রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহানের দেয়া 'অবৈধ' নিয়োগপ্রাপ্তরা দাবি করেছে, নিয়োগটি বাতিলের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা যা যা দরকার, তাই করছেন। শনিবার বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিয়োগপ্রাপ্তরা বলেন, 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ৫ মে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সােবহান ৭৩'র অধ্যাদেশ ১২ (৫) অনুযায়ী তার উপর অর্পিত ক্ষমতা বলে শূন্যপদের বিপরীতে ১৩৮ জন জনবল নিয়ােগ দেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আমরা নিযােগপত্র হাতে পাওয়ার পর গত ৬ মে নিজ নিজ দপ্তরে যােগদান করি। পরিতাপের বিষয় সাবেক উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা আমাদের যােগদানকে ‘অবৈধ’ ঘােষণা বলে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে নানা অজুহাতে আমাদের কর্মস্থলে যােগদান থেকে বিরত রেখেছেন। ৭৩'র অধ্যাদেশ মতে রুটিন উপাচার্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।'
নিয়োগপ্রাপ্তরা বলেন, 'আমরা হতবাক হয়েছি রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা গত ২৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর নিয়ােগ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন যা আমাদের নজরে এসেছে। প্রতিবেদনটি মিথ্যার আলােকে সাজানাে এবং ৭৩'র অধ্যাদেশর ভুল ব্যাখ্যায় ভরপুর। এধরনের ভুল ব্যাখ্যায় ভরা প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ এবং উক্ত প্রতিবেদন প্রত্যাহারের দাবি জানাই।'
নিয়োগপ্রাপ্তরা আরও বলেন, 'বর্তমান রুটিন উপাচার্য কর্তৃক মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত ভুল ব্যাখ্যার প্রতিবেদন এবং তার অবিরাম মিথ্যাচারে এটা প্রতীয়মান যে, তিনি যেকোনো উপায়ে এই নিয়ােগ বাধাগ্রস্থ করতে চান। আমরা মনে করি তিনি জেনে ও বুঝে এবং তাদের অভ্যন্তরীণ দলাদলিতে আমাদেরকে বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করছেন। আমরা আহ্বান জানাই, মিথ্যার ফুলঝুরি বাদ দিয়ে সত্যকে উপস্থাপন করে ৭৩'র অধ্যাদেশ মূলে আমাদের বৈধ নিয়ােগকে স্বাগত জানিযে কর্মস্থলে যােগদান করার সুযোগ দিন, অন্যথায় আমাদের লাগাতার আন্দোলন থেকে বিচ্যুত হবাে না।'
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে আবদুস সোবহান উপাচার্য হিসেবে শেষ কর্মদিবসে (৫ মে) ১৩৮ জনকে অ্যাডহকে (অস্থায়ী) নিয়োগ দিয়ে পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। সেদিন এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে সেদিনই বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদান স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মন্ত্রণাণলয়ের তদন্ত কমিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত করে গত ২৩ মে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। শেষ অবৈধ নিয়োগে তদন্ত কমিটি বিদায়ী উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। আবদুস সোবহানের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয় দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর মধ্যেই নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগদানের জন্য ক্যাম্পাসে আন্দোলন করে আসছেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা