লকডাউন আর বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীতে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। যেমনি গাড়ি চলাচল নেই, ঠিক তেমনি নগরীর নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় আটকে পড়েছে বৃষ্টির কারণে। ঠিক মতো অফিসে পৌঁছানো নিয়ে বিক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে গার্মেন্ট শ্রমিকরা। করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাদেশের লকডাউন ঘোষণার ফলে চট্টগ্রামেও সড়কে নেই গণপরিবহন। বাড়ি ফেরা মানুষেরও পড়তে হয়েছে নানা দুর্ভোগে।
চট্টগ্রাম নগরীর ও জেলা-উপজেলার মধ্যে গণপরিবহণ চলাচলে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও রাস্তার প্রতিটি স্থানে দেখা যাচ্ছে সরকারি পরিবহনের পাশাপাশি রিক্সা, পাঠাও মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে অবাধেই। তবে প্রায় ঘণ্টা খানেক সড়ক অবরোধের পর পুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। তাছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউনে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনীও।
শ্রমিকদের দাবি গণপরিবহন বন্ধ রেখে গার্মেন্টস ও অফিস কেন খোলা রাখা হবে? দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘন্টা। সময়মতো কাজে যোগ দিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন পোশাক শ্রমিকরা।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মোড়ে মোড়ে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্দরা। এছাড়া নগরীর টাইগারপাস মোড়ে সড়ক অবরোধ করে এ বিক্ষোভ জমায়েত করেন তারা।
শ্রমিকদের অভিযোগ, করোনার কারণে সারাদেশে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব গণপরিবহন। কিন্তু খোলা রাখা হয়েছে পোশাক কারখানা। প্রতিদিন কাজে যাওয়ার সময় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের। যাতায়াতের ব্যবস্থা না করে কারখানা খোলা রাখা হয়েছে। রিকশায় দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়। তাও ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। এই দুর্ভোগ আর সহ্য হচ্ছে না। প্রতিদিনই এমন চিত্র।
মামুন নামের এক শ্রমিক বলেন, এখানে সরকারি ও ব্যক্তিগত গাড়ি ঠিকই চলছে। এক দেশে দুই আইন কেন? গরীবের জন্য একরকম আর বড় লোকের জন্য আর এক আইন কেন। সে কারণে গাড়ি না পেয়ে দুর্ভোগের কারণে প্রতিবাদে টাইগারপাস সড়ক অবরোধ করা হয়। এসময় সরকারি একটি বাহিনীর গাড়িও আটকে দেয় বিক্ষুব্ধরা। পরে ঘণ্টা খানেক সড়ক অবরোধ করে ‘বন্ধ’ ‘বন্ধ’’ স্লোগান দিতে থাকে তারা।
দায়িত্বরত কোতোয়ালী থানার একজন এসআই বলেন, গণপরিবহন না থাকায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পরে তাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয় পুলিশ। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের পাশাপাশি জরুরী যানবাহন ছাড়া অন্য গাড়ি চলাচলে সর্তক প্রশাসন। এর জন্য নগরী ও জেলার উপজেলাগুলোতে প্রশাসনের পৃথক টীমও কাজ করছেন। কঠোর লকডাউনে আইনে বাইরে গিয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তবে সরকারের এবারের ঘোষিত লকডাউন সফল করতে সকলের সহযোগিতা কামনার পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরিতে মাইকিং করাও হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নগরীতে হাঁটুপানি সড়কে:
বুধবার সকাল থেকেই দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে হাঁটুপানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলে। নালা ও খালে বাঁধ থাকায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরের বিভিন্ন এলাকা। সড়ক-নালা পানিতে একাকার হয়ে যাওয়ায় রিকশা উল্টে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। বৃষ্টিতে নগরীর বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেইট, মুহাম্মদপুর, মুরাদপুর, ষোলশহর, কাপাসগোলা, চাক্তাই, বাকলিয়া, ডিসি রোড, রহমতগঞ্জ, হালিশহর, চান্দগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। ডিসি রোডে হাঁটু সমান পানি ওঠে।
অফিসগামী মহিউদ্দিন বলেন, বহদ্দারহাট এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। আমার অফিস জিইসি এলাকায়। বহদ্দারহাট থেকে সেখানে যেতে মুহাম্মদপুর, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট এলাকার ময়লা পানি মাড়িয়ে অফিসে যেতে হয়। রিকশা পাওয়া যায় না, পেলেও ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুণ।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ‘মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে। এই সময়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে আগামী তিনদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার