চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ২০১০ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর শুরুর সময় নগরকে ভিক্ষুকমুক্ত করার অংশ হিসেবে ৪৬ জন ভিক্ষুককে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসাবে নিয়োগ দেয়। নিয়োগপ্রাপ্তরা কাজও করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত জানুয়ারি মাসে মৌখিকভাবে জানানো হল, তাদের আর চাকরি নেই। এ নিয়ে চসিকের সাবেক প্রশাসক এবং নির্বাচিত মেয়রের কাছে ভিক্ষুকরা আবেদন করেও কোনো ফল মিলেনি।
আজ বুধবার সকালে নগরের আন্দরকিল্লায় পুরাতন নগর ভবনে চসিকের সাধারণ সভা চলাকালে চট্টগ্রাম প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন সংস্থার আয়োজনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চাকরি পাওয়া ৪০ জন ভিক্ষুক।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রতিনিধিত্বকারী কামাল হোসেন বলেন, আমাদের যেসব কাজ কর্পোরেশন থেকে দেওয়া হতো সাধ্যমতো সব কাজ করেছি। কিন্তু হঠাৎ গত জানুয়ারি মাস থেকে আমাদের কোনও কাজ দেয়নি চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ। জানুয়ারি মাসে আমাদের ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন থেকে বেতনও বন্ধ। এখন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমরা আবারও কাজে ফিরতে চাই।
মানববন্ধনে ভিক্ষুকরা বলেন, আমাদের ওপর অন্যায় ও অবিচার করা হয়েছে। এটা তদন্ত করা দরকার। সবার দুয়ারে দুয়ারে গিয়েছি। কেউ আমাদের গুরুত্ব দিচ্ছে দিচ্ছে না। ক্ষমতা নেই বলে আমাদের নিয়ে কেউ ভাবছেও না। সরকারের কাছে আমাদের একটাই আকুল আবেদন, আমাদের অন্যায় হলে শাস্তি দিন। কিন্তু বিনা অপরাধে আমাদের কিছু না বলে ১০ বছর ধরে করে আসা চাকরিটা বাতিল করে দিল। ভিক্ষা করা ছেড়ে দিয়েছি। এখন আবার ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হবে।
চসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর শুরুর আগে নগরীকে ভিক্ষুক মুক্ত করার অংশ হিসেবে ২৫০ জন ভিক্ষুককে ৪ হাজার ৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় চসিক। এছাড়া ৪৬ জন ভিক্ষুককে নিয়োগ দেওয়া হয় নগরীর মোড়গুলো ভিক্ষুকমুক্ত রাখতে। প্রথমে তাদের চসিকের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে ৬ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হত।
নয় বছরে চার দফায় বেতন বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৭০০ টাকা। ৪৬ জনের মধ্যে দুইজন সুস্থ সবল সুপারভাইজার ছিলেন, চারজন মারা যান। অবশিষ্টরা পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করতেন। কিন্তু কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ার অভিযোগে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অফিস আদেশ জারি করে চসিক।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর