৈঠকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনড় থাকেন। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সহ তাকে (উপাচার্য) আর বরিশালে দায়িত্ব পালন না করতে দেওয়ার বিষয়ে একমত হন বৈঠকে উপস্থিত সবাই।
শিক্ষার্থীরা আর আন্দোলনে আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীদের নেতা শিফাত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছেন।
এ সময় সদর আসনের এমপি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবির সাথে এক না হলেও কিছু দাবির সাথে তারা একমত পোষণ করেছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী এই উপাচার্যকে ছুটিতে পাঠানো কিংবা তাকে আর দায়িত্ব পালন করতে না দেয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অবহিত করা হবে। একই সাথে শনিবার বিকেলের মধ্যে সকল আবাসিক হল ও ডাইনিং খুলে দেওয়া ছাড়াও রবিবার থেকে সকল শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া আগামীতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো সংকট মোকাবেলায় বরিশালের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সিন্ডিকেট কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সভায় সবাই ঐক্যমত পোষণ করেন এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানোর কথা বলেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও শিক্ষক ড. হাসিনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মৌখিকভাবে শনিবার বিকেল থেকে সকল আবাসিক হল এবং ডাইনিং চালুর জন্য বলা হয়েছে। বিকেলে তিনি এ বিষয়ে নোটিশ জারী করবেন।
সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রবিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরুর কথা বলেন রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান।
এদিকে সমঝোতা বৈঠক শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা পর বিকেল ৫টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম নেতা অর্থনীতি বিভাগের স্নাতোকত্তোর বর্ষের ছাত্র জহিরুল ইসলাম ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র শফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, উপাচার্যকে ছুটিতে পাঠানো কিংবা তার পদত্যাগের লিখিত প্রমাণ হাতে পাওয়া ছাড়া শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করবে না। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্যাম্পাসও খুলতে দেবেন না।
গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদ করলে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের কটুক্তি করেন। এই কটুক্তির প্রতিবাদ ও প্রত্যাহার সহ ১০ দফা দাবিতে ২৭ মার্চ থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন প্রশমিত করতে ২৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে ওইদিন বিকেলের মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেন উপাচার্য।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৮ মার্চ থেকে ১০ দফা বাদ দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে তারা। অবস্থা বেগতিক দেখে ২৯ মার্চ উপাচার্য তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এতে সন্তুষ্ট না হয়ে তার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে গত কয়েক দিনের ধারাবাহিক আন্দোলনে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি, প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রতিবাদী আলপনা আঁকা, রক্ত দিয়ে দেয়াল লিখন, মশাল মিছিল, মহাসড়ক অবরোধ এবং প্রতীকি অনশন করেন। এমন অবস্থায় বিভাগীয় প্রশাসন এই সমঝোতা সভার আয়োজন করে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন