জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, যতদ্রুত মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শেষ হবে তত শীঘ্রই সেনাবাহিনীকে কাজ দেয়া যাবে।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে জবি সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন উপাচার্য।
উপাচার্য বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে কিন্তু আমরা আশাহত হব না। গত ১৯ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উন্নতি হয়েছে বলে আমি দেখছি না। শুধুমাত্র সবাই নিজেদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের এক মাস্টারপ্ল্যানের জন্য এখনো পর্যন্ত কোনো পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়নি। কাজের যে অগ্রগতি আমি কি বলব আমাদের শিক্ষার্থীরাই সবকিছু জানে।
উপাচার্য আরও বলেন, আমি যে উপাচার্য হয়েছি এখানে আমারও থাকার কোনো জায়গা নেই। আমিও তো সবসময় চাই তোমাদের সাথে এ ক্যাম্পাসে থাকতে। ১৯টি বছর পার হয়েছে তারপরও এতদিনে সমস্যাগুলো কেন সমাধান হয়নি জানি না। আপাতত শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের কথা বিবেচনা করে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজের অগ্রগতির দিকে নজর দেব আমরা। এরপর দেখব এখানে কতটা নয়ছয় হয়েছে এবং কারা কারা জড়িত আছে।
নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের সাথে ডিসির কথা হয়েছে তারা ধূপখোলা মাঠের একটি অংশের কাগজপত্র বুঝিয়ে দিলেই তোমাদের সাথে নিয়ে স্থায়ীভাবে বাকি কাজ সেরে নেব। পুরান ঢাকার স্থানীয়রা আগেও হল নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনেক ঝামেলা করেছে। এর ফলে মারামারি এবং ঝামেলা সৃষ্টি হয়ে এক-এক করে আমাদের হলগুলো সব দখল হয়ে যায়।
উপাচার্য বলেন, হলগুলো দখলের পরে স্বৈরাচারী সরকারের দোসররা নিজেরা আত্মসাৎ করে নিয়েছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের উপর হল আন্দোলনের সময় নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়েছে। এখন সময় এসেছে আমাদের সম্পদগুলো উদ্ধার করে স্থায়ীভাবে নিজেদের করে নেওয়া।
উপাচার্য আরও বলেন, আমরা শীঘ্রই দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের মাঠের কাজ শেষ করে সমাবর্তনের আয়োজন করব। তবে এক্ষেত্রে এক বছর সময় লাগতে পারে। যারা জুলাই ও আগস্টে স্বৈরাচারী সরকারের দোসর ছিল আমি তাদের উপাচার্য নয় এবং হতেও চাই না। আমি তোমাদের উপাচার্য। তোমাদের নিয়েই সামনে এগিয়ে যাব। সকল স্বৈরাচারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে নতুবা তারা এ বিজয়কে আবারও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নস্যাৎ করে দিবে।
উপাচার্য রেজাউল করিম বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নয় বরং ছাত্র রাজনীতির সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা চালু করতে হবে। সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে শীঘ্রই জকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও কাজ করার জন্য ছাত্র প্রতিনিধি পেয়ে যাবে। তোমরা আমাকে সহযোগিতা কর ইনশাআল্লাহ আমার দরজা সবসময় খোলা থাকবে তোমাদের জন্য।
উপাচার্য রেজাউল করিম আরও বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হবে দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ। এইখানে কোনো ধরনের অসচ্ছতা থাকবে না। প্রশাসনের সবকিছু কিছু শিক্ষার্থীদের সামনে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হবে। আগামী ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমরা শহীদ শিক্ষার্থী ও আহতদের স্মরণ করে কোনো গান-বাজনা করব না কিন্তু তাদের স্মরণে চমকপ্রদ একটি আয়োজন করব যা সবাই মনে রাখতে পারে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক, হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমীন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ড. কে. এ. এম. রিফাত হাসান সহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত