বিভিন্ন আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নানা ভাবেই প্রতারণা করে আসছে রোহিঙ্গারা। ভোটার আইডি কার্ড, কাউন্সিলর-ইউপি চেয়ারম্যানের দেয়া জাতীয় সনদসহ নানা পরিচয়পত্র তৈরি করে বাংলাদেশের নাগরিকও হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। এমন ঘটনায় প্রশাসনের হাতে একাধিক রোহিঙ্গা ধরাও পড়েছে। ঠিক তেমনি ভাবেই এসবের নেপথ্যে জড়িয়ে যাচ্ছেন কাউন্সিলর ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ একাধিক দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। এমন ঘটনার সত্যতাও পেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও।
রোহিঙ্গা জেনেও জন্ম সনদ দিয়েছেন দিতেন চট্টগ্রামের সাবেক একজন কাউন্সিলর। মোটা অংকের ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে দেওয়া হয়েছে জন্ম নিবন্ধন সনদ ও জাতীয় নাগরিক সনদ। এসব সনদ নিতে দেখানো হয়েছে ভুয়া পরিচয়পত্র। আর এ সনদ দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদনও করে তিন রোহিঙ্গা। এমন কিছু ঘটনার তদন্তের পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক একজন কাউন্সিলর, জন্ম নিবন্ধন সহকারীসহ অভিযুক্ত ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অভিযুক্ত ৬ জনের মধ্যে ইসমাইল, মেহের জান ও অহিদা তিনজনই রোহিঙ্গা। তারা এদেশের নাগরিক না হওয়ার সত্ত্বেও দালাল সিরাজুল ইসলামের মাধ্যমে পাথরঘাটা ওয়ার্ড অফিস থেকে নাম ঠিকানা গোপন করে টাকার বিনিময়ে নেওয়া হয়েছে জন্ম নিবন্ধন সনদ ও নাগরিক সনদ। এসব সনদ নিয়ে তারা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। তবে অভিযুক্তরা সবাই পলাতক রয়েছে বলে জানান তিনি।
দুদকের মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন বালি, সাবেক পাথরঘাটা ওয়াডের্রর জন্ম নিবন্ধন সনদ সহকারী সুবর্ণ দত্ত, চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার চাক্তাই সোবহান সওদাগর রোডের মৃত হাজী আবুল হোসেনের পুত্র মো. সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ২৬৮ আশরাফ আলী রোডের মৃত মুছা আলীর পুত্র মোহাম্মদ ইসমাইল, একই থানার ২৬৮ আশরাফ আলী রোডের মোহাম্মদ ইসমাইলের স্ত্রী মেহের জান এবং চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার চাক্তাই সোবহান সওদাগর রোডের মোহাম্মদ ইসমাইলের মেয়ে অহিদা।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি ভুয়া জাতীয়তা সনদপত্র দেখিয়ে ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে টাকা লেদেনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদ ও নাগরিক সনদ সত্যায়িত করে পাসপোর্ট আবেদন করেন অভিযুক্ত মোহাম্মদ ইসমাইল। ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বরে পাসপোর্টের আবেদনকারী রোহিঙ্গা নাগরিক অহিদার পিতা মোহাম্মদ ইসমাইল ও মাতা মেহের জান প্রকৃত পিতা-মাতা নয়। তারা সবাই মায়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিক। ক্ষমতা অপব্যবহার করে ভুয়া পরিচয়, নাম ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় সনদপত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ বানিয়ে পাসপোর্ট আবেদন করা ও পাসপোর্ট আবেদন ফরমের উপরে সত্যায়িত করার দায়ে দন্ডবিধি ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইন ৫ (২) ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার