গাজীপুরের শ্রীপুরে চুল লম্বা থাকায় শ্রেণিকক্ষে এক ছাত্রকে শিক্ষক বেদম মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারধরের পর ওই শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়লেও রেহাই পায়নি। অজ্ঞান অবস্থায় সহপাঠীদের সামনে তাকে লাথি মেরেছেন ওই শিক্ষক। সোমবার সকালে শ্রীপুর পৌর এলাকার বেড়াইদেরচালা আবদুল আউয়াল একাডেমিতে ওই ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থীকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।
শিক্ষকের নিমর্মতার শিকার ছাত্রের নাম হাবিবুর রহমান (৮)। সে ওই এলাকার ডিমের আড়তদার খলিলুর রহমানের ছেলে। হাবিবুর রহমান ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।
হাবিবুর রহমানের বাবা খলিলুর রহমািন জানান, সোমবার সকালে হাবিবুর স্কুলে গেলে গণিতের পাঠদানকালে শিক্ষক নাঈম ফোরকান মাথায় চুল লম্বা থাকায় তাকে (হাবিবুর) বেদম মারধর করেন।
সহপাঠীরা জানায়, পাঠদানকালে নাঈম ফোরকান হঠাৎ হাবিবুর রহমানের কাছে এগিয়ে যান। ‘মাথায় চুল লম্বা কেন’ জানতে চেয়েই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি মাথার চুল টেনে ধরে পিঠে সজোরে উপর্যুপরি ঘুষি মারেন। চিৎকার করে হাবিবুর স্কুল কক্ষের ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লে টেনে তুলে দুই গালে চড়-থাপ্পড় দেন। এক পর্যায়ে হাবিবুর অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে 'ভান ধরেছে' বলে লাথি মারেন ওই শিক্ষক। ওই সময় শিক্ষকের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে আতঙ্কে অনেকেই কেঁদে ফেলে। পরে টের পেয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ছুটে গিয়ে হাবিবুরকে উদ্ধার করে অজ্ঞান অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেন। স্বজনরা তাৎক্ষণিক তাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, নাঈম ফোরকান ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম আহমেদের শ্যালক। প্রায় দুই বছর আগে মোমবাতির আগুনে স্টিলের টুকরো গরম করে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের গালে ছ্যাকা দিয়েছিলেন তিনি। বছর খানেক আগেও দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে বেদম মারধর করেছিলেন।
নির্যাতিত ছাত্রের বাবা খলিলুর রহমান অভিযোগ করেন, তাঁর শিশু ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তির পর প্রধান শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী গিয়ে তাঁদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন। ঘটনা কারো কাছে জানালে তাঁর শিশু ছেলেরই বেশি ক্ষতি হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক নাঈম ফোরকান পলাতক থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
আবদুল আউয়াল একাডেমির প্রধান শিক্ষক সেলিম আহমেদ বলেন, ঘটনার জন্য নাঈম অনেক অনুতপ্ত হয়েছেন। এরপরও তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক সেলিনা আক্তার জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর শিশু ছাত্রের জ্ঞান ফিরেছে। মনে হয় আতঙ্কে সে জ্ঞান হারিয়েছিল। তার গায়ে জখমের চিহ্ন আছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। নির্যাতিত ছাত্রের স্বজনরা অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া হবে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পায়নি। আমি আপনার (সাংবাদিকের) কাছেই শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। ঘটনা প্রমাণীত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ মার্চ ২০১৬/ এস আহমেদ