চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানাধীন বালুছড়া এলাকায় ফোর এইচ গ্রুপের গার্মেন্টস কারখানার নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে অন্তত ১২ শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঘটনার পর একে ঘিরে দায়িত্বশীলরা চরম গোপনীয়তা রক্ষা করছেন। ফলে এক বা একাধিক মৃত্যুর খবরে বিস্তার করেছে গুজবের ডালপালা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি কোনো তদন্ত কমিটিও গঠন করেনি।
আজ সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ওসি বলেছেন, ৭ থেকে ৮ জন আহত হয়েছে। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী এসআই শাহ আলম সুমন ৬ জন আহতের কথা জানান। যদিও স্থানীয়রা জানান, অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। আর ও ফোর এইচ গার্মেন্টসের পক্ষ থেকে প্রথমে দুইজন আহতের কথা জানানো হয়। পরে গার্মেন্টসটির ম্যানেজার ইয়ার মোহাম্মদ ১২ জন আহতের কথা স্বীকার করেন।
এ প্রসঙ্গে ওসি প্রিটন সরকার বলেন, ছোটখাটোভাবে ১২ জন আহত হতে পারেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী এসআই জানান, আহতদের মধ্যে ৪ জনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে বরগুনা জেলার মঠবাড়িয়া থানার বাবুরহাট এলাকার আবুল কালাম ও মো. সুমনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য দুই জনেরই নাম জাহাঙ্গীর আলম। তাদের কারখানার অভ্যন্তরে ‘ফার্স্ট এইড বক্স’র ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। আহতরা সবাই নির্মাণ শ্রমিক।
আহত অন্যদের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাতে না পারলেও এ ঘটনায় ‘ফোর এইচ গ্রুপ নিজস্ব কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কি না’ তাও জানেন না বলে জানান ওসি ও ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী এসআই। ঘটনাটি নিয়ে এক বা একাধিক মৃত্যুর খবরকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দেন তারা।
পুলিশ জানায়, আহত দুজনকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে হাসপাতালে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে বায়েজিদ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে শিল্প গ্রুপটির কর্তৃপক্ষ ও জনসংযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নওশাদ চৌধুরী মিঠুকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও পাওয়া যায়নি।
বালুছড়া ফোর এইচ গার্মেন্টসের ম্যানেজার ইয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘ছাদ ধসের ঘটনায় ১২ জন আহত হন। এর মধ্যে ছয়জন সামান্য আহত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোরা গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। অন্য চারজনকে কারখানার ভেতরের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়।’ তবে মৃত্যুর বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি করা দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সরেজমিন দেখা যায়, ছাদ ধসের এলাকাটি টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ভবনটির ভিম থেকে পুরো ছাদটি মাটিতে ধসে পড়ে। ছিটকে পড়ে ঢালাই।
ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাস জানান, দুর্ঘটনার পর বায়েজিদ স্টেশন থেকে দুইটি ইউনিট পাঠানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, সেন্টারিং দুর্বলতার কারণে ছাদটি ধসে পড়েছে। তবে বিস্তারিত তদন্তের পর ঘটনার কারণ জানা যাবে।
ওসি প্রিটন সরকার বলেন, দুপুরে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলাকালে হঠাৎ তা ধসে পড়ে। রড সিমেন্ট ও কংক্রিটের নিচে চাপা পড়েন শ্রমিকরা। পরে তাদের উদ্ধার করা হয়। ৭ থেকে ৮ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনায় কারও গাফিলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ