২৮ মার্চ, ২০২০ ১৬:২৪

করোনা সচেতনতায় ‘প্ল্যাকার্ড’ নিয়ে গ্রামে গ্রামে চবি ছাত্র

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

করোনা সচেতনতায় ‘প্ল্যাকার্ড’ নিয়ে গ্রামে গ্রামে চবি ছাত্র

আবদুল ওয়াহেদ

মহামারী করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বিশ্ববাসী। সরকার থেকে শুরু করে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে এসেছেন। অনেকেই কাজ করছেন মানবিক উদ্যোগ নিয়েও। সেই ধারাবাহিকতায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েই কাজ করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্র আবদুল ওয়াহেদ। তার বাড়ি চট্টগ্রামের বাশখালীতে। 

এই শিক্ষার্থী হাতে লেখা ‘প্ল্যাকার্ড’ নিয়েই সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন। প্রচারণায় বাহন হিসেবে ব্যবহার করছেন সাইকেল। এই সাইকেলের সামনে ও পেছনে বেঁধেছেন প্ল্যাকার্ড। যেখানে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে সচেতনতার কথা লিখা আছে। গ্রামের প্রধান সড়ক বেয়ে অলি-গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। কথা হয় চবি ছাত্র আবদুল ওয়াহেদের সাথে। এসময় এমন উদ্যোগের বিষয়ে বললেন বিস্তারিত।

শিক্ষার্থী আবদুল ওয়াহেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৩ মার্চ থেকে শুরু করেছি জনসচেতনতামূলক এই উদ্যোগ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। এসময় বিশ্বের এতো বড় রোগ থেকে বাঁচতে দরকার জনসচেতনতা। ফলে ২৩ মার্চ প্রথমদিন শুরু করেছি চট্টগ্রামের বাশঁখালীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা। সকালে নামায পড়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরেছি। ২৪-২৫ মার্চ বাই সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে হাতে লেখা জনসচেতনতামূলক প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রচারণা চালাই। এটি চলছে ধারাবাহিকভাবেই। 

ওয়াহেদ এই প্রতিবেদককে আরও বলেন, চবিতে পড়াশোনা করলেও উঠে এসেছি গ্রাম থেকেই। আমি সচেতন, আমার আশপাশ সচেতন না, তাহলে সচেতনতার গুরুত্ব কোথায়? কৃষক, শ্রমিকের টাকায় পড়াশোনা করি, সেই দায়বদ্ধতা থেকে এলাকার মানুষদের সচেতনতায় নেমেছি। মানুষ আমাকে দেখে অবাক হয়, অনেকে হাসে, তারপরও তারা পড়ছে। হয়ত বাসায় গিয়ে ভাববে আর সচেতন হবে। আমি চাই, মানুষ সচেতন হোক, করোনাকে মোকাবেলা করুক। কথা বলে জানলাম, অনেকেই এই রোগের বিস্তার সম্পর্কেই জানেন না। এতে কাজ করছেন সরকারের দায়িত্বশীল লোকজনও।

জানা যায়, করোনা আতঙ্কের মধ্যে সচেতন উদ্যোগ। এসময় সাধারণ মানুষ বিস্ময় চোখে দেখছেন আর সচেতন হচ্ছেন, অনেকে আবার আঁড় চোখেও দেখছেন। সে কোনো ফেরিওয়ালা নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। নাম তার আবদুল ওয়াহেদ। নিজ জন্মভূমির মানুষের সচেতন করতে এমন অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। 

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের এমন উদ্যোগে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন বেশ। ইচ্ছে তার পুরো বাঁশখালীর অলি-গলিজুড়ে মানুষকে সচেতনতায় উৎসাহিত করা। করোনায় বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়। একই সাথে ছুটি হয়েছে শহুরে টিউশনগুলোও। বাড়িতে গিয়ে দেখলেন মানুষের মাঝে নেই কোনো সচেতনতা। মানুষ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া নিয়ে নেই কোনো মাথাব্যাথা। করোনায় জন্মভূমি বাঁশখালীতে নেমে আসতে ভয়ানক পরিস্থিতি। নাড়া দেয় তার বিবেককে। তাই প্রথম কয়েকদিন শখের সাইকেলটা নিয়ে হাতে প্ল্যাকার্ড সচেতনতার কথা লিখে নেমে পড়েন। প্রথম কয়েকদিন মানুষ ভালোভাবে নিলেও এলাকার গুটি কয়েক মানুষ উপহাস করেছেন। তারপরও থামেননি। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটছেন এই বালক। যেখানে মানুষ পেয়েছেন বুঝিয়েছেন করোনা থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তাই টিউশনের টাকা দিয়ে সাবান কিনে এলাকায় কয়েকটি জায়গায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। 

ওই শিক্ষার্থী তার প্ল্যাকার্ডে লিখেছেন, সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধৌত করুন, মাস্ক ব্যবহার করুন, জনসমাগম এড়িয়ে চলুন, কাঁশি দেওয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করুন, বিনা প্রয়োজনে বাইরে যাবেন না, হাত মেলানো ও কুলাকুলি করবেন না, প্লিজ সতর্ক হোন, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াবেন না।

অন্যদিকে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও নেতারা এবং সামাজিক সংগঠনগুলোও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এবং সাধারণ মানুষ সচেতন হতে নানাবিধ কর্মসূচি পালন করেছেন। রয়েছে পুলিশ প্রশাসনও।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর