খলিফা হারুন-অর-রশিদ (৭৮৬-৮০৯ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন আব্বাসীয় যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। তাঁর শাসনকালকে ইসলামি ইতিহাসের ‘সুবর্ণ যুগ’ বলা হয়। ইসলামি ইতিহাসে এ সময়টাই ছিল জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শিল্পচর্চার এক উজ্জ্বল পর্ব। হারুন-অর-রশিদ নিজে ছিলেন ভীষণ বইপ্রেমী, পাণ্ডিত্যমনা ও সংস্কৃতিপ্রেমী শাসক। সে সময় আরব খলিফা ও বাইজান্টাইন সম্রাটদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল অবিমিশ্র। কখনো শত্রুতা তো কখনো আবার সখ্য। তারা প্রায়শই নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন উপহারসামগ্রী ও উপঢৌকন আদান-প্রদান করতেন। তো একবার খলিফা হারুন বাইজান্টাইন সম্রাট ষষ্ঠ কনস্টানটিনকে কী উপহার দেওয়া যায়, এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। রাজসভায় উপস্থিত আমির-উমরা ও রাজ আমাত্যরা কেউ এ উপহার দেওয়ার প্রস্তাব করে তো কেউ অন্য কিছু। কোনো প্রস্তাবেই খলিফা হারুনের মন সায় দেয় না। অতঃপর একজন আমির হঠাৎ প্রস্তাব করলেন, জাঁহাপনা আপনি যেহেতু বই পড়তে ভীষণ পছন্দ করেন, সেহেতু তাঁকে কিছু বই-ই কেন উপহার পাঠাচ্ছেন না। এ প্রস্তাবটি বাদশা হারুন-অর-রশিদের বেশ মনে ধরল। তাঁর সে ইচ্ছা অনুযায়ী বাইজান্টাইন সম্রাট ষষ্ঠ কনস্টানটিনকে পাঠানো হলো কিছু বই। হারুন-অর-রশিদ কর্তৃক পাঠানো বইগুলোর মধ্যে ছিল- প্রাক ইসলামি কবিতা সংকলন, ইমাম মালিক কর্তৃক হাদিস ও ফিকহ সংকলন যা ছিল আরবি ইসলামি আইনের অন্যতম প্রথম কাজ, সেই সঙ্গে অন্যান্য আরও কিছু মূল্যবান গ্রন্থ। বইগুলো পেয়ে সম্রাট কনস্টানটিন তো মহাখুশি। প্রতি উপহারে তিনিও বাদশা হারুনের জন্য পাঠালেন ইউক্লিডের গণিতশাস্ত্র ও হিপক্লিটাসের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর কিছু বই। সে সময়ের বইগুলো হতো সোনালি ও রঙিন হস্তলিপিতে লিখিত। ম্যানুস্ক্রিপ্টগুলো হতো শিল্পকর্মের মতো। একই সঙ্গে সেগুলো রাজকীয় মর্যাদা বহন করত।
কিছুদিন আগে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরকালে দেখা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। সে সময় তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দুটি বই ও একটি কলম উপহার দেন। দুটি বইয়ের মধ্যে একটি হলো পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের ‘নো ওয়ান ইস টু স্মল টু মেক অ্যা ডিফারেন্স’, দ্বিতীয় বইটি ছিল মোনা আরশি ও কারেন ম্যাকার্থি উলফ সম্পাদিত একটি কবিতার বই নাম- ‘নেচার মেটারস’। ‘নো ওয়ান ইস টু স্মল টু মেক অ্যা ডিফারেন্স’ বইটির বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়- ‘কেউই এত ছোট নয় সে পার্থক্য তৈরি করতে পারবে না।’ দারুণ শিরোনামের এই বইটি অসামান্য একটি বই। বইটির লেখক গ্রেটা থুনবার্গ একজন জলবায়ুকর্মী। বইটির প্রথম প্রকাশ ২০১৯ সালের ৩০ মে। বইটিতে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু সংকট সম্পর্কে তাঁর লেখা এবং উপস্থাপন করা ১১টি বক্তৃতার একটি সংকলনগ্রন্থ। গ্রেটা থুনবার্গ জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নানা অসংগতি বিষয়ের বক্তৃতাগুলো তাঁর বইটিতে উপস্থাপন করেছেন। বইটিতে প্রকাশিত তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত বক্তৃতার মধ্যে একটি হচ্ছে- ‘আমাদের ঘর আগুনে জ¦লছে’। ২০১৯ সালের নভেম্বরে এ বইটির জন্য ওয়াটারস্টোন থুনবার্গকে বর্ষসেরা লেখক হিসেবে মনোনীত করেন। দ্বিতীয় বইটি আরও বেশি কৌতূহলোদ্দীপক, কারণ ‘নেচার ম্যাটারস’ বইটি একটি কবিতা সংকলন। ২০২৫ সালে প্রকাশিত কবিতার এ সংকলনটি পশ্চিমা বিশ্বের বাইরের কবিদের কণ্ঠে প্রকৃতি ও পরিবেশের বহুমাত্রিক ও সমকালীন ধারণাগুলোকে তুলে ধরেছে। নেচার ম্যাটারস নামক এই কবিতার সংকলনটি সম্পর্কে বিস্তারিত বলার আগে বলা প্রয়োজন তারেক রহমান কেন হঠাৎ প্রফেসর ইউনূসকে কবিতার এই বইটি উপহার দিতে প্রাণিত হলেন। সে বিষয়ে আলোচনার আগে বই আদান-প্রদানের এই সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন। অনেকে মনে করেন তিনিই আসলে এই প্রথাটির জনক। সত্যিকার অর্থে এই প্রথাটি চালু করেছিলেন তাঁর পূর্ববর্তী খলিফা, আল মানসুর। খলিফা আল মানুসর বইকে শুধু জ্ঞানচর্চার মাধ্যম হিসেবেই গ্রহণ করেননি তিনি তা কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আচার ও নীতি হিসেবেও ব্যবহার করেছিলেন। তিনিও খলিফা হারুন-অর-রশিদের মতো বাইজান্টাইন সম্রাটদের সঙ্গে উপহার হিসেবে বই আদান-প্রদান করতেন। তিনি অসংখ্য গ্রিক, ভারতীয় ও ফারসি গ্রন্থ সংগ্রহ করেছিলেন এবং সেগুলোর আরবি অনুবাদ করিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে তাঁর আমলেই অনুবাদ সাহিত্য আরব সাহিত্য আন্দোলনের শুভ সূচনা করেছিল। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, খলিফা হারুন-অর-রশিদের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র খলিফা আল-মামুন (৮১৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর পূর্বসূরিদের এই প্রথাটিকে আরও বেগবান করেন। তিনি বাগদাদে ‘হাউস অব ওইজডম’ অর্থাৎ জ্ঞানগৃহ নামে বৃহৎ এক গ্রন্থাগার স্থাপন করেছিলেন। আল মামুন বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের বিভিন্ন শহর যেমন- ইস্তানবুল, আঙ্কারা ও আর্মেনিয়া প্রভৃতি অঞ্চল থেকে বহু গ্রন্থ সংগ্রহ করে এনেছিলেন এবং অসামান্য যত্নের সঙ্গে সেগুলো অনুবাদের ব্যবস্থা করেন।
পরবর্তীকালে বাইজান্টাইন সম্রাটরা আরব খলিফাদের বই আদান-প্রদানেই সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করেন। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায় বাইজান্টাইন সম্রাট ষষ্ঠ কনস্টান্টিন ফরাসি সম্রাট শার্লেমেইনকে (৭৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৮১৪ খ্রিস্টাব্দ) নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ উপহার পাঠাতেন। বইগুলোর মধ্যে ছিল গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষায় লিখিত বাইবেলের বিলাসবহুল সংস্করণ। গ্রিক দার্শনিক যেমন অ্যারিস্টটল ও প্লেটোর সংকলন। চিকিৎসাবিদ্যা জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতের মহামূল্যবান বহু গ্রন্থ। রাজা শার্লেমেইন ‘চার্লস দ্য গ্রেট’ নামেও পরিচিত ছিলেন। পশ্চিম ইউরোপের একজন অন্যতম প্রভাবশালী শাসক ছিলেন তিনি। তাঁর রাজত্বকালকে মধ্যযুগীয় ইউরোপের পুনর্জাগরণের সূচনা হয়েছিল বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেন।
এবার একজন দার্শনিকের গল্প বলি। একবার এক দার্শনিক তাঁর যোগ্য এক শিষ্যকে একটি বই উপহার দিয়েছিলেন। আর সেই বইয়ের অনুপ্রেরণায় তিনি জয় করে নিয়েছিলেন প্রায় সমগ্র বিশ্ব। ইতিহাসবিদ প্লুটার্কের বর্ণনা অনুযায়ী দার্শনিক অ্যারিস্টটল মহামতি আলেকজান্ডারকে একটি বিশেষ কাঠের বাক্সে সংরক্ষিত হোমারের বিখ্যাত গ্রন্থ ইলিয়াডের একটি সংস্করণ উপহার দেন। আলেকজান্ডার সেটা ভীষণ পছন্দ করেন। অ্যারিস্টটল আলেকজান্ডারের হৃদয়ে বইয়ের প্রতি ভালোবাসার যে বীজ বপন করেন সেই বীজ অঙ্কুরিত হয়ে একদিন মহিরুহ বৃক্ষে পরিণত হয়। আর সেজন্যই আমরা দেখি যুদ্ধ চলাকালীনও আলেকজান্ডার তাঁর দূত হরম্পালুসকে পাঠিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ সংগ্রহ করেন। যেমন ফিলিস্টাসের ইতিহাস। ইউরিপিডিস, সফোক্লিস ও স্কাইলাসের ট্র্যাজিক গ্রন্থ এবং টেলেস্টুস ও ফিলোক্সেনাসের বিভিন্ন গ্রন্থ।
ছোট একটা গল্প বলে পুরোনো দিনের কথা শেষ করব। একবার নেপোলিয়ন সমুদ্রপথে ইতালি থেকে মিসরে যাচ্ছিলেন। একদিন হঠাৎ আকাশ ভেঙে ঝড় উঠল। সৈন্যসমেত জাহাজটি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। সৈন্যদের মধ্যে দুই-একজন দৌড়ে নেপোলিয়নের কামরায় গিয়ে দেখলেন নেপোলিয়ন নিশ্চিন্ত মনে বই পড়ছেন। একজন সৈন্য বললেন, মান্যবর সমুদ্রে ঝড় উঠেছে অথচ আপনি শুয়ে শুয়ে বই পড়ছেন। আমাদের জাহাজ তো ডুবে যাচ্ছে। জলদি বলুন এখন কী উপায়? নির্বিকার নেপোলিয়ন বই থেকে চোখ না সরিয়ে বললেন- বইয়ের মধ্যে আমিও সে উপায় খুঁজছি। তারপর বইটি এক পাশে সরিয়ে শান্ত কণ্ঠে বললেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর মানুষের কি কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে? ঝড় শেষ হলে প্রকৃতি শান্ত হবে তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। এর বিরুদ্ধে আমাদের কিছুই করার নেই। এতক্ষণে সৈন্যটি বুঝতে পারলেন আসলে নেপোলিয়ন ঠিকই বলেছেন। ২০০৯ সালে বারাক ওবামার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের সঙ্গে। গর্ডন ব্রাউন প্রথমে ওবামাকে উপহার দেন উইনস্টন চার্চিলের সাত খণ্ডের জীবনী। সেই সঙ্গে ওক কাঠ দিয়ে তৈরি একটি কলমদানি। বারাক ওবামা গর্ডন ব্রাউনকে উপহার দেন মার্কিন লুথার কিং-সম্পর্কিত বেশ কিছু ক্ল্যাসিক বই ও ক্ল্যাসিক আমেরিকান চলচ্চিত্রের ওপর ২৫টি ডিভিডি সেট।
নরেন্দ্র মোদির উপহারের ধরন বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। নরেন্দ্র মোদির উপহার দেওয়ার তালিকা দেখে স্পষ্টই অনুধাবন করা যায় যে কাঠের সিন্দুকের প্রতি মোদির রয়েছে একধরনের প্রগাঢ় ভালোবাসা। নরেন্দ্র মোদি ২০১৭ সালের জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে উপহার দেন বহু মূল্যবান জিনিস। সেগুলোর মধ্যে জম্বু-কাশ্মীর ও হিমাচল প্রদেশে হাতে বোনা শাল। এক জোড়া স্বর্ণের কাফলিং, সূক্ষ্ম কারুকাজসমৃদ্ধ রুপার বালা। সেই সঙ্গে পাঞ্জাবে জন্মায় একধরনের বিশেষ কাঠনির্মিত একটি সিন্দুক। ২০১৫ সালে মোদি যখন বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করেন তখন মোদি বেশ কিছু উপহারসামগ্রী দিয়েছিলেন ওবামাকে। যেমন ব্রোঞ্জের তৈরি গান্ধীর একটি মস্তক। পশমিনা শাল ইত্যাদি। সেই সঙ্গে হস্তনির্মিত কারুকাজ করা একটি কাঠের সিন্দুক। ভারতের আরেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং রাজনীতি শুরুর আগে কানাডার বিশ্বখ্যাত ম্যাকগ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ছিলেন। ২০০৯ সালের রাষ্ট্রীয় সফরে মনমোহন সিং ও তাঁর স্ত্রী গুরুশরণ কৌর বারাক ওবামা ও মিশেল ওবামাকে বেশ কিছু বই উপহার দেন। এগুলো ছিল ভারতীয় সাহিত্য ও ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী। বইগুলোর মধ্যে ছিল পঞ্চতন্ত্রের নৈতিকতার গল্প, গান্ধীর আদর্শ ও ইতিহাস, ভারতের সাহিত্য ও ইতিহাস পুরোনো থেকে আধুনিক, ভারতের প্রাচীন কাহিনি, স্বাধীনতাসংগ্রামের স্মৃতি, সমকালীন ভারতীয় ছোটগল্প সংগ্রহ। এ ধরনের মোট ২০টি বই। নিশ্চয়ই এবার বুঝতে পারছেন দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? এবার তারেক রহমান প্রসঙ্গে আসি। আমি বলব, উনি সচেতনভাবেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বই দুটি উপহার দিয়েছেন। এই বই দুটি উপহার দেওয়ার মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করা যায় তারেক রহমানের বর্তমান সময়ের নানা সংকট বই আদানপ্রদানের সংস্কৃতি সম্পর্কে তিনি কতটা সচেতন। নেচার মেটার্স নামক কবিতার বইটিতে স্থান পেয়েছে ৮০টির মতো কবিতা। দীর্ঘ সময় ধরে প্রকৃতিবিষয়ক সাহিত্য প্রথাগতভাবে পশ্চিমা চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আসছে কিন্তু এই বইটি সেই প্রথা ভেঙে দিয়েছে। কবিতার এই বইটিতে আফ্রিকা, এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান ডায়াস্পেয়ারার কবিদের কণ্ঠে জলবায়ু ও পরিবেশসংকট বিষয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে। বই দুটি কেন পড়বেন? পরিবেশগত ও সামাজিক সংকটের মোকাবিলায় এই বই দুটি আলাদা ও বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসবে। বিশেষ করে কবিতার বইটিতে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল ও ইতিহাসের ছোঁয়া ও এক একটি কবিতা এক একটি নতুন সুরের অনুরণন দেয়। এটি শুধু প্রকৃতি কিংবা রবিনসন ক্রুসোর মতো সাহিত্য নয়, এটি প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্ন করে এবং নতুন পথের দিকনির্দেশনা দেয়।
তারেক রহমান কবিতা পছন্দ করেন এটা শুনে কেউ যদি আশ্চর্যান্বিত হন তাহলে তাদের উদ্দেশে বলছি। ২০২৩ সালের ২ ও ৩ মে পরপর দুই দিন মিলে প্রায় পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ওনার সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ ঘটেছিল আমার। লন্ডনে আমি উঠেছিলাম আমার বন্ধু ব্যারিস্টার নওফেল জমিরের বাসায়। আমার এই বন্ধুটিও দুর্দান্ত একটি বই লিখেছেন, নাম ‘আধুনিকতার ইতিহাস’ বইটি আপনারা পড়ে দেখতে পারেন। সে যাই হোক ২ মে আমার বন্ধুর মা (সাবেক রাষ্ট্রপতি ও স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের স্ত্রী) মৃত্যুবরণ করেন। সে কারণে তারেক রহমান আমার বন্ধুর প্রতি সহমর্মিতা জানাতে এসেছিলেন ওর বাসায়। মাগরিবের আজানের আগে এসে রাত ১১টা অবধি ছিলেন ওখানে। তো সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে বহু বিষয়ে আলাপচারিতা হয় আমার। বাদ যায়নি শিল্প ও সাহিত্য বিষয়েও। কথা প্রসঙ্গে জানলাম ডিটেকটিভ উপন্যাস বেশ পছন্দ ওনার। বিশেষ করে অগাথা ক্রিস্টির উপন্যাস। কথা হলো ‘মার্ডার ইন ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’ উপন্যাসটি নিয়েও। ওখানে উপস্থিত আমি আর উনি ছাড়া আর কেউ উপন্যাসটি পড়েননি জেনে উনি ভীষণ আশ্চর্যান্বিত হলেন। কাউকে কাউকে মৃদু ভর্ৎসনা পর্যন্ত করলেন। পরদিন অর্থাৎ ২ মে বিকালে আবার যখন সাক্ষাৎ হলো, ওনাকে নিয়ে আমার লেখা ‘জননন্দিত জননায়ক’ বইটি তুলে দিলাম ওনার হাতে। সঙ্গে যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইনের লেখা একটি কবিতার বই। কবিতার বইটি হাতে নিয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, কবিতার বই! তাঁর মুখাবয়ব আনন্দে ঝলমল করে উঠল।
লেখক : গল্পকার ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
ইমেইল : [email protected]