চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠেছে পচনশীল মসলা পণ্যের বাজার। আসন্ন কোরবানির ঈদ, চলমান লকডাউন ও বর্ষা মৌসুমের কারণে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকায় পিয়াজ, রসুন ও আদার দাম বেড়েছে। কোরবানির ঈদের আগে পর্যাপ্ত সরবরাহ না হলে দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠোর লকডাউন ঘোষণার আগেই পিয়াজ, রসুন ও আদার দাম স্বাভাবিক ছিল। কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পচনশীল পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে খুচরা বাজারেও দাম বৃদ্ধি করেছে। পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি পিয়াজের দাম ৭ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোমবার পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি পিয়াজের দাম ছিল ক্যাটাগড়ি অনুযায়ী ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা। একই পিয়াজ খুচরা বাজারে ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এর আগে ছিল প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ভারত থেকে পিয়াজ আনার ক্ষেত্রে আমদানিপত্র আইপি (ইম্পোর্ট পারমিট) বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে একশ টাকা থেকে ১২০ টাকায়, যা খুচড়া বাজারে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রয় হচ্ছে। রসুন মান ভেদে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হচ্ছে। যা খুচড়া বাজারে আরো ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি। আরো জানা যায়, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পিয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পিয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পিয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি ৪ লাখ টন।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পিয়াজ দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ভারত থেকে পিয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। নতুন করে পিয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) খুলতে দেওয়া হচ্ছে না। ভারত থেকে পিয়াজ আমদানির যে অনুমতি ছিল, তার মেয়াদ গত ২৯ এপ্রিল শেষ হয়ে গেছে। এরপর আর নতুন করে পিয়াজ আমদানির অনুমতি পাওয়া যায়নি। অনেক আমদানিকারক আমদানির অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত অনুমতি পাননি। ভারতীয় পিয়াজ যতক্ষণ আমদানি হচ্ছে না, ততক্ষণ দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান তারা।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে পিয়াজ আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। পিয়াজসহ বিভিন্ন পচনশীল পণ্যে অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মিয়ানমার থেকে সীমিত আকারে পিয়াজ আমদানি করছেন কিছু কিছু আমদানিকারক। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পিয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৪০ টাকার বেশি দামে। এক সপ্তাহ আগেও এ পিয়াজ ছিল কেজি প্রতি ৩০ টাকার কম। তবে কঠোর লকডাউন হলেও সরকার এসব বিষয়ে কঠোর ও নজরদারিতে রয়েছে। এতে দ্রুত যেকোনো সিদ্ধান্ত আনতে পারে বলে জানান তিনি।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, পিয়াজের দাম নির্ভর করে সরবরাহ চেইনের ওপর। করোনার কারণে ভারত থেকে পিয়াজ আমদানি বন্ধ। দেশি পিয়াজ দিয়ে সারা দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বাজারে পণ্যের মজুদে ঘাটতি নেই। কঠোর লকডাউনের কারণে ক্রেতারা বাজারে আসতে পারছেন না। লকডাউনের পর থেকে পাইকারি ব্যবসা-বাণিজ্যে এক প্রকার ধস নেমেছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস-প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ঈদ বা অন্য কোনো মৌসুম আসার আগেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন। ভোক্তাদের একসঙ্গে অধিক পণ্য না কিনে কম করে নিত্য পণ্য ক্রয় করার পরামর্শ দেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই