সিলেট নগরীর রায়নগরে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। এ কবরস্থানে শুয়ে আছেন তার বাবা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী। তাদের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মুহিত। আজ রবিবার বিকাল পৌনে ৩ টায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রীর জানাজার নামাজ সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার দুপুর ২টা ১৮ মিনিটে অনুষ্ঠিত জানাজার নামাজে ইমামতি করেন আল্লামা মুহিবুল হক গাছবাড়ি। জানাজার পরে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা।
জানাজার আগে মুহিতের ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দীন, সাবেক হুইপ আব্দুস শহীদ এমপি, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট-২ আসনের এমপি মোকাব্বির খাঁন, সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট-৫ আসনের এমপি হাফিজ মজুমদার, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দীন সিরাজ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযুদ্ধো মাসুক উদ্দীন আহমেদ, সাধরণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমেদ প্রমুখ। বক্তারা মুহিতের স্মৃতিচারণ করেন।
এর আগে রবিবার দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল আর চোখের জলে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে শেষ বিদায় জানান সর্বস্তরের সিলেটবাসী। মরদেহ দুপুর ১২টার দিকে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়ার পর সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুহিতকে শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকে শহীদ মিনারে আসতে শুরু করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর আগে সেখানে কালো কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় শ্রদ্ধা নিবেদন মঞ্চ।
প্রথমে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) একটি চৌকস দল ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করে। পরে প্রয়াতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর সাবেক অর্থমন্ত্রীর মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদসহ আরও অনেকে।
শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান, পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সাবেক অর্থমন্ত্রীর ৩টির জানাজার মধ্যে প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর গুলশান আজাদ মসজিদে। শনিবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের অংশগ্রহণে জানাজা সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয় জানাজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শনিবার দুপুর ২টায়। এর পরপরই সেখান থেকে মরদেহবাহী গাড়ি সিলেটের পথে রওয়ানা হয়।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে মুহিতের মরদেহ সিলেট এসে পৌঁছে। সড়কপথে সিলেটে আসে মরদেহ। পরে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর হাফিজ কমপ্লেক্সে। তবে মরদেহ আসার আগে থেকেই সেখানে দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়ো হন। সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশের তৈরি হয়। সে পরিবেশ বিরাজ করে রাতভর। রাতে হাফিজ কমপ্লেক্সেই রাখা হয় মরদেহ।
উল্লেখ্য, আবুল মাল আবদুল মুহিত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ